ঢাবির হলে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে ‘নির্যাতন’, তদন্ত কমিটি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় অসুস্থ এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে 'নির্যাতন' করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2022, 06:50 AM
Updated : 27 Jan 2022, 06:50 AM

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আকতারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হলের আবাসিক শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম সানাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, সন্দেহ নাই। ঘটনা শুনে আমি গত রাত ৩টার দিকে হলে গেছি। শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। তাকে আমি সাপোর্টও দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

আকতারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিজয় একাত্তর হলের মেঘনা ব্লকের ৩০০২ (ক) কক্ষে থাকেন।

আকতারের অভিযোগ, বুধবার রাত ১০টায় হল ছাত্রলীগ গেস্টরুমে ( অতিথি কক্ষে) যেতে বলেছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে যেতে না পারায় তাকে ডেকে নিয়ে ‘নির্যাতন’ করা হয়।

তিনি বলেছেন, অসুস্থতার কথা বলার পরও তাকে ‘কক্ষের লাইটের দিকে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার শাস্তি’ দেওয়া হয়। ১৫ মিনিট লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চেতনা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এই শিক্ষার্থী জানান, সাত দিন আগে তার বাবার স্ট্রোক করেছে; পরিবারের বিপদে ছোট ভাই দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। এসব কারণে আগে থেকেই তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন।

বুধবার রাতের ওই ঘটনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী  ওমর ফারুক শুভ জড়িত বলে আকতারের অভিযোগ।

তারা সবাই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ইউনুস ও রানা হলের সভপাতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। 

যাদের বিরুদ্ধে আকতার অভিযোগ এনেছেন, তাদের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি।

বুধবার রাতের ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এর আগেও  বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়েছে। উনারা এখন বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম।”

এ বিষয়ে আবু ইউনুসকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। কথা বলার জন্য এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে বরিউল ইসলাম রানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।  প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা তো দূরের কথা, ন্যূনতম অসম্মানজনক আচরণও যদি করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সত্যতা নিরূপণ করে যে শাস্তির সুপারিশ করবে, সেটা পর্যালোচনা করে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”