শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা সাংবাদিকরা খুঁজে খুঁজে বের করে দেন; কোথায় কে গুঁজে রাখল আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেব।”
Published : 21 Jun 2023, 06:19 PM
পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও যারা পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার দুপুরে সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ে… কিছু লোক মজুদদারি করে, ইচ্ছা করে দাম বাড়ায়। তখনই আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়।
পেঁয়াজের দামের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “আমি জানি যে… পেঁয়াজ আছে, পেঁয়াজ ছাড়ছে না নিয়ে বসে আছে। পেঁয়াজ পচা হলে ফেলে দেবে, তাও বেশি দাম ছাড়া বিক্রি করবে না। যখন আমি আমদানি শুরু করলাম, পাঁচ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করব ঠিক করলাম… ১০-১২ হাজার (মেট্রিক টন) আসতে না আসতে পেঁয়াজের দাম কমে গেল। কারণ তারা দেখল, এই ব্যবসায় আর লাভ নাই।
“এরকম যারা রোলিং করে, মজুদদারি করে, কালোবাজারি করার চেষ্টা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে, ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ড সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত জানান সরকারপ্রধান।
পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা সাংবাদিকরা খুঁজে খুঁজে বের করে দেন। কোথায় কে গুঁজে রাখল… আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে নিয়ে নেব- মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা নেব।”
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে, এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেনো?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু লোক তো থাকে- তারা সুযোগ সন্ধানী, সুযোগ নিতে চেষ্টা করে। আমরা করোনাভাইরাসের পর থেকে যখনই যুদ্ধ লেগেছে তখনই আমি আহ্বান করেছিলাম যে, এই এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে খাদ্য মন্দা দেখা দেবে। মানে ইউক্রেইন, রাশিয়া, বেলারুশ ওইসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়, সারা বিশ্বের খাদ্য চাহিