মুম্বাইয়ের বিপক্ষে শেষ ওভারে ‘তরুণ উইকেটকিপার’ ধোনির তিন ছক্কাই ম্যাচে মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ।
Published : 15 Apr 2024, 11:33 AM
প্রায় চারশ রানের ম্যাচ, যেখানে সেঞ্চুরি করেছেন একজন, ঝড়ো ফিফটি আছে দুজনের, দারুণ বোলিং করে চার উইকেট নিয়েছেন এক বোলার, অথচ সেখানে কী না মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন স্রেফ চার বল খেলা একজন ব্যাটসম্যান! হ্যাঁ, রুতুরাজ গায়কোয়াড় মনে করেন এমনটিই। চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক বললেন, তার দলের তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যানের ছোট ক্যামিও ইনিংসটিই গড়ে দিয়েছে বড় ব্যবধান। সেই তরুণের নাম মাহেন্দ্র সিং ধোনি!
না, এই নামে নতুন কেউ আসেননি। হুট করে তরুণ কারও উত্থান হয়নি। রুতুরাজ বলছেন চেনা মানুষটির কথাই। ৪২ বছর বয়সী কিংবদন্তি যিনি। কিন্তু যেভাবে খেলছেন তিনি, তরুণ বললেও আপত্তি খুব একটা করার কথা নয় কারও।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে রোববার স্রেফ চার বল খেলে ২০ রান করেন ধোনি। চেন্নাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতে ২০ রানে। ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে রুতুরাজের কথাটাও তাই অতি আবেগের প্রকাশ বলে মনে হয় না।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রোববার ধোনি মাঠে নামার সময়ই প্রবল গর্জন শোনা যায় গ্যালারি থেকে। প্রতিপক্ষের মাঠ বা প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়-এসব সীমানা তো অনেক আগেই ঘুচে গেছে তার ক্ষেত্রে। সব মাঠেই তার জনপ্রিয়তা প্রবল। এ দিনও তিনি মাঠে নামার সময় গ্যালারির ‘ধোনি’, ‘ধোনি’ স্লোগান টিভি সম্প্রচারে ফুটে উঠছিল স্পষ্টভাবেই। পরের সময়টায় সেই গর্জনের তীব্রতা কেবল বাড়তেই থাকে।
চেন্নাই ইনিংসের শেষ ওভারে ড্যারিল মিচেল আউট হওয়ার পর ক্রিজে যান ধোনি। বল বাকি তখন আর কেবল চারটি। মুম্বাই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া বল পিচ করালেন ব্যাটের সামনে। মারার মতোই ডেলিভারি। ধোনিও চালিয়ে দিলেন ব্যাট। আকাশে উঠে বল সীমানা পাড়ি দিয়ে আছড়ে পড়ল গ্যালারিতে। দর্শকের গগণবিদারি আওয়াজে তখন টেকাই দায়। কে বলবে, প্রতিপক্ষের মাঠে খেলছেন ধোনি!
ধারাভাষ্যকক্ষে ব্রায়ান লারা বললেন, “আরও তিন বল বাকি আছে… আমি বলে দিচ্ছি, এই তিন বলেই দর্শকের মাঠে ঢোকার পয়সা পুরো উসুল হয়ে যেতে পারে…।”
লারা খুব একটা ভুল ধারণা করেননি।
পরের বলটি লেংথ ডেলিভারি। এবারও চাবুকের মতো করে ব্যাট চালিয়ে দিলেন ধোনি। ধারাভাষ্যকক্ষে রবি শাস্ত্রির চিৎকার, “আরেকটি ছক্কা… কে লেখেন এমন চিত্রনাট্য!”
পান্ডিয়া ততক্ষণে খেই হারিয়ে ফেলেছেন হয়তো। পরের বলটি করে বসলেন ফুল টস। ধোনি বুঝিয়ে দিলেন উপযুক্ত প্রাপ্য। দারুণ ব্যাট স্পিডে টানা তৃতীয় ছক্কা। এবার রবি শাস্ত্রি বললেন, “আরও একটি ছক্কা…. খেলাটি তার জন্য কতই না সহজ!”
