নিকোলাস পুরানের ৭ ছক্কার ঝড়ো ইনিংস আর শেই হোপের ফিফটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
Published : 24 Aug 2024, 11:03 AM
বিপর্যয়ের মধ্যে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াইয়ের রান এনে দিয়েছিলেন ট্রিস্টান স্টাবস। কিন্তু নিকোলাস পুরান যখন ছন্দে থাকেন, কোনো লক্ষ্যই তো তখন খুব বড় নয়! সঙ্গে জ্বলে উঠলেন শেই হোপ ও আলিক আথানেজ। তাদের ব্যাটের আগুনে পুড়ে ছাই প্রোটিয়াদের আশা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২০ ওভারে প্রোটিয়ারা তোলে ১৭৬ রান। ক্যারিবিয়ানরা তা পেরিয়ে যায় ১৩ বল বাকি রেখে। এই মাঠের ১০ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ড এটিই।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওই স্কোরে যাওয়াটাও ছিল বিস্ময়কর। ৮ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল তারা কেবল ৪২ রানেই। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন স্টাবস। ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ বলে ৭৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
তবে সেই পুঁজি নিয়েও লড়াই জমাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। উদ্বোধনী জুটিতেই হোপ ও আথানেজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গড়ে দেন জয়ের ভিত। পরে পুরানের বিধ্বংসী ইনিংসে আরও সহজ হয়ে ওঠে জয়ের পথ।
৭ ছক্কা ও ২ চারে স্রেফ ২৬ বলে ৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন পুরান। হোপের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ বলে ৫১ রান।
স্টাবসের পাশাপাশি ম্যাচ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি প্রাপ্তি কোয়েনা মাফাকা। গত যুব বিশ্বকাপ মাতিয়ে জাতীয় তলে আসা পেসারের অভিষেক হয় এ দিন রেকর্ড গড়ে। ১৮ বছর ১৩৭ দিন বয়সে মাঠে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার তিনি। প্রথম ম্যাচে প্রতিভা ও সামর্থ্যের ঝলকও কিছুটা মেলে ধরেন এই তরুণ। ১৪৫ কিলোমিটারের আশেপাশে গতিতে বল করেন, নিয়ন্ত্রণও ছিল বেশ ভালো। পথম আন্তর্জাতিক উইকেটেও স্বাদও তিনি পেয়ে যান অভিষেকের দিনে।
ত্রিনিদাদে মেঘলা আকাশের নিচে টস জিতে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল। তবে এরপর বৃষ্টিতে খেলা শুরু হতে দেরি হয় ঘণ্টখানেক।
খেলা শুরুর পর কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে উইকেটে ম্যাথু ফোর্ড, আকিল হোসেন ও শামার জোসেফের বোলিংয়ে বিপাকে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। ফোর্ড নিজের প্রথম দুই ওভারেই ফেরান রায়ান রিকলটন ও এইডেন মার্করামকে। রিজা হেনড্রিকস ও রাসি ফন ডার ডাসেনকে বিদায় করেন জোসেফ। আকিলের শিকার হন ডনোভান ফেরেইরা। তাতে ৪২ রানে ৫ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেই সময়টায় নিজেকে সংযত রাখেন স্টাবস। ১২ ওভার শেষে তার রান ছিল ১৬ বলে ১৩। এরপর গুডাকেশ মোটিকে বিশাল এক ছক্কা মেরে তিনি ইনিংসের গতি বদলান। আরেকপ্রান্তে প্যাট্রিক ক্রুগার দারুণভাবে সঙ্গ দেন। গড়ে ওঠে জুটি।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ক্রুগার ৪৪ রান করেন ৩২ বলে। জুটিতে আসে ৫০ বলে ৭১ রান।
পরের জুটিতে বিয়র্ন ফোরটানকে ২৫ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন স্টাবস। সেখানে ফোরটান ছিলেন মূলত সহকারীর ভূমিকায়। জুটিতে তার অবদান কেবল ৮ বলে ১১ রান, স্টাবসের অবদান ১৭ বলে ৪৫।
নিজের শেষ ৬ বলে ২৩ রান তোলেন স্টাবস। দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
রান তাড়ায় শুরুর জুটিতেই প্রায় অর্ধেক পথ পেরিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আথানেজ ও হোপ ৪৯ বলে গড়েন ৮৪ রানের জুটি।
দ্বিতীয় ওভারে ছক্কায় আগ্রাসন শুরু করেন আথানেজ। পরে নান্দ্রে বার্গারের ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার আসে তার ব্যাট থেকে। ওটনিল বার্টম্যানের বলে ছক্কায় হাত খোলেন হোপ। দুজনে পরে রানে ভাসিয়ে দেন মার্করামকে। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের ওভার থেকে আসে ২১ রান।
পাওয়ার প্লেতে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ৭৫ রান।
আথানেজ বিদায় নেন ৩০ বলে ৪০ রান করে। তবে প্রোটিয়াদের স্বস্তি আসেনি। তিনে নামা পুরানের ব্যাটে বইতে থাকে রানের স্রোত।
পুরান কিরজে যাওয়ার পর হোপের রানের গতি অবশ্য একটু কমে যায়। ফিফটির পরপর আউটও হয়ে যান তিনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমস্যা হয়নি। বার্গানের এক ওভারে টানা চারটি ছক্কা মারেন পুরান, এর একটি ছিল ১০০ মিটার লম্বা। পরে ক্রুগারের ওভারে দুটি ছক্কা মারেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
জয়ের খুব কাছে গিয়ে অধিনায়ক পাওয়েলকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোস্টন চেইস নেমে প্রথম বলে বাউন্ডারিতে শেষ করে দেন ম্যাচ। ত্রয়োদশ ফিফটিতে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন পুরান।
সিরিজের পরের ম্যাচ একই মাঠে রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৭৪/৭ (রিকলটন ৪, হেনড্রিকস ৪, মার্করাম ১৪, স্টাবস ৭৬, ফন ডাসেন ৫, ফেরেইরা ৮, ক্রুগার ৪৪, ফোরটান ১১*, মাফাকা ১*; আকিল ৪-০-২২-১, ফোর্ড ৪-০-২৭-৩, শামার ৪-০-৪০-২, শেফার্ড ৩-০-৩৯-১, মোটি ৪-০-৩১-০, চেইস ১-০-১৪-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৭.৫ ওভারে ১৭৬/৩ (আথানেজ ৪০, হোপ ৫১, পুরান ৬৫*, পাওয়েল ৭, চেইস ৪*; বার্গার ৩-০-৪৭-০, ফোরটান ৩-০-২৪-০, মাফাকা ৩.৫-০-২৫-১, বার্টম্যান ৪-০-৩০-২, মার্করাম ১-০-২১-০, ক্রুগার ৩-০-২৮-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: নিকোলাস পুরান।