সাদমান-শাহাদাত-ইরফানের ব্যাটে বাংলাদেশের লড়াই

সিলেটে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হারের শঙ্কায় লড়াই করে ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছে বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 01:30 PM
Updated : 25 May 2023, 01:30 PM

থিতু হয়েও উইকেট ছুড়ে আসার পুরনো রোগ এই ইনিংসেও দেখা গেল। তবে উন্নতির ছাপ আর লড়াইয়ের তাড়নাও কিছুটা ফুটে উঠল ব্যাটিংয়ে। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম এক প্রান্তে আগলে রাখলেন অনেকক্ষণ। মিডল অর্ডারে শাহাদাত হোসেন ও পরে ইরফানের শুক্কুরের ব্যাটে দেখা গেল স্ট্রোকের দ্যুতি। হারের চোখরাঙানি থেকে ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনার পথে এগোতে পারল বাংলাদেশ।

সিলেটে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ‘এ’ দল এগিয়ে ১৬৬ রানে। উইকেট আছে ৪টি।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই নম্বর মাঠে বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৩৪৫ রানে। লিড পায় তারা ১০৮ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলামের লড়িয়ে ইনিংসের পরও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের রান এক পর্যায়ে ছিল ৫ উইকেটে ১৮০। সেখান থেকে শাহাদাত হোসেন ও ইরফান শুক্কুর উদ্ধার করেন দলকে।

১৩ টেস্ট খেলা ওপেনার সাদমান ৩ ঘণ্টা উইকেটে থেকে ১২৭ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন ১০ চারে। প্রথম ইনিংসে ৭৩ রানের ইনিংসের পর শাহাদাত এবার করেন ৭ চারে ৬৮ বলে ৫০।

দলের আশা হয়ে এখনও টিকে আছেন ইরফান। ১১ চারে ৮৫ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

দিনের শুরুতে বাংলাদেশকে হতাশ করে ক্যারিবিয়ানদের রান বাড়ান জশুয়া দা সিলভা ও কেভিন সিনক্লেয়ার। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান নতুন দিনেও প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দেন নিরাপদে।

১২ টেস্ট খেলা পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও ৮ টেস্ট খেলা অফ স্পিনার নাঈম হাসান দলকে হতাশ করেন এ দিনও। তানভির ইসলাম আঁটসাঁট বোলিং করলেও উইকেট এনে দিতে পারছিলেন না।

জশুয়া ও সিনক্লেয়ারের জুটিতে ৫০ রান আসে ৭৮ বলে। দ্বিতীয় নতুন বলেও সুবিধা করতে পারছিল না বাংলাদেশ। অবশেষে পানি পানের বিরতির একটু পর জুটি ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব। তার দারুণ এক ডেলিভারিতে লাইন মিস করে বোল্ড হন ৩২ রান করা সিনক্লেয়ার।

এই উইকেটই খুলে দেয় বাকি উইকেটগুলোর দুয়ার। ক্যারিবিয়ানদের লোয়ার অর্ডাররা একের পর এক আত্মঘাতী শট খেলতে থাকেন। অনেক বাইরের বল তাড়া করে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন আকিম জর্ডান। স্লগ করতে গিয়ে উইকেট হারান অ্যান্ডারসন ফিলিপ ও জেইর ম্যাকঅ্যালিস্টার।

এক প্রান্ত থেকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে এসব দেখেন জশুয়া। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক অপরাজিত থেকে যান ১৭৫ মিনিটে ৪৭ রান করে। শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা ১৬ রানের মধ্যে। চারটি উইকেটই নেন তানজিম।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত থাকলেও তা পূরণ হয়নি। আবারও হতাশ করেন জাকির হাসান (১৩)। অনেকটা প্রথম ইনিংসের মতোই আলগা শটে তিনি বিদায় নেন রেমন রিফারের বলে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের ওপেনার এই সিরিজের চার ইনিংস খেলে করতে পারলেন মোট ৬১ রান।

সাইফ হাসান তিনে নেমে দ্রুত তিনটি বাউন্ডারির পর আকিম জর্ডানের পেসে ক্যাচ দেন তৃতীয় স্লিপে।

সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে অর্ধশত রানের জুটি গড়ে তোলেন সাদমান ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ৩৬ বলে ২৮ রান করে নাঈমের বিদায়ে ভাঙে ৫৬ রানের জুটি। চা-বিরতির একটু আগে অফ স্পিনার সিনক্লেয়ারের নির্বিষ ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন নাঈম।

সাদমান নিজের মতো খেলে সাবধানী ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূরণ করেন ৯৮ বলে। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে শাহাদাত উইকেটে যাওয়ার পরপরই টানা দুটি চার মারেন কার্ক ম্যাকেঞ্জিকে। পরে দুটি চার মারেন সিনক্লেয়ারের ওভারেও।

সাদমানের লড়াই শেষ হলে থেমে যায় ৬৮ রানের এই জুটি। প্রথম ইনিংসে জর্ডানের রাউন্ড দা উইকেটে করা ডেলিভারি ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এবারও রাউন্ড দা উইকেটেই তাকে শিকার করেন জর্ডান। এবার অবশ্য খেলার চেষ্টা করে এলবিডব্লিউ হন সাদমান।

একটু পর যখন সিনক্লেয়ারের বলে আফিফ হোসেনের কাট শটে যখন স্লিপে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নিলেন আলিক আথানেজ, দল তখন ভীষণ বিপদে। ত্রাতা হয়ে এলেন তখন ইরফান।

শুরুতে পরিস্থিতি সামাল দিলেন তিনি শাহাদাতকে নিয়ে। জুটি অবশ্য বেশি লম্বা হলো না। ফিফটির পরপর শাহাদাত এলবিডব্লিউ সিনক্লেয়ারকে ভুল লাইনে খেলে। এরপর নাঈম হাসানকে নিয়ে চলল ইরফানের লড়াই।

দিনের শেষ পর্যন্ত আর বিপদ হতে দেননি দুজন। ইরফান আলগা বলকে কাজে লাগিয়ে রান তোলেন। নাঈম আগলে রাখেন উইকেটে। ৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫০ রানই আসে ইরফানের ব্যাট থেকে।

শেষ দিনেও এই দুজনের ব্যাটে তাকিয়ে থাকবে দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ২৩৭

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ৯৬.১ ওভারে ৩৪৫ (আগের দিন ২৬৮/৬) (জশুয়া ৪৭*, সিনক্লেয়ার ৩২, জর্ডান ২, ফিলিপ ৪, ম্যাকঅ্যালিস্টার ০; খালেদ ১৭-১-৫৯-১, তানজিম ১৯.১-২-৫৯-৪, নাঈম ২১-০-৯৪-১, সাইফ ৭-০-৩৭-২, তানভির ২৯-৭-৭৫-১, আফিফ ৩-০-৯-০)।

বাংলাদেশ ‘এ’ ২য় ইনিংস: ৬৬ ওভারে ২৭৪/৬ (সাদমান ৭৪, জাকির ১৩, সাইফ ১৬, নাঈম ২৮, শাহাদাত ৫০, আফিফ ৪, ইরফান ৬৪*, নাঈম ১৪*; জর্ডান ১৪-২-৩৮-২, রিফার ৯-১-৪৮-১, ফিলিপ ৮-০-৪৯-০, ম্যাকঅ্যালিস্টার ৭-০-৩০-০, সিনক্লেয়ার ২৩-৬-৭৬-৩, ম্যাকেঞ্জি ২-০-১৫-০, আথানেজ ৩-০-১১-০)।