দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান সিরিজ
রান তাড়ায় ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করেও পাকিস্তানকে জেতাতে পারলেন না মোহাম্মদ রিজওয়ান।
Published : 11 Dec 2024, 02:19 AM
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝে খুনে ব্যাটিংয়ে দলকে টানলেন ডেভিড মিলার। সঙ্গে জর্জ লিন্ডার শেষের ঝড়ে লড়াইয়ের পুঁজি পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার লিন্ডা পরে আলো ছড়ালেন বল হাতেও। মোহাম্মদ রিজওয়ানের লড়াই থামিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল প্রোটিয়ারা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১১ রানে।
ডারবানে মঙ্গলবার পাওয়ার প্লেতে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারানোর পরও ২০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ১৮৩ রান। মিলার ও লিন্ডা ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেননি তাদের আর কেউ।
৮টি ছক্কা ও ৪টি চারে ৪০ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন মিলার। ২৪ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৮ রান করেন লিন্ডা।
রান তাড়ায় ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ ওভার পর্যন্ত পাকিস্তানকে লড়াইয়ে রাখেন অধিনায়ক রিজওয়ান। শেষ ওভারে তার বিদায়ের পর ১৭২ রানে থামে সফরকারীরা।
মন্থর ব্যাটিংয়ে শুরু করা রিজওয়ানের রান ছিল একটা পর্যায়ে ৪৪ বলে ৩৬, পরে গতি বাড়িয়ে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ বলে ৭৪ রান করেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
৬ উইকেট হাতে রেখে পাকিস্তানের দরকার যখন ১৮ বলে ৩৬ রান, অষ্টাদশ ওভারে স্রেফ ৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন লিন্ডা। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২১ রানে তার শিকার ৪ উইকেট। তিন বছরের বেশি সময় পর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলতে নেমে দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান তিনিই।
২০২১ সালের এপ্রিলের পর প্রথমবার এই সংস্করণে পাকিস্তানকে হারাতে পারল দক্ষিণ আফ্রিকা। মাঝে তিন ম্যাচের সবকটি জিতেছিল পাকিস্তান।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টেস্ট শেষের পরদিনই শুরু হলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ। টেস্ট সিরিজের কেউ অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে নেই।
কিংসমিডে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম চার ওভারের মধ্যে ২৮ রানে ওপরের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রিজা হেনড্রিকস, রাসি ফন ডার ডাসেন ও ম্যাথু ব্রিটস্কির কেউ দুই অঙ্কে যেতে পারেননি।
চতুর্থ উইকেটে মিলার ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হাইনরিখ ক্লসেন মিলে গড়েন ৪৩ রানের জুটি। ক্লসেন বিদায় নেন একটি ছক্কায় ১২ রান করে। টিকতে পারেননি ডোনোভান ফেরেইরা।
অনেকটা একাই দলকে টানেন মিলার। দশম ওভারে লেগ স্পিনার আবরার আহমেদকে টানা তিন ছক্কার পথে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ২৮ বলে।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে আক্রমণে ফিরে তার ঝড় থামান শাহিন শাহ আফ্রিদি।
দ্রুত আরও দুই উইকেট হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮৩ পর্যন্ত যেতে পারে লিন্ডার সৌজন্যে। শেষ ওভারে স্পিনার সুফিয়ান মুকিমকে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। নবম উইকেটে কিউনা মাফাকার সঙ্গে ২৪ বলে ৪২ রানের জুটিতে লিন্ডার অবদান ২৯।
পাকিস্তানের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি ও আবরার।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে বাবর আজমকে হারায় পাকিস্তান। শূন্য রানে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক।
তিনে নামা সাইম আইয়ুবকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন রিজওয়ান। ১৫ বলে ৭ চারে ৩১ রান করে বিদায় নেন সাইম। চারে নেমে টিকতে পারেননি উসমান খান।
তাইয়াব তাহির ফেরেন ১৮ বলে ১৮ রান করে। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন রিজওয়ান।
শেষ পাঁচ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৭৩ রান, শেষ ৪ ওভারে যা দাঁড়ায় ৬০।
নাটকীয় সপ্তদশ ওভারে মাফাকা দেন মোট ২৪ রান। এই ওভারে আফ্রিদিকে একবার এবং রিজওয়ানকে এক বলেই রান আউটের দুটি সুযোগ হারায় প্রোটিয়ারা।
পরের ওভারে লিন্ডার দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিকরা। শাহিন আফ্রিদি ফেরেন স্টাম্পড হয়ে। ইরফান খান ক্যাচ দেওয়ার পরের বলে এলবিডব্লিউ হন আব্বাস আফ্রিদি। শেষ বলে হারিস রউফকে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার, হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতেন লিন্ডা। তবে রউফ রিভিউ নেওয়ার পর দেখা যায়, বল স্টাম্প মিস করে যেত! বেঁচে যান ব্যাটসম্যান।
১৯তম ওভারে তিনটি চারে ১২ রান নিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখেন রিজওয়ান। শেষ ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজনে দ্বিতীয় বলে তাকে ফিরিয়ে জয়ের পথে মূল বাধা দূর করেন মাফাকা।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৮৩/৯ (হেনড্রিকস ৮, ফন ডাসেন ০, ব্রিটস্কি ৮, মিলার ৮২, ক্লসেন ১২, ফেরেইরা ৭, লিন্ডা ৪৮, সিমেলানে ১, পিটার ৩, মাফাকা ১২*; শাহিন আফ্রিদি ৪-০-২২-৩, আবরার ৪-০-৩৭-৩, রউফ ৪-০-৪১-৩, আব্বাস আফ্রিদি ৪-০-৩০-২, মুকিম ৪-০-৫৩-১)
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭২/৮ (রিজওয়ান ৭৪, বাবর ০, সাইম ৩১, উসমান ৯, তাহির ১৮, শাহিন আফ্রিদি ৯, ইরফান ১, আব্বাস আফ্রিদি ০, রউফ ২*, মুকিম ৫*; মাফাকা ৪-০-৩৯-২, বার্টম্যান ৪-০-২৬-১, সিমেলানে ৪-০-৪৪-১, পিটার ৪-০-২৯-০, লিন্ডা ৪-০-২১-৪)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা
ম্যান অব দা ম্যাচ: জর্জ লিন্ডা