বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে উন্নতির জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করার তাগিদ অনুভব করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
Published : 13 Dec 2024, 08:35 AM
চার ব্যাটসম্যান খেললেন ষাটোর্ধ্ব ইনিংস, দুটি জুটিতে এলো শতরান। এর যোগফল হিসেবে বাংলাদেশ পেল বড় পুঁজি। কিন্তু পরেরভাগে আর কিছুই পক্ষে রইল না। রেকর্ডগড়া জয়ে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দীর্ঘ দিন পর এই তিক্ত স্বাদ পেয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের উপলব্ধি, এখন তারা উন্নতির জায়গাগুলো ধরতে পারছেন।
তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৪ উইকেটে জিতেছে ক্যারিবিয়ানরা। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সফল রান তাড়ার রেকর্ড এটি।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা ১১ ম্যাচের জয়খরা দূর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয়টিতে জিতে ছয় বছর তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে পায় সিরিজ জয়ের স্বাদ। আর শেষ ম্যাচের ফলও নিজেদের পক্ষে নিয়ে ১০ বছর পর বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারে তারা।
আগের দুই ম্যাচের তুলনায় শেষটিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে উন্নতির ছাপ ছিল স্পষ্ট। সেন্ট কিটসের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ফিফটির দেখা পান সৌম্য সরকার, মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলি। প্রত্যেকেই রান করেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
ওপেনিংয়ে নেমে ৭৩ বলে ৭৩ রান করেন সৌম্য। মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৭৩ বলে ৭৭ রান। সিরিজে তৃতীয় ফিফটিতে মাত্র ৬৩ বলে ৮৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। জাকের খেলেন ৫৭ বলে ৬২ রানের ইনিংস।
শুরুতে দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১২৭ বলে ১৩৬ রান যোগ করেন সৌম্য ও মিরাজ। পরে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ১১৭ বলে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৫০ রানের জুটি গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের।
ম্যাচের প্রথমভাগের সাফল্য বোলিংয়ে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট নিলেও ধারাবাহিকতা দেখাতে ব্যর্থ হন বোলাররা। আলগা বোলিংয়ের সুযোগে স্বাগতিকদের জেতান আমির জাঙ্গু, কেসি কার্টি, গুডাকেশ মোটিরা।
পঞ্চম উইকেটে অভিষিক্ত জাঙ্গুকে নিয়ে ১১৫ বলে ১৩২ রান যোগ করেন কার্টি। ৯৫ রানে কার্টির বিদায়ের পর দলকে এগিয়ে নেন জাঙ্গু। অভিষেকে সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সপ্তম উইকেটে মোটির সঙ্গে গড়েন ৫৩ বলে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে বড় পুঁজি নিয়েও হারের পেছনে পারায় মাঝের ওভারে উইকেট নিতে না পারাকে দায় দেন মিরাজ।
“আমাদের বোলারদের জন্য খুব কঠিন দিন ছিল। ব্যাটসম্যানরা ভালো করেছে। আমরা ভালো জুটি পেয়েছি। সৌম্য, জাকের ও মাহমুদউল্লাহ- সবাই ভালো করেছে। বোলিংয়ে আরও ভালো করার সুযোগ ছিল। মাঝের ওভারে উইকেট নিতে পারিনি। এটি আমাদের জন্য সমস্যার ছিল।”
আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে এটিই ছিল বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে সিরিজ। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে তারা।
সব মিলিয়ে সবশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে হারের পর উন্নতির জায়গাগুলো স্পষ্ট হওয়ার কথা বললেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
“এই সিরিজের পরই আমাদের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আমরা জানি, আমাদের কোথায় উন্নতি প্রয়োজন। আশা করি, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা বুঝতে পারব কীভাবে সেসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে।”
হোয়াইটওয়াশড হওয়া সিরিজে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বলা যায় অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর পারফরম্যান্স। তিন ম্যাচেই পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন ৩৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। সব মিলিয়ে ১৯৬ গড়ে সিরিজের সর্বোচ্চ ১৯৬ রান তারই।
তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ১১টি ছক্কা। গড় ও ছক্কা- দুটিই এক দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। মাহমুদউল্লাহর এমন ব্যাটিংয়ে খুশি মিরাজ। একইসঙ্গে তরুণদের দায়িত্ব নিতে পারার আক্ষেপও আছে তার।
“(মাহমুদউল্লাহ) খুব ভালো করেছেন। সিরিজে তিনটি ফিফটি করেছেন, যা দলের জন্য খুব ভালো ব্যাপার। তার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখি। এই সিরিজে তরুণদের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটি করতে পারিনি।”