একক গ্রাহক ও বড় ঋণ নেওয়ার সীমার শর্ত শিথিল; এতদিন বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিও এমন সুবিধা পাচ্ছিল।
Published : 12 Oct 2022, 07:31 PM
রপ্তানি খাতে বড় অঙ্কের অর্থায়নের বাধা দূর করতে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ ঋণ নেওয়ার সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি (ইসিএ) এর দেওয়া ‘এএএ’ ক্রেডিট রেটিংস থাকা কোম্পানিগুলো একক গ্রাহকের ঋণসীমার বাইরে নিজেদের চাহিদামত ঋণ নিতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
একক গ্রাহক ও বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার সীমার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের এমন এক সময়ে ছাড় দেওয়া হল, যখন গত সেপ্টেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় কমে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাব আগামীতে বাংলাদেশের রপ্তানিতেও পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এ সুবিধা আগে থেকে পেয়ে আসছিল সরকারি ঋণ এবং সরকারি গ্যারান্টি পাওয়া কোনো ঋণ এবং ‘এএএ’ রেটিং পাওয়া বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এর গ্যারান্টি দেওয়া ঋণ। গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে এসব ঋণকে এক্সপোজার সীমা পালন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
আর গত ২৭ জুলাই আরেক সার্কুলারে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিকে এ অব্যাহতি সুবিধা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হয়। এবার ইসিএ গ্যারান্টির বিপরীতে এ ছাড় রপ্তানি খাতের জন্যও দেওয়া হল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ইসিএ কাভারেজ সুবিধা থাকা মানেই হচ্ছে আমার (ব্যাংকের) ঋণ পরিশোধে কোনো ঝুঁকি থাকছে না। কোনো কারণে রপ্তানি পণ্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দিতে না পারলেও ইসিএ সেই ঋণ পরিশোধ করে দেবে। এতে ব্যাংকের টাকা পেতে কোনো সমস্যা হবে না। আর ব্যাংকও যেকোনো ঋণ সুবিধা দিতে পারবে।’’
তবে এ ছাড়ের সুবিধা বাণিজ্যিক ব্যাংক দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ এর সহ সভাপতি ও এইচকেসি অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুল আলম চৌধুরী।
তার ভাষ্য, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক সুবিধাই দিয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা বাস্তবায়নে টালবাহানা করে। এত শর্ত দেয় যে, তা মেনে ঋণ পাওয়া দূরহ।
ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, ক্ষুদ্র থেকে বড় আকারের ঋণ গ্রহণে গ্রাহকদের যেমন ঋণ নেওয়ার সীমা যেমন বেঁধে দেওয়া রয়েছে, তেমনি কোনো ব্যাংক কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ এবং একক গ্রাহককে কী পরিমাণ দিতে পারবে সেটির একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, যা ‘এক্সপোজার লিমিট’ ও একক গ্রাহক ঋণ সীমা হিসেবে পরিচিত।
আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে কোনো ব্যাংক মূলধনের কত অংশ একক গ্রাহক কিংবা বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ করতে পারবে তা ঠিক করা হয়ে থাকে।
মঙ্গলবারের সার্কুলারে এ সীমা পরিপালন থেকে রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শর্তটি হল ইসিএ এর ‘এএএ’ রেটিংস থাকতে হবে, যা একধরনের ব্যাংক গ্যারান্টি।
এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি (ইসিএ) রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বীমা ও ঝুঁকি সুবিধা দিয়ে থাকে। কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ‘এএএ’ রেটিংস দেওয়া মানেই কোনো কারণে ক্রেতা পণ্য না নিলে বা পণ্য জাহাজীকরণের পর ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিক্রেতাকে মূল্য পরিশোধ করে থাকে ইসিএ।
মঙ্গলবারের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘‘এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি (ইসিএ) কর্তৃক ‘এএএ’ ক্রেডিট রেটিংপ্রাপ্তদের বেলায় একক গ্রাহক ঋণ সীমা (সিঙ্গেল পার্সন/গ্রুপ) প্রযোজ্য হবে না।“
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি কমাতে ঋণের কেন্দ্রীভূত হওয়া রোধে একক গ্রাহকের ঋণসীমার সাধারণ সীমাবদ্ধতা কমাতে এর আগে সীমা আরোপ করে সার্কুলার করা হয়েছিল। নতুন নির্দেশনায় শিল্পখাতে প্রতিযোগিতামূলক অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য আগের অনুচ্ছেদটি (৩এ) নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, একক গ্রাহক হিসেবে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে কোনো ব্যাংক মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে) বেশি ঋণ দিতে পারবে না। গত ১৬ জানুয়ারি এ হার র্নিধারণ করা হয়, যা এর আগে ৩৫ শতাংশ ছিল।
অপরদিকে ফান্ডেড ঋণের বেলায় তা মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হবে। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ২৫ শতাংশের পুরোটাই ফান্ডেড ঋণ দেওয়া যাবে।
আবার কোনো ব্যাংক তার খেলাপির হার অনুযায়ী কত বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে সেটিও নির্ধারণ করা আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিমালায়।