বুধবারের হামলায় অন্যদের সঙ্গে ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের রুপাইয়্যা শ্রেষ্ঠা, রাহী নায়াব ঐশি এবং ববি বিশ্বাসও আহত হন।
Published : 16 Jan 2025, 07:12 PM
‘সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র কর্মসূচিতে হামলাকারীদের পাশাপাশি এর ইন্ধনদাতাদের খুঁজে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে এ দাবি জানানো হয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান, সাইফুল আলম চৌধুরী, কাজলী শেহরীন ইসলাম, সাব্রিনা সুলতানা চৌধুরী, খোরশেদ আলম, সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন সমাবেশে।
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি ‘গ্রাফিতি’ রাখাকে কেন্দ্র করে বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেয় ‘সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আন্দোলনকারীদের মিছিলটি মতিঝিল মেট্রোস্টেশনের নিচে পৌঁছালে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা স্ট্যাম্প ও লাঠি নিয়ে হামলা করে।
তাতে অন্যদের সঙ্গে আহত হন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্দশ ব্যাচের রুপাইয়্যা শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, পঞ্চদশ ব্যাচের রাহী নায়াব ঐশি এবং ববি বিশ্বাস।
ওই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার এই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
হামলায় আহত ববি বিশ্বাস বলেন, “গতকাল হামলাকারীরা লাঠির মাথায় পতাকা দিয়ে আমাদের উপর হামলা করেছে। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে তারা অপমানিত করেছে।”
আরেক আহত রাহী নায়াব বলেন, “তারা আগে থেকেই স্ট্যাম্প নিয়ে অবস্থান করেছিল। আমরা হামলা হওয়ার বিষয়ে ধারণা করছিলাম। কিন্তু পুলিশ মাঝ থেকে সরে গিয়ে হামলার সুযোগ দেবে, তা আশা করিনি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ভিডিও দেখে সবাইকে গ্রেপ্তার সম্ভব।”
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “পাঠ্যবই থেকে আদিবাসীদের স্বীকৃতি সরানো হয়েছে। তাদের সহ্য করাও হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৬১ জেলায় ‘সিভিল শাসন’, তিন পার্বত্য জেলায় নির্জলা সেনা শাসন আমরা বরদাশত করতে পারি না।
“একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, যাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি আছে, তাদের ‘আদিবাসী’ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী। পাহাড়ে তাদের জমি থেকে উৎখাত হচ্ছে। সমতলেও তাদের উপর হামলা হচ্ছে। দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব।”
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের স্বপ্নের কথা জানিয়ে সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, “বিপরীতে আমরা দেখলাম, আমাদের সমাজের নীতি-নৈতিকতাগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গতকাল যা হয়েছে, তা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না।”
সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন গতকাল বহুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখনই আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে আবারও একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নামব।”
সমাবেশে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সেলের সদস্য মীর আরশাদুল হক বলেন, “তারা রূপাইয়্যা শ্রেষ্ঠার ওপর এমনভাবে হামলা করেছে, তার মাথায় ১২টি সেলাই লেগেছে। যাদের মদদে হামলা হয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
“আমরা দেখেছি, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি যখন রাজুতে কর্মসূচি করে, তখনি পাহাড়ে আগুন লাগে, সংঘর্ষ হয়। তারা এখান থেকে উসকানি দিয়েছে। উসকানি দাতাদের সামনে এনে গ্রেপ্তার করতে হবে।”