ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বোমাবাজির পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হল ১৭ দিনের জন্য বন্ধ এবং ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
Published : 21 Dec 2016, 09:25 AM
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পর পুলিশ রাতে শাহপরাণ, বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র, হাতবোমা ও গুলি উদ্ধার করলে হল বন্ধের এই ঘোষণা আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মুন্সী নাসের ইবনে আফজাল বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলায় হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ৮টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পরে বেলা ১১টায় সিন্ডিকেট মিটিংয়ের খবর দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য এ এস এম হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছাত্রদের তিনটি হলসহ সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ছাত্রীদের হল দুটি খোলা থাকবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের অনুসারীদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় ও সাজেদুল ইসলাম সবুজের অনুসারীদের বিরোধের জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
পরে সাঈদ-অঞ্জন-সবুজ পক্ষের কর্মীদের ধাওয়ায় ইমরানের অনুসারীরা উপাচার্য বাংলোর সীমানায় ঢুকে আশ্রয় নেয়। অন্যপক্ষ তখন শাহপরাণ হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।
এ সময় ওই হলের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও ইমরান সমর্থকদের অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হলে রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় তল্লাশি চালানো হয় বলে শাহপরাণ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. শাহেদুল হোসাইন জানান।
তিনি বলেন, শাহপরাণ হল থেকে ৫০টি জিআই পাইপ, ১০টি রড, দুটি রাম দা, চারটি ককটেল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়; বেশকিছু মাদকদ্রব্যও পাওয়া যায়। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের তল্লাশিতে কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রাধ্যক্ষ হাসান জাকিরুল ইসলাম ও শরদিন্দু ভট্টাচার্য।
মুজতবা আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাবিল উদ্দিন বলেন, “ঘুম থেকে উঠেই শুনি হল ছাড়তে হবে। এখন ১০ দিনের জন্য আমরা আমরা কোথায় যাব।”
বিক্ষোভের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাহপরাণের প্রাধ্যক্ষ শাহেদুল হোসাইন বলেন, “সংঘর্ষ এড়াতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, “উত্তেজনার কারণে হলগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি এখন শান্ত।”
তদন্ত কমিটি
সিন্ডিকেট সদস্য কবির হোসেন জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন - শাহপরাণ হলের প্রাধাক্ষ্য শাহেদুল হোসাইন, বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধাক্ষ্য হাসান জাকিরুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রাধাক্ষ্য শরদিন্দু ভট্টাচার্য ও সহকারী প্রক্টর আলমগীর কবির।
কমিটিকে ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে’ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান কবির হোসেন।
এছাড়া প্রক্টরিয়াল বডিকে দ্রুত প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।