টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
নেপালের বিপক্ষে পুঁজি খুব বেশি না হলেও বোলারদের ছন্দে ভরসা রেখে জয়ের আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
Published : 17 Jun 2024, 12:40 PM
‘জিতে গেছি দেখে বলছি না, বিরতির সময়ই সবার বিশ্বাস ছিল’- কিছুটা জোর দিয়ে বললেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও জেতার আত্মবিশ্বাস ছিল কি না, জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, বোলারদের ছন্দে আস্থা রেখে পুরো দলের মধ্যে এই রানেও জয়ের বিশ্বাসটা ছিল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটিতে মাত্র ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদের দৃঢ়তায় শেষ দুই উইকেটের সৌজন্যে কোনোমতে একশ পার করে তারা। পরে তানজিম হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের অসাধারণ নৈপুণ্যে রেকর্ড গড়া জয় পায় বাংলাদেশ।
অল্প পুঁজি নিয়ে নতুন বলে আগুন ঝরান তানজিম। টানা ৪ ওভারের স্পেলে দুই মেইডেনসহ মাত্র ৭ রানে তিনি নেন ৪ উইকেট। এক পর্যায়ে তার টানা ১৯টি ডেলিভারিতে কোনো রান করতে পারেনি নেপালের ব্যাটসম্যানরা। শেষ দিকে তাদের আটকে রাখেন মুস্তাফিজ। ১৭ ও ১৯তম ওভার মিলিয়ে মাত্র এক রান দেন বাঁহাতি পেসার। ৪ ওভারে ৩ উইকেট নিতে তারও খরচ ৭ রান।
তানজিম, মুস্তাফিজদের এমন বোলিং পারফরম্যান্সই মূলত বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচেও ব্যাটিং ঠিক প্রত্যাশামতো হয়নি। তবে বোলাররা ঠিকই চমৎকার প্রদর্শনীতে ম্যাচ জেতার ব্যবস্থা করে দেন। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১১৩ রানে থামিয়ে রাখেন বোলাররা। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা পারেননি সেটি তাড়া করতে।
বোলারদের এই ধারাবাহিকতায় ভরসা রেখেই নেপালের বিপক্ষে ১০৬ রান করেও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন শান্ত। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট দেখে বিশ্বাসটা আরও পোক্ত হয় তাদের।
“আমাদের ইনিংসে যখন ১০-১৫ ওভার হয়ে গেছিল, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে উইকেট ‘ট্রিকি।’ তারপর যখন এই রানটা করেছি, প্রত্যেকটা ক্রিকেটার বিশ্বাস করেছিল যে, এই রান ডিফেন্ড করা সম্ভব। জিতে গেছি দেখে বলছি না, বিরতির সময় যখন আমরা কথা বলছিলাম, সবার মধ্যে ওই বিশ্বাস ছিল যে, ম্যাচটা আমরা এখান থেকে জিততে পারি।
“আমাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে বোলাররা। তানজিম টানা ৪ ওভার দারুণ বোলিং করেছে। মুস্তাফিজের ১৯তম ওভার মেইডেন উইকেট। পুরো বোলিং ইউনিট যেভাবে বোলিং করেছে, খুবই দারুণ ব্যাপার।”
বোলারদের নৈপুণ্যে জয় পেলেও ছোট রানের ম্যাচে ফিল্ডারদের ভূমিকাও যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও ভোলেননি শান্ত।
“আমি কৃতিত্ব দেব ফিল্ডারদেরও। তারা যেভাবে বেশ কয়েকটা বাউন্ডারি বাঁচিয়েছে। বিশেষ করে রিশাদ পয়েন্টে বেশ কয়েকটা ক্যাচ নিয়েছে, বাউন্ডারি থামিয়েছে। সব মিলিয়ে বোলিং ও ফিল্ডিং দারুণ ছিল এবং সবার মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে জিততে পারব।”
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম বলেই তানজিদ হাসানের উইকেট নেন সোম্পাল কামি। এরপর বাকিটা সময় ছড়ি ঘোরান নেপালের স্পিনাররা। দুই নিয়মিত স্পিনার দিপেন্দ্রা সিং ঐরি ও সান্দিপ লামিছানের পাশাপাশি অনিয়মিত অফ স্পিনার রোহিত পাউড়েলও নেন ২ উইকেট।
লামিছানে, কুশাল ভুর্তেলদের একেকটি ডেলিভারিতে দেখা যায় বড় বড় টার্ন। তবু স্পিনারের বদলে পেসার দিয়ে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। নতুন বলে টানা ৪ ওভার করেন তানজিম। অষ্টম ওভারে প্রথমবার আনা হয় স্পিন।
নেপালের স্পিনাররা ভালো করার পরও পেসার দিয়ে আক্রমণ শুরুর পেছনের উইকেটের আচরণের কথা বলেন শান্ত।
“ওদের পেসার (কামি) যখন নতুন বলে ২ ওভার বোলিং করল, তখনই সিম হচ্ছিল। তো তখন জানতাম যে উইকেটে সিম হবে। আর ওদের রিস্ট স্পিনার বেশি ছিল, দুইটা ছিল। আমাদের তো একজন ফিঙ্গার, একজন রিস্ট স্পিনার, সঙ্গে (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই।”
“আমরা যখন প্রথম ওভার দেখেছি বাইরে থেকে, তখনই ধারণা হয়েছিল যে এই উইকেটে সিম হবে। আমাদের যে পেস আক্রমণ আছে, যে কোনো উইকেটে কিন্তু আমরা নতুন বলে উইকেট নিচ্ছি গত এক-দেড় বছর ধরে। ওই বিশ্বাসটা থেকেই আমি পেসার দিয়ে শুরু করেছিলাম। যেটা ওরাও করে দেখিয়েছে।”
বোলারদের পিঠে চড়ে প্রথম রাউন্ডের বৈতরণী পার হওয়ার স্বস্তি থাকলেও ব্যাটিং নিয়ে যে চিন্তা ক্রমশই বাড়ছে সেটিও মেনে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“এটা তো আসলে সম্ভব না যে, প্রতিদিন বোলাররা জেতাবে। আমি আশা করি, প্রতিদিনই জেতাক। তবে ব্যাটসম্যানদেরও দায়িত্ব আছে। কিন্তু কেন হচ্ছে না সেটাই সবাই চেষ্টা করছে বের করার। কিন্তু কোনোভাবে হচ্ছে না। তবে এটা আসলে গ্রহণযোগ্য নয় সত্যি বলতে। এই উইকেট কত রানের ছিল... হয়তো ১৪০-১৫০ রানের উইকেট ছিল, যেটা আমরা করতে পারিনি। অবশ্যই এটা আমাদের জন্য চিন্তার একটা কারণ।”
সুপার এইটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ আগামী শুক্রবার, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।