নতুন ক্যাম্পাসে বাড়তি ফি, উদ্বিগ্ন ব্র্যাক শিক্ষার্থীরা

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে ২০২০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের বছরে গুনতে হবে বাড়তি ২১ হাজার টাকা, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন ছাত্রছাত্রীরা।

সাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 06:35 AM
Updated : 16 Jan 2018, 06:47 AM

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ক্যাম্পাস পরিচালনা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্যই বাড়তি ওই টাকা তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেবে।

আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলেছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানোই হয়নি। 

গত ১০ জানুয়ারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এক নোটিসে বলা হয়, রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ২০২০ সাল থেকে সব প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সেখানে বলা হয়, নতুন ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে এবং নতুন ক্যাম্পাসের সুবিধা গ্রহণ করতে বর্তমান ও নতুন- সকল শিক্ষার্থীকে প্রতি সেমিস্টারে অতিরিক্ত সাত হাজার টাকা করে দিতে হবে, অর্থাৎ বছরে তিন সেমিস্টারে দিতে হবে মোট ২১ হাজার টাকা।

নোটিসে এই বাড়তি অর্থকে ‘ক্যাম্পাস উন্নয়ন ফি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই ফি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া তাহসিন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভর্তি হওয়ার আগে তিনি ওয়েবসাইটে দেখেছিলেন সম্মান শেষ করতে তার মোট আট লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। ২৭ ডিসেম্বর তার ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কিন্তু ৩ জানুয়ারি নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের জানান, ২০২০ সাল থেকে প্রতি সেমিস্টারে সাত হাজার টাকা করে ‘ক্যাম্পাস উন্নয়ন’ ফি দিতে হবে। এরপর ১০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত ফির ওই নির্দেশনা আসে।

তাহসিন বলেন, “আমি তো পুরনো ক্যাম্পাসেই ভর্তি হয়েছি একটা এস্টিমেটেড হিসাব দেখে। নতুন ক্যাম্পাস তো আমার ইচ্ছায় হচ্ছে না। অতিরিক্ত ফিটা আমার জন্য চাপ মনে হচ্ছে।”

চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রুমিন রহমান এখন হিসাব করছেন, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর অন্তত এক বছর লাগবে তার স্নাতক শেষ করতে। অর্থাৎ তাকেও এক বছর ওই বাড়তি টাকা দিতে হবে। 

তিনি বলেন, “এমন তো না যে নতুন ক্যাম্পাসের কিছু অংশ আমি পাব। বাড়তি ২১ হাজার টাকা কোন হিসাবে দেব আমি বুঝতে পারছি না। বাবার একটা বাজেট ছিল আমাকে এখানে ভর্তি করার সময়। সেটা তিনি আলাদা করে রেখেছেন। এমনিতেই এত টাকা দিয়ে পড়ছি, আবার এই অতিরিক্ত ফি মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত।”

চতুর্থ সেমিস্টারের আরেক শিক্ষার্থী মো. সাকিব বলেন, “প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, এমনিতেই অনেক টাকা দিতে হচ্ছে। তার ওপর আবার এটা চাপিয়ে দিলে তো কষ্ট হয়ে যাবে।”

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের এই পরিকল্পনার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) অবহিত করেনি বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমিতো জানিই না এ ব্যাপারে কিছু। ইউজিসির কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই নতুন ক্যাম্পাস বা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়ার।

“বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আইনের একটা ধারায় আছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় ধার্য করা বেতন/ফি ইউজিসিকে জানাতে হবে। কিন্তু ব্র্যাক তো জানায়নি, আপনি না বললে আমি জানতাম না।”

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে অথবা ফির বিরোধিতা করলে ইউজিসি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিতে পারে বলে জানান অধ্যাপক মান্নান।

তিনি বলেন, “এর আগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এ ধরনের একটা কাজ করতে চেয়েছিল, ছাত্ররা এর বিরোধিতা করেছিল।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ফি ‘চাপিয়ে দেয়’ মন্তব্য করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, “এভাবে হঠাৎ ফি বৃদ্ধি আমি নৈতিকভাবে সাপোর্ট করি না।”

অবশ্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শিব নারায়ণ কৈরির ভাষ্য, নতুন ক্যাম্পাসের জন্য তাদের এই বাড়তি ফির বিষয়টি হঠাৎ করে হচ্ছে না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউনিভার্সিটি যখন ওখানে যাবে, তখন অনেক ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপ করবে। আমাদের মেনটেইনেন্স কস্টটা অনেক হাই। নতুন ফ্যাসিলিটিজ যারা পাবে তাদের এই ফি-টা দিতে হবে। আমরা কিন্তু অনেক আগে থেকেই বলে রাখছি এটা। হঠাৎ করেই চাওয়া হচ্ছে না।”

কতদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই বাড়তি ফি দিতে হবে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, তাদের আরও হিসাব করে বলতে হবে কতদিন পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি নেওয়া হবে।

“আমাদের ইনিশিয়াল একটা হিসাব হয়েছে, সে অনুযায়ী ওই ফি ঠিক হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসে গেলে তারপর বোঝা যাবে কবে এটা স্টপ করতে পারব আমরা। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট সে সিদ্ধান্ত নেবে।”