টেস্টকে ‘ওয়ানডে’ বানিয়ে ইংল্যান্ডের রেকর্ড

তিন বা এর বেশি ম্যাচের সিরিজে এত দ্রুত রান তুলতে পারেনি টেস্ট ইতিহাসের আর কোনো দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2022, 03:03 PM
Updated : 20 Dec 2022, 03:03 PM

একসময় টেস্ট ক্রিকেটে ওভারপ্রতি তিন রান তুলতে পারাও ছিল দারুণ কিছু। এই শতাব্দীর শুরুর দিকে স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার সৌজন্যে রানের ওই গতি হয়ে ওঠে নিয়মিত ঘটনা। এখন তো ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর বেন স্টোকসের ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটকে এনে দিয়েছে অবিশ্বাস্য নতুন গতি। সেই পথে ছুটে এবার তারা রান তুলেছে এমন গতিতে, টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে যা দ্রুততম!

পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজে ইংলিশদের রানের গতির এই রেকর্ডসহ ওলট-পালট হয়েছে পরিসংখ্যানের আরও কয়েকটি পাতা।

ইংলিশ আগ্রাসন

পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজে ইংল্যান্ড রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৫.৫০ করে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে তিন বা এর বেশি ম্যাচের সিরিজে ওভারপ্রতি ৫ রান তোলার নজিরও আর নেই।

আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ২০১৫-১৬ মৌসুমে দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে স্টিভ স্মিথের দলের ওভারপ্রতি রান ছিল ৪.৬৬।

পাকিস্তানের তেতো স্বাদ -১

 

তিন ম্যাচ সিরিজের কোনেটিতেই পরাজয় এড়াতে পারেনি পাকিস্তান। দেশের মাঠে টেস্ট খেলছে তারা সেই ১৯৫৫ সাল থেকে। কিন্তু নিজেদের আঙিনায় সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হলো এই প্রথম।

সফরকারী কোনো দল স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করার নবম নজির এটি। ইংল্যান্ড এটি করে দেখাল চারবার, অস্ট্রেলিয়া করতে পেরেছে তিনবার। একবার করে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

পাকিস্তানের তোতো স্বাদ -২

এই সিরিজে তিন টেস্ট হারার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও শেষ টেস্টে হেরেছিল পাকিস্তান। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার তারা দেশের মাঠে হারল টানা চার টেস্ট।

স্পিন-রাজ

করাচি টেস্টে পাকিস্তানের ২০ উইকেটের ১৬টিই নিয়েছে ইংল্যান্ডের স্পিনাররা। পাকিস্তানে সফরকারী দলগুলির জন্য এটি যৌথভাবে সর্বোচ্চ।

রেকর্ডটি আগে থেকেই আছে ইংল্যান্ডেরই। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় ১৬ উইকেট নিয়েছিল টেড ডেক্সটারের ইংল্যান্ড। তখন ঢাকা ছিল পাকিস্তানের অংশ।

নেতা স্টোকসের স্মরণীয় শুরু

বছরের মাঝামাঝি দায়িত্ব নিয়ে ১০ টেস্টের ৯টিতেই দলকে জয়ে নেতৃত্ব দিলেন বেন স্টোকস। ইংলিশ অধিনায়কদের মধ্যে এক পঞ্জিকাবর্ষে তার চেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব আছে কেবল মাইকেল ভনের। ২০০৪ সালে তার নেতৃত্বে ১২ টেস্টের ১০টিতে জিতেছিল ইংল্যান্ড।

ভন ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে বছরে ১০ টেস্ট জয়ের কীর্তি আছে বিশ্ব ক্রিকেটে যৌথভাবে স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংয়ের। ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়া ১১ টেস্টের ১০টি জেতে ওয়াহর নেতৃত্বে, ২০০৬ সালে অধিনায়ক পন্টিং জেতেন ১০ টেস্টের সবকটি।

এক পঞ্জিকাবর্ষে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড যৌথভাবে ক্লাইভ লয়েড ও গ্রায়েম স্মিথের। ১৯৮৪ সালে লয়েডের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ১৪ টেস্টের ১১টি, ২০০৮ সালে স্মিথের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ছিল ১৫ টেস্টের ১১টিতে।

দুর্গে ফাটল

করাচির জাতীয় স্টেডিয়াম একসময় ছিল পাকিস্তানের দুর্গ। যুগের পর যুগ ধরে এখানে কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। এই মাঠে প্রথম টেস্ট হওয়ার ৪৫ বছর পরে তাদেরকে প্রথম হারের স্বাদ দেয় ইংল্যান্ডই। ২০০০ সালে এখানে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারায় নাসের হুসেইনের ইংল্যান্ড।

পরে ২০০৭ সালে এখানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা, এবার আবার ইংল্যান্ড।

একটা জায়গায় অবশ্য এই মাঠে পাকিস্তানের রেকর্ড ইতিহাসের সেরা। ৪৫ টেস্টের স্রেফ ৩টিতেই হেরেছে হারা, হারের হার ৬.৬৭ শতাংশ। ২০টির বেশি টেস্ট হয়েছে, এমন ভেন্যুগুলোর মধ্যে এই হারের হারই কোনো দলের সর্বনিম্ন।

ব্রুকের ‘ব্রেক থ্রু’ সিরিজ

মাত্র এক টেস্টের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে পাকিস্তানে এসেছিলেন হ্যারি ব্রুক। ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান ফিরছেন শেষ টেস্টে ম্যান অব দা ম্যাচ ও সব মিলিয়ে ম্যান অব দা সিরিজ হিসেবে। তিন টেস্টের প্রতিটিতেই সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন তিনি ৪৬৮, পাকিস্তানে যা কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ।

বিদেশের মাঠে তিন বা এর বেশি ম্যাচের সিরিজের প্রতিটিতেই সেঞ্চুরি করা মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। প্রথম কীর্তিটিও হয় এবছরই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেন নিউ জিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল।