শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
Published : 06 Jul 2024, 07:25 PM
চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চুতর্থ দিনের মত শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারেও বিকাল পৌনে ৪টা থেকে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করলে তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, ভিসি চত্বর ও টিএসসি থেকে বকশীবাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন। কোটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের চারটি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। রোববার থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।
“এদিন বিকাল ৩টা থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, চানখারপুল, সায়েন্স ল্যাব, মতিঝিলসহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো অবরোধ করা হবে।”
দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
হাই কোর্টের আদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরলে ছয় বছর পর এর বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে ৯ জুন আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
তবে আপিল বিভাগ তা স্থগিত না করায় আপাতত হাই কোর্টের রায় বহাল থাকছে।
শিক্ষার্থীদের এবারের ৪ দাবি
• ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
• ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
• সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
• দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন...
কোটা বাতিলের দাবিতে নতুন কর্মসূচি
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় আপাতত বহাল
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল অবৈধ: রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ: হাই কোর্টের রায়