দেশের পাম্পগুলোতে ধারাবাহিকভাবে তেল পরিমাপে কারচুপির মত অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগী হতে রাষ্ট্রীয় মান নির্ধারণী সংস্থা বিএসটিআইকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রোববার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
বিদ্যুতের ‘মিটার ট্যাম্পারিং’ রোধ করার মত পেট্রোল পাম্পের মিটারেও বিএসটিআই থেকে ‘দৃশ্যমান সিল’ যুক্ত করার প্রস্তাব করার কথা বলেন মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, এখানে অনেকগুলো কারিগরি দিক রয়েছে যা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সে কারণে বিএসটিআই এর পদক্ষেপ দরকার।
এছাড়া বিভিন্ন তেলের পাম্পের মেয়াদোত্ত্বীর্ণ লাইসেন্সের বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরে পৃথক চিঠি দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণার মধ্যে রোববার ও আগের দিন শনিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার তেলের পাম্পে একযোগে অভিযান চালায় ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা সংস্থাটি।
এসব অভিযানে অনেক পাম্পে ওজনে কারচুপির প্রমাণ পায় ভোক্তা অধিকার। এজন্য জরিমানাও করা হয়। পাশাপাশি অনেক পাম্পের বিভিন্ন লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলেও দেখতে পান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ঢাকাসহ ফিলিং স্টেশনগুলোতে তেল পরিমাপে কারচুপির অভিযোগ বেশ পুরোনো। এগুলোতে অনিয়ম খুঁজতে এতদিন শুধু বিএসটিআইকেই অভিযান ও তদারকি করতে দেখা যেত। তবে এরপরও ‘মিটার ট্যাম্পারিং’ করে চলত কারচুপি।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে করিম অ্যান্ড সন্স ফিলিং স্টেশনের দুটি নজেলে অকটেন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটিতে প্রতি ৫ লিটার অকটেনে ৫৪০ মিলিলিটার ও অপরটিতে ৪৯০ মিলিলিটার অকটেন কম পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয় আড়াই লাখ টাকা।
এছাড়া ওইদিন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হকের তেলের পাম্প রমনা ফিলিং স্টেশনেও বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়ার কথা জানায় ভোক্তা অধিকার।
রোববার অভিযানকালে মিরপুর এলাকার এসপি ফিলিং স্টেশনে গত শুক্রবার জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর রাতে বিক্রি বন্ধ রাখায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাম্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও বিএসটিআইকে চিঠি দেয় ভোক্তা অধিকার।
বিএসটিআইয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ফিলিং স্টেশনগুলোতে তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনাকালে এবং ভোক্তাদের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত অভিযোগ পর্যালোচনায় কিছু ফিলিং স্টেশনে ফুয়েল ডিসপেনসারে মিটার টেম্পারিং/কারচুপির মাধ্যমে ভোক্তাকে প্রতারিত করার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে।
একইসাথে বিভিন্ন ভোক্তা তেল নিম্নমানের তেল পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এছাড়া তদারকিকালে দেখা যায় কিছু ফিলিং স্টেশন দাহ্য পদার্থ (পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, গ্যাস ইত্যাদি) বিক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
“এমতাবস্থায়, ফিলিং স্টেশনগুলোর ফুয়েল ডিসপেনসারে মিটার টেম্পারিং/কারচুপি রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, মানসম্মত জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরবরাহ করা জ্বালানি তেলের নমুনা সংগ্রহপূর্বক গবেষণাগারে পরীক্ষা এবং ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদকরণের নির্দেশনা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”
বিস্ফোরক পরিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে সব ফিলিং স্টেশনকে লাইসেন্স ‘হালনাগাদ করার নির্দেশনা প্রদানে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।