“ব্রয়লার মুরগির বাজারে এক রকম নৈরাজ্য চলছে। খুচরা বিক্রেতা পাইকারদের দোষ দিচ্ছে। আর খোঁজ নিয়ে দেখবেন পাইকার বা খামারিরা বলবেন, তারা কম দামে ব্রয়লার মুরগি দিচ্ছেন। তারা বলবেন দাম বাড়াচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা,” বললেন একজন ক্রেতা।
Published : 28 Apr 2023, 03:10 PM
ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও রাজধানীর বাজারগুলোতে ফেরেনি স্বাভাবিক চিত্র। এখনও ক্রেতা তুলনামূলক কম। বেশ কিছু পণ্যের সরবরাহও স্বাভাবিক হয়নি।
এর মধ্যে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে আরেক দফা। ঈদের আগে গরু, খাশি ও মাছের বাড়তি দাম কমেনি এখনও। দাম বাড়ার তালিকায় যোগ হয়েছে আলু-পেঁয়াজ। তবে সবজির সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি, ফলে কমেছে দাম।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, পলাশী, গুলিস্তানের আনন্দ বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, ফকিরেরপুল ও মালিবাগ রেল গেইট বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে ভিড় তুলনামূলক বেশি থাকে। তবে ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানীর বাজারে এখনও ভিড় দেখা যায়নি সেভাবে।
ব্রয়লারের দামে ফের লাফ
রোজার আগে আগে লাফ দেওয়া ব্রয়লার মুরগি রোজায় কেজিপ্রতি ২০০ টাকায় নেমে এলেও ঈদের আগে আবার বাড়ে। ঈদ শেষে আরও খানিকটা বেড়ে এখন কারওয়ানবাজারেই দাম ২৩০ টাকা। অন্যান্য বাজারে আরও বেশি।
ডিম পাড়া শেষে বিক্রি করে দেওয়া লেয়ার ও সোনালী মোরগির দাম কাছাকছি, কেজিপ্রতি ৩৪৫ থেকে ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগির দাম গরুর মাংসকে ছাড়িয়ে গেছে। জ্যান্ত মুরগিই কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে অন্তত ৬৫০ টাকা করে। এক কেজি ওজনের মুরগি জবাই করলে মাংস হয় ৬৫০ গ্রামের মত। সে হিসাবে কেবল মাংসের দাম পড়ে হাজার টাকা।
শান্তিনগর বাজারে বিক্রেতারা ব্রয়লারের দাম চাইছেন কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।
ক্রেতা হাফিজা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের দুই দিন আগে ব্রয়লার কিনে নিয়ে গেছি ২২০ টাকা দরে। সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজারে এসে দেখি দাম আবার বেড়ে গেছে।”
ব্রয়লার মরগির দাম কেন এত অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “দেশি মুরগির কাছেই তো যাওয়ায় যায় না। ছোট্ট সাইজের একটার দামই চায় তিনশ টাকা।”
শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, ফকিরেরপুল ও মালিবাগ রেল গেইট বাজারে দোকানে মুরগিও পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা মোমিন হোসেন ও মালিবাগ রেলগেইট বাজারের বিক্রেতা সোবহান মিয়া ভাষ্য অভিন্ন। তারা বলছেন, বড় খামারিরা মুরগির দাম ঠিক করে ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করে’। তারা খুচরা বিক্রেতা। দাম বাড়া-কমা তাদের ‘হাতে নেই’।
সেগুনবাগিচায় বাজার করতে আসা সাব্বির আহমেদ বলেন, “ব্রয়লার মুরগির বাজারে এক রকম নৈরাজ্য চলছে। খুচরা বিক্রেতা পাইকারদের দোষ দিচ্ছে। আর খোঁজ নিয়ে দেখবেন পাইকার বা খামারিরা বলবেন, তারা কম দামে ব্রয়লার মুরগি দিচ্ছেন। তারা বলবেন দাম বাড়াচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা।”
পলাশী বাজারে গরু ৮০০ এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মুরগির সঙ্গে বাড়ল ডিমের দামও
ডিমের হালি ৪০ ছুঁয়েছিল ঈদের আগেই। সেটি আরও খানিকটা বেড়ে লাল ডিমের ডজন এখন ১২৫ থেকে ১৩০, কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি। সাদা ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন এখন ১৬০।