ওভারের শেষ বলটি পান্ডিয়া করলেন স্লোয়ার। এবার ধোনির টাইমিং ঠিকঠাক হলো না। দুটি রান হয়ে গেল তবু। চার বলে ২০ রানে অপরাজিত।
ক্যারিয়ারের নানা পালাবদল শেষে এখন গোধূলিবেলায় এই মৌসুমে একদম নিচের দিকেই ব্যাট করছেন ধোনি। এখানেও যথারীতি তার ব্যাট দারুণ ধারাল। মৌসুমের প্রথম দুই ম্যাচে তিনি ব্যাটিং পাননি। তৃতীয় ম্যাচে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে নেমে করেন ১৬ বলে অপরাজিত ৩৭। পরের টানা দুই ম্যাচে শেষ সময়ে নেমে ১ রানে অপরাজিত। এরপর এবারের এই টানা তিন ছক্কা।
ওপেনিংয়ে রাচিন রাভিন্দ্রার ১৬ বলে ২১ রানের ইনিংসের পর অধিনায়ক রুতুরাজ করেন ৪০ বলে ৬৯, শিভাম দুবে অপরাজিত থাকেন ৩৮ বলে ৬৬ রানে। এরপর ধোনির শেষের ঝড়ে চেন্নাই ২০ ওভারে তোলে ২০৬ রান। সেই রান তাড়ায় রোহিত শার্মার ৬৩ বলে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংসের পরও মুম্বাই যেতে পারে ১৮৬ পর্যন্ত।
এবারের আইপিএলে দারুণ ফর্মে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান এ দিন ছিলেন বিবর্ণ। চার ওভারে ৫৫ রান দিয়ে একটি উইকেটের দেখা পান তিনি। তবে দুর্দান্ত বোলিং করেন মাথিসা পাথিরানা। ‘বেবি মালিঙ্গা’ বলে পরিচিত স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের পেসার চার ওভারে ২৮ রানে নেন চার উইকেট।
আইপিএলে প্রথমবার ম্যাচে চার উইকেটের স্বাদ পেলেন এই লঙ্কান পেসার।
ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে রুতুরাজকে সঞ্চালক জিজ্ঞেস করেন, ম্যাচের কোন দিকটি সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্টি দিয়েছে তাকে। চেন্নাই অধিনায়ক বললেন ধোনির ইনিংসের কথা।
“তরুণ একজন উইকেটকিপার ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে নেমে তিনটি ছক্কা মেরেছেন… আমার মনে হয়, এটা দারুণ সহায়তা করেছে এবং আমার মনে হয়, দিনশেষে এটিই মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
ধোনির অবদান তো শুধু ব্যাট হাতে নয়, তিনি মাঠে থাকা মানেই আরও অনেক কিছুর নিশ্চয়তা। আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়ক না হলেও মাঠের নেতা তো তিনিই। মাঠ সাজানো, বোলিং পরিবর্তনে অনেক ভূমিকা তো রাখেনই, উইকেটের পেছন থেকে বোলারদের নানা নির্দেশনা দিয়েও তিনি অনেক সময় পার্থক্য গড়ে দেন ম্যাচে।
এই ম্যাচে ধোনির সেই ভূমিকারও প্রভাব দেখছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক। ২০৭ রান তাড়া করে জেতাটা সম্ভব ছিল বলেই মনে করেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু চেন্নাইয়ের বোলিংয়ের পাশাপাশি মুম্বাই অধিনায়ক কৃতিত্ব দিলেন উইকেটের পেছনে থাকা ধোনিকেও।
“রানটা (তাড়া) করার মতোই ছিল। তবে ওরা বেশ ভালো বল করেছে। পাথিরানা একরকম পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সে বোলিংয়ে এলেই দলকে উইকেট এনে দিয়েছে। নিজেদের পরিকল্পনা তারা খুব ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে এবং বেশ স্মার্ট ছিল তাদের মানসিকতায়। মাঠের দীর্ঘ বাউন্ডারিগুলোও তারা কাজে লাগিয়েছে।”
“তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে এবং উইকেটের পেছনে তাদের একজন ছিল, যে তাদেরকে বলে দিচ্ছিল, কী কী কার্যকর হচ্ছে এখানে। এটাও তাদেরকে সহায়তা করেছে।”