দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য দাবিও জানানো হয়েছে।
Published : 28 Jul 2024, 10:53 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের মূল দাবি পূরণ হওয়ায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
রোববার আরও পাঁচ সমন্বয়কের উপস্থিতিতে দেওয়া ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন তিনি। এ ঘোষণা আসার আগে থেকে এই ছয় সমন্বয়ক ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণেই তারা সেখানে থাকছেন বলে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে নাহিদ বলেন, ”আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই।
"সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।"
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই ছয় সমন্বয় ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের শুক্রবার ডিবি হেফাজতে রাখার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসদুজ্জামান খান কামাল।
গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে আনা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে কয়েক ঘণ্টা কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।
সেদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।
এর কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, "আমার জানা মতে তারা (তিন সমন্বয়ক) নিজেরাই তাদেরকে ইনসিকিউরড (অনিরাপদ) মনে করছে। তারা মনে করছিল তাদেরকে যারা বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছে, তাদেরকে কেউ কেউ থ্রেট (হুমকি) করছে।
"সেজন্য আমরা মনে করি, তাদের সিকিউরিটির জন্যই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার যে কারা তাদের থ্রেট দিচ্ছে, কারা তাদের ধমকাচ্ছে।
“সেটা জানার জন্যই তাদের ডেকে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা নেক্সট ব্যবস্থা নেব।"
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নেওয়া হয়। রোববার নেওয়া হয় নুসরাত তাবাসসুমকে।
রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া ভিডিও বার্তায় নাহিদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত ও নিহত হয়েছে। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনাসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
”আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।“
ভিডিও বার্তা দেওয়ার সময় নাহিদের সঙ্গে আন্দোলনের অন্য সমন্বয়কদের মধ্যে সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার ও নুসরাত তাবাসসুমকে দেখা যায়।
এদিকে ছয় সমন্বয়কের কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও তিন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার ও সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদ।
ফেইসবুকে তিনজনের একটি ছবি শেয়ার করে এক পোস্টে রিফাত রশীদ লেখেন, “সিনিয়ররা আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সমন্বয়কদের মাঝে এক গ্রুপকে তুলে নিয়ে গেলে বাকিরা নেতৃত্ব দেবে। কাউকে যদি আটক করে জোরপূর্বক কোনো বিবৃতি আদায় করা হয় তবে আমরা সেটা না মেনে যারা মাঠে থাকব, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “জোরপূর্বক আদায় করা বিবৃতি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করছে।"
আব্দুল হান্নান মাসুদ তার ফেইসবুক আইডিতে লেখেন, জিম্মি হওয়ার পূর্বে সিনিয়র সমন্বয়কবৃন্দের নির্দেশনা মোতাবেক আন্দোলন চলবে।
এর আগে আন্দোলন চলাকালে এ দুই সমন্বয়ক তাদের এ দুই ফেইসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে রিফাত রশীদ ও আব্দুল হান্নান মাসুদের ফোনে কল করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছয় সমন্বয়কদের প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তিনি।
হাই কোর্টের রায়ের পর জুলাইয়ের শুরু থেকে কোটা বাতিলের আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেক স্থানে। পরে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে একপর্যায়ে তা সহিংসতায় গড়ায়।
আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের মধ্যে এক সপ্তাহে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে দেশজুড়ে কারফিউ শুরু হয়। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কারফিউ শিথিল থাকছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস শুরু হয়েছে।