দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান সিরিজ
মোহাম্মদ আব্বাসের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অভাবনীয় জয়ের আশা জাগিয়েও পারল না পাকিস্তান।
Published : 29 Dec 2024, 05:43 PM
মোহাম্মদ আব্বাসের অফ স্টাম্পের বাইরের বল পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারির দিকে পাঠিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন মার্কো ইয়ানসেন। ব্যাটসহ হাত ছুড়লেন বাতাসে। অন্য প্রান্তে খ্যাপাটে উদযাপনে মেতে উঠলেন কাগিসো রাবাদাও। পরে দুজন আলিঙ্গনে বাঁধলেন নিজেদের। দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিং রুমেও একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন সবাই। তাদের এমন বাঁধভাঙা উদযাপন হওয়ারই কথা। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে যে দারুণ এক জয় পেল তারা। নিশ্চিত করল প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা।
অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে কার্বিন বশ বিদায় নেন যখন, তখনও জয় থেকে ৪৯ রান দূরে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, হাতে উইকেট কেবল ২টি। সেখান থেকে নবম উইকেটে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ইয়ানসেন ও রাবাদা।
সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ২ উইকেটে। ১৪৮ রানের লক্ষ্য চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
আব্বাসের দারুণ বোলিংয়ে অভাবনীয় জয়ের আশা জাগিয়েও পারল না পাকিস্তান। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর টেস্টে ফিরে, ১৯.৩ ওভারের ম্যারাথন স্পেলে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৫৪ রানে ৬ উইকেট নেন পেসার আব্বাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার শেষের দুই নায়ক রাবাদা ও ইয়ানসেন। ৫ চারে ২৬ বলে ৩১ রান করেন রাবাদা, আর দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ৬ উইকেট নেওয়া ইয়ানসেন এবার ব্যাটিংয়ে ২৪ বলে ৩ চারে করেন ১৬ রান।
তবে দুই ইনিংসে ৮৯ ও ৩৭ রান করে ম্যাচের সেরা এইডেন মার্করাম।
সুপারস্পোর্ট পার্কে ছোট লক্ষ্য তাড়ায় আগের দিন ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে তারা।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মার্করাম ও টেম্বা বাভুমা প্রথম ঘন্টা পার করে দেন নির্বিঘ্নে। এর মাঝে বাভুমাকে একবার আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বাঁচেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
পানি পানের বিরতির পর আব্বাসের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন মার্করাম। তার ৬৩ বলে ৩৭ রানের ইনিংস গড়া ৬টি চারে।
ডেভিড বেডিংহ্যামকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনেন বাভুমা। কিন্তু ১২ বলের এক ঝড়ে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।
আব্বাসের বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন বাভুমা (৭৮ বলে ৪০)। যদিও পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ব্যাটে নয়, ব্যাটসম্যানের গায়ে লেগেছিল!
নাসিম শাহর বল স্টাম্পে টেনে আনেন কাইল ভেরেইনা। আব্বাস নিজের পরের ওভারে পরপর দুই বলে বিদায় করেন বেডিংহ্যাম ও বশকে।
৪ উইকেটে ৯৬ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৮ উইকেটে ৯৯! পরাজয়ের চোখ রাঙানি তাদের সামনে। পাকিস্তান তখন দারুণ এক জয়ের আশায়।
কিন্তু তাদের আশা মাড়িয়ে ম্যাচ বের করে নেন রাবাদা ও ইয়ানসেন। জয় থেকে ৩২ রান দূরে থেকে লাঞ্চ বিরতিতে যান তারা। ফিরে এসে সারেন বাকি কাজ।
চতুর্থ ইনিংসে একশ রানের নিচে ৮ উইকেট হারানোর পরও টেস্ট জয়ের চতুর্থ ঘটনা এটি। এবারের আগে সবশেষটিতে জয়ী দল ছিল পাকিস্তান। ১৯৯২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৯৫ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর ২ উইকেটে জিতেছিল তারা।
আগামী শুক্রবার দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে কেপ টাউনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২১১
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩০১
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ২৩৭
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৪৮) (আগের দিন ২৭/৩) ৩৯.৩ ওভারে ১৫০/৮ (মার্করাম ৩৭, বাভুমা ৪০, বেডিংহ্যাম ১৪, ভেরেইনা ২, ইয়ানসেন ১৬*, বশ ০, রাবাদা ৩১*; শাহজাদ ১০-০-৪৭-১, আব্বাস ১৯.৩-৬-৫৪-৬, নাসিম ৯-০-৩৪-১, জামাল ১-০-১১-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা
ম্যান অব দা ম্যাচ: এইডেন মার্করাম