জেএসসি-জেডিসিমেধাবী মুখ বেড়েছে তিনগুণ

অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় এবার সম্মিলিতভাবে ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও ঝরে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ছাত্র-ছাত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2011, 09:11 AM
Updated : 28 Dec 2011, 09:11 AM

ঢাকা, ডিসেম্বর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। তবে ঝরে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী।

এবার জেএসসি-জেডিসিতে পূর্ণ জিপিএ (৫ এর ভেতরে ৫) অর্জন করেছে ৩০ হাজার ৮৫২ জন। গত বছর আট হাজার ৫৫৬ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার সম্মিলিতভাবে ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

বুধবার শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর আগে দুপুরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তর করেন।

শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, “ফলাফল পর্যালোচনা করে এবার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে কোনো বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পাবে কি না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

গত বছর প্রথমবার অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় তিন বিষয়ে অকৃতকার্যরাও নবম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল।

এবারের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেএসসি ও জেডিসিতে এক দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে। গত বছর সম্মিলিতভাবে দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

জেএসসিতে গত বছর দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও এবার উত্তীর্ণের দুই শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পূর্ণ জিপিএ পওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে জেডিসিতেও।

পাসের হার

এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে ৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিদেশের ৭ কেন্দ্রে ৯৮ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।

গত বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার সম্মিলিতভাবে ৭৩ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এবার সম্মিলিতভাবে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও এবার চার লাখ তিন হাজার ৩৪৮ জন বেড়েছে।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিকে থেকে এবার ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। জেএসসি-জেডিসিতে ৮৫ দশমিক ০৭ শতাংশ ছেলে উত্তীর্ণ হয়েছে। মেয়েদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

জেএসসি ও জেডিসিতে ১৫ হাজার ৫৩৪ জন ছেলে এবং ১৫ হাজার ৩১৮ জন মেয়ে পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।

পাসে এগিয়ে বরিশাল বোর্ড

পাসের হারের দিক দিয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার এবার সেরা ফল দেখিয়েছে বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে এবার ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

এছাড়া, ঢাকা বোর্ডের ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ, রাজশাহীর ৭৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, কুমিল্লার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ, যশোরের ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, চট্টগ্রামের ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সিলেটের ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডের ৮৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার অষ্টম শ্রেণী থেকে নবমে উত্তীর্ণ হয়েছে।

পূর্ণ জিপিএ বেশি ঢাকা বোর্ডে

পূর্ণ জিপিএ (৫ এর ভেতরে ৫) পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে আট বোর্ডে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা। এ বোর্ডের ১২ হাজার ২১ জন ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে এবার।

এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ৪ হাজার ২১২ জন, কুমিল্লায় ২ হাজার ৩৯৬ জন, যশোরে ২ হাজার ৭৫৪ জন, চট্টগ্রামে ২ হাজার ১৭৬ জন, বরিশালে ১ হাজার ৮৮৬ জন, সিলেটে ৭৪৮ জন এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ৩ হাজার ৬৪৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৮ জন। আর জেডিসিতে এই সংখ্যা ১০১৪ জন। বিদেশের কেন্দ্রগুলোতে ৩৩ শির্ক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

সেরা স্কুল ও মাদ্রাসা

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় এবার দেশসেরা ফল করেছে ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তবে দেশের সেরা ২০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ১০টিই ক্যাডেট কলেজ।

নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর হার, পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়ার হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের গড় জিপিএ- এই পাঁচটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে আট বোর্ডের সেরা ২০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯২ দশমিক ৮৬ স্কোর নিয়ে সেরাদের সেরা হয়েছে ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ স্কুলের ৩৩৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে সবাই। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০৪ জন।

একই মানদণ্ডে ৬৬ দশমিক ৮৩ স্কোর নিয়ে ঢাকার তানজিমুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদ্রাসা এবার জেডিসিতে দেশের সেরা ফল দেখিয়েছে।

উত্তরার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ জন।শতভাগ পাস-ফেলএবার জেএসসি-জেডিসিতে সম্মিলিতভাবে এক হাজার ৮৩১ প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর ৮৬৫ প্রতিষ্ঠান থেকে সব শিক্ষার্থী পাস করে। এবার শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৯৬৬টি।

অন্যদিকে কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২৬টি কমেছে। এবার ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি; গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ৩৬৭টি।

শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে যাওয়া সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, “এবারের ফলাফলে সবগুলো সূচকেই উর্ধ্বমুখী। এ থেকে বোঝা যায় শিক্ষায় অগ্রগতি হচ্ছে।”ঝরে পড়ল সাড়ে তিন লাখ

এবার জেএসসি ও জেডিসি থেকে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৯১৮ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আর দুই লাখ ৯৩ হাজার ১৬৪ জন ফেল করেছে।

শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমাতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

গত বছর ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী এই পর্যায়ে এসে ঝরে পড়েছিল।

এবার মোট ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৭ পরীক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। যাদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৮ লাখ ৩৭ হাজার ১৭২ জন এবং ছাত্রী ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৫ জন। উত্তীর্ণ ১৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮৩ জনের মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১২ হাজার ১৮৯ জন; আর ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৪ জন ছাত্রী।

এবার জেএসসি-জেডিসিতে ২৭৫ জন শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়। এর মধ্যে জেএসসিতে ১২১ জন ও জেডিসিতে ১৫৪ জনকে বহিস্কার করা হয়।

গত বছর বহিস্কৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো এক হাজার ৮০৪ জন।

অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১০ সাল থেকে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ও গণিত ছাড়া সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সৃজনশীল প্রশ্নে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআই/জেকে/২১০৫ ঘ.

এ সম্পর্কিত আরো খবর