Published : 30 Apr 2025, 02:39 PM
স্লিপ তিনটি, সিলি মিড অফেও একজন। ফিল্ডার রাখা হলো শর্ট কাভার ও শর্ট মিড উইকেটেও। বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদকে ঘিরে জাল বিছিয়ে নিল জিম্বাবুয়ে। তবে লাভ কিছু হলো না। বোলার ভিনসেন্ট মাসেকেসা বল রাখলেন স্টাম্পের বাইরে। নিরাপদেই ছেড়ে দিলেন হাসান। নিশ্চিতভাবেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি যে তখন ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে!
১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হাসান ওভারটি কাটিয়ে দিলেন নির্বিঘ্নে। মিরাজের সেই স্বস্তি একটু পরই রূপ নিল উচ্ছ্বাসে। সিঙ্গল নিয়ে তিনি পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কের ঠিকানায়। কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি!
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে মিরাজ দেখা পান টেস্টে তার দ্বিতীয় শতরানের। প্রথম সেশনেও দারুণ এক মাইলফলকে নাম লেখা হয়ে যায় তার। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পূর্ণ করেন ২ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ‘ডাবল।’
১৯০ উইকেট ও ১ হাজার ৯৫২ রান নিয়ে সিরিজটি শুরু করেছিলেন মিরাজ। সিলেট টেস্টে বল হাতে ১০ উইকেট নিয়ে তিনি ছুঁয়ে ফেলেন ১০ উইকেট। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন পুরোপুরি (১ ও ১১)।
এই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ১৬ রানে। তৃতীয় দিন সকালে জীবন পান ১৭ রানে। এরপর অবশ্য তার ব্যাটের দাপটে সুবিধা করতে পারেননি জিম্বাবুয়ের বোলাররা। ৩৬ রান হতেই ২ হাজার টেস্ট রান পূর্ণ হয় তার।
২ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের যুগলবন্দিতে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার কে, তার নামটি না বললেও সবার বুঝে যাওয়ার কথা। ৪ হাজার ৬০৯ রান আর ২৪৬ উইকেট নিয়ে থমকে আছে সাকিব আল হাসানের টেস্ট ক্যারিয়ার।
এই ‘ডাবল’ পূর্ণ করতে সাকিবের লেগেছিল ৫৪ টেস্ট। মিরাজ এখানে পৌঁছে গেলেন ৫৩তম টেস্টে।
টেস্ট ইতিহাসের ২৬তম ক্রিকেটার হিসেবে এই ‘ডাবল’ ধরা দিল মিরাজের। সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে (৪২টি) এটি করতে পেরেছেন ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম।
মিরাজ থামেননি সেখানেই। দারুণ খেলে বাড়িয়ে নিতে থাকেন তিনি বাংলাদেশের লিড। অষ্টম উইকেটে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে গড়েন তিনি ৬৩ রানের জুটি। ফিফটি পূর্ণ করেন ৭০ বলে।
তাইজুল ২০ রানে ফিরে গেলেও সঙ্গ দেওয়ার দায়িত্বটি দারুণভাবে পালন করে যান অভিষিক্ত তানজিম হাসান। মিরাজ এগিয়ে যান সাবলীল ব্যাটিংয়ে। ওই জীবন পাওয়ার পর ভুল শট খুব একটা আর খেলেননি তিনি। বরং দারুণ কিছু ড্রাইভ ও কাট খেলেছেন। স্টাম্পের বাইরে জায়গা পেলেই প্রিয় কাট বা গ্লাইড শটে আদায় করেছেন বাউন্ডারি।
উইকেটে বোলারদের জন্য সহায়তা খুব একটা ছিল না। পেসারদের জন্য ছিল না তেমন বাউন্স। তার পরও শর্ট বলে মিরাজের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন জিম্বাবুয়ের পেসাররা। মিরাজ তা সামলেছেন ভালোভাবেই। কখনও বল ছেড়ে দিয়েছেন অনায়াসে, কখনও পুল আর হুক করেছেন দাপটে।
শতরানের কাছাকাছি গিয়ে অবশ্য কিছুটা শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। রিভার্স সুইপ খেলে তানজিম আউট হন ৪১ রানে। জুটি থামে ৯৬ রানে। তবে মিরাজ তখন অপরাজিত ৯৮ রানে, বাকি তখন কেবল এক উইকেট।
হাসানের ব্যাটের হাত অবশ্য মন্দ নয়। আগের টেস্টেই লড়িয়ে ইনিংস তিনি খেলেছেন। তবে শেষ উইকেট কো পড়ে যেতে পারে স্রেফ এক বলেই।
হাসান গিয়ে অবশ্য প্রথম বল ঠেকিয়ে দেন সহজেই। তবে পরের ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গল নিয়ে বসেন মিরাজ। দুই রান নেওয়ার একটু চেষ্টা অবশ্য তিনি করেছিলেন, কিন্তু তাতে রান আউট হওয়ার শঙ্কাকেও পড়ে গিয়েছিলেন। তখন বেঁচে গেলেও তখন নতুন দুর্ভাবনা। ওভারের বাকি পাঁচ বল হাসান টিকবেন তো!
লেগ স্পিনার মাসেকেসার চ্যালেঞ্জ সামলে ঘিরে থাকা ফিল্ডারদের এড়িয়ে হাসান কাটিয়ে দেন ওই পাঁচ বল। ওয়েসলি মাধেভেরের করা পরের ওভারের তৃতীয় বলে সিঙ্গল নিয়ে মিরাজ পূর্ণ করেন শতরান। ১৪৩ বল খেলে আসে তার সেঞ্চুরি।
তার আগের সেঞ্চুরিটি ছিল ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই মাঠেই আট নম্বরে নেমে। এবারের সেঞ্চুরি সাতে নেমে। গত অক্টোবরে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ খেলেও আউট হয়ে গিয়েছিলেন ৯৭ রানে।
সেঞ্চুরি করে রেকর্ডের আরও একটি পাতায় নাম লেখা হয় তার। একই সিরিজে ম্যাচে ১০ উইকেট ও শতরান করা সপ্তম ক্রিকেটার তিনি। ইয়ান বোথাম এই কীর্তি গড়েছেন তিন দফায়, দুই দফায় ইমরান খান ও ওয়াসিম আকরাম, একবার করে মিরাজ ছাড়া টনি গ্রেগ, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি ও সাকিব আল হাসান।
সেঞ্চুরির পর অবশ্য আর দ্রুত রান তোলা বা টিকে থাকা, কোনোটিই মিরাজ করতে পারেননি। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০৪ রান করে আউট হন ১৬২ বলে।
তার আউট দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৪৪৪ রানে। লিড ২১৭ রানের।
মিরাজকে স্টাম্পড করে মাসেকেসা দেখা পান পঞ্চম শিকারের। টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেট শিকারি জিম্বাবুয়ের তৃতীয় বোলার তিনি।
২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষেই বুলাওয়ায়োতে ৭৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার অ্যান্ডি ব্লিগনট। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারারেতে ১৫৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন অফ স্পিনার জন নিয়ুম্বু। এবার মাসেকেসা ৫ উইকেট নিলেন ১১৫ রানে।