কোভিড মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৯ সালের পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা হয়নি।
Published : 01 Oct 2024, 06:22 PM
চার বছর পর এবার মহালয়ায় চন্ডীপাঠ, আগমনী গান, মহিষাসুরমর্দিনী ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে দেবীকে দুর্গাকে মর্ত্যে আসার আমন্ত্রণ জানাবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এর আগে ২০১৯ সালে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা হয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পরের বছরগুলোতে কোভিড মহামারীসহ নানা কারণে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা হয়নি।
চার পর্বের মহালয়ার দ্বিতীয় পর্বে হবে দেবী দূর্গার আগমনী গান। এরপর দেবী দূর্গার মহিষাসুর বধ হবে। প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে শেষ হবে মহালয়া।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র বনিক বলেন, “মহালয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তথা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি, যেটি দুর্গাপূজার সূচনা নির্দেশ করে। এই বিশেষ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করার জন্য আমরা সনাতনী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দিনটি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“এই দিন আমরা মাতৃ বন্দনায় ও চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী মায়ের আরাধনা ও দেবীপক্ষের আগমনীর প্রার্থনা করব। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি, মায়ের আগমনী বার্তায় দেশের সব অশুভ শক্তির বিনাশ হোক ও শুদ্ধ চেতনা জাগ্রত হোক। সেইসঙ্গে সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকুক।”
শ্রীচৈতন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংঘের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবানন্দ দেবনাথ বলেন, “মুক্ত মঞ্চে সকল সনাতনী শিক্ষার্থী ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহালয়ার এই শুভ দিনটি উদযাপন করবেন। অনুষ্ঠানে শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠ, মায়ের আগমনী সংগীত এবং মহিষাসুরমর্দিনী অভিনীত হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। মহালয়া অনুষ্ঠান ক্যাম্পাসে অনেক আগে একবার হয়েছিল, দীর্ঘদিন পর তারা আবার তা পালন করতে যাচ্ছে; এটা ইতিবাচক দিক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “মহালয়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম উৎসব। তারা ক্যাম্পাসে সেটা পালন করার জন্য অনুমতি চেয়েছে, আমরা অনুমতি দিয়েছি। আমাদের প্রক্টোরিয়াল টিম শৃঙ্খলার দিকটা খেয়াল রাখবে।”
মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবী পক্ষের। এর আগের পক্ষ হল পিতৃপক্ষ। এই পক্ষে ভক্তরা তাদের পূর্বপূরুষের আত্মার প্রীতির জন্য অন্ন-জল নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে একে বলা হয় তর্পণ।
সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে।
পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন।
এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন।
সনাতন আচার অনুযায়ী- মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ।
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার ২ অক্টোবর মহালয়া, ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর সপ্তমী, ১১ অক্টোবর অষ্টমী ও ১২ অক্টোবর নবমী এবং ১৩ অক্টোবর দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে এ বছরের শারদীয় দুর্গোৎসব।