ফকিরাপুল বাজারের বিক্রেতা তমিজ উদ্দিন বলেন, “ঈদের পর আমদানি কম। হের লাইগ্যা দাম বাড়তি। আমরাই ঈদের আগে এর চেয়ে কমে বেচছি। কিছু করার নাই। বাজার ঘুরে দেহেন, দাম কম পাইবেন না।”
মালিবাগ বাজারে আসা কলেজ শিক্ষক শরিফ উদ্দিন বলেন, “ডিমের যে সিন্ডিকেট, তারাই দাম ওঠা-নামা করাচ্ছে। কিছুই করার নেই। এখানে ডিমান্ড অথবা সাপ্লাই কোনটা ফ্যাক্টর নয়। আপনি অনুসন্ধান করলেই দেখবেন, ডিমের দাম বৃদ্ধি মূল কারণ দালাল সিন্ডিকেট। বিক্রেতারাও কেউ বলতে চায় না ব্যবসার নিরাপত্তার কারণে।”
বড় মাছের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়ার কেজিই ১৮০ থেকে ২০০। পাবদার দাম ৩৫০, চিংড়ি প্রকারভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই মাছ ৩২০ থেকে ৪০০, কাতলা মাছ ২৩০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বড় আকারের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ২ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
কারওয়ান বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আবু জাকির বাজারদর দেখে হতাশ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রমজান মাসে মাছ মাংস ও মুরগির দাম বেড়েছে, এখনও সেই দামই রয়ে গেছে। কিছুটা হলেও দাম কমবে বলে আশা করেছিলাম।”
চিনির দাম সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি। সরকার খোলা সর্বোচ্চ দাম ঠিক করেছে ১০৪ টাকা, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৭ থেকে ১২৫ টাকায়।
প্যাকেটজাত চিনি বেশিরভাগ দোকানে পাওয়া যায় না। তবে শপিং মলে প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ল আলু-পেঁয়াজের
এই দুটি পণ্যের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।
কাওরান বাজারের পেঁয়াজের পাইকার মো. চাঁন মিয়া বলেন, ঈদের আগে পাল্লা (পাঁচ কেজি) ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। এখন ২২০।
পেঁয়াজ অনেক রকমের আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “গড়ে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৪৭-৪৮ টাকা এখন।”
আলু বিক্রেতা শরিফ মিয়া জানান, গোল আলু প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পাল্লা ছিল, এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
সবজির সরবরাহের চেয়ে চাহিদা ‘কম’
পাইকাররা জানিয়েছেন, কাওরানবাজারে এখন কাঁচা বাজারের সরবরাহ বেড়েছে, সেই হিসেবে ক্রেতা কম ফলে দামও একটু কম।
কাওরান বাজারের সবজির পাইকার আবুল হোসেন জমাদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবজির সরবরাহ অনেক, খুচরা ব্যবসায়ীরা আগে যে পরিমাণে নিয়ে যেত, এখন নিচ্ছে তার প্রায় অর্ধেক। তাই কম দামেই ছাড়তে হচ্ছে।”
তিনি জানান, খুচরায় শসা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর ৬০ ও ঝিঙা ৬০ টাকা করে, করলা ৪৫ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ও বেগুন ৩০ করে এবং মাঝামি মানের লেবুর হালি ১৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে এসব সবজি কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বিক্রি ছিল। লেবুর হালির দাম কমেছে অনেকটাই।
কাওরান বাজারের বিক্রেতা আলম মিয়া লাল শাক, পালং, পাট, কলমি, ডাটা শাকের চার আটি ২০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, “দাম এক্কেবারে পইড়া গেছে। ঈদের আগেত্তে অর্ধেক দাম এহন।”
আরেক ব্যবসায়ী মো. তানভীর আলম দুর্জয় জানান, ঈদের আগে তিনি কাকরোল বিক্রি করেছেন ১২০-১৩০ টাকা, এখন সেটা ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে।
শরিফুল ইসলাম ঢেঁড়শ বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে, পাইকারি নিলে আরও কম। তিনি বলেন, “করলা আগে ৭০/ ৭৫ টাকা আছিল, এখন ৪০/৪৫ টাকা।”