আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে পৌনে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আসছে

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজসহ সব কাস্টমস হাউজের আধুনিকায়ন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 08:10 PM
Updated : 11 March 2023, 08:10 PM

বছর চারেক পর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এজন্য প্রায় পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার এক প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টমস ও বেনাপোল বন্দরে ডিজিটাল শুল্কায়ন ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্প প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে এখন সরকারের অনুমোদনের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পটি রোববারের একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি আমদানি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনিবআর) হাতে নেওয়া ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প চার বছরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ ব্যয়ের ৮৭ শতাংশ বা এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার যোগান দিবে বিশ্ব ব্যাংক এবং বাকি প্রায় ২১১ কোটি টাকার অর্থায়ন আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার বিষয়ে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার পর আমাদের যোগাযোগ অবকাঠামো এবং কাস্টমস আধুনিকায়নের মাধ্যমেই ব্যয় কমিয়ে চ্যালেঞ্জে মোকাবিলা করতে হবে। এটা আমরা বার বার সরকারের কাছে জানিয়ে আসছিলাম।

“প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসার ব্যয় কমাতে পারলে আশা করি আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ করলে অবশ্যই এর সুফল আমরা পাব। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতাও প্রয়োজন।”

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস করতে গড়ে ১১ দশমিক ৫ দিন সময় লাগে। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনারের অন্তত ১০ শতাংশ কায়িকভাবে পরীক্ষা করা হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচাইয়ের ওপর জোর দিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ কন্টেইনারের কায়িক পরীক্ষা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ সুবিধা বাড়ানো জরুরি

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি বছরে মাত্র ১০০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম। একাডেমিক, আবাসিক এবং আধুনিক ল্যাব সুবিধা না থাকার ফলে এখানে অন্য কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না।

অথচ বৈশ্বিক বাণিজ্যের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাস্টমসের দক্ষতা বাড়াতে বছরে অন্তত ৩০০-৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ একাডেমিকে বিশ্বমানের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

বন্দরে বাড়াতে হবে সক্ষমতা

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রতিদিন ১৩ হাজারটি ডিক্লারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ওই বছর ৪৫ হাজার ৭০০ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়েছে বন্দরটি। প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার মানুষ সেবা গ্রহণের জন্য সেখানে যান।

কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বন্দরটির সক্ষমতা নেই উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করলে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে তা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজসহ সব কাস্টমস হাউজের আধুনিকায়ন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।

বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিন ৭৫০টি ট্রাকের ক্লিয়ারেন্সের সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৩৫০টি ট্রাক ক্লিয়ারেন্সের সক্ষমতা রয়েছে বন্দরটির। বন্দরটি প্রতিদিন ১২ হাজার জন যাত্রীর ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ভবিষ্যতে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে, রেল কার্গোর পরিমাণ বাড়বে। ফলে এই বন্দর নিয়ে বাণিজ্য বহুগুণে বেড়ে যাবে।

ঢাকা কাস্টমস হাউজে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০টি ডিক্লারেশন হয়, ১০ হাজার জন পর্যন্ত সেবা নিতে আসেন। ঢাকা বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৫০০টি পর্যন্ত ডিক্লারেশন সম্পন্ন করা হয়। ২০১৯-২০২০ সালে এ বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। এ বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার পর বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়বে পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য ঢাকা কাস্টমস হাউজ আধুনিকায়ন করা ‘অত্যাবশ্যক’ বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় এসব কাস্টমস হাউজের আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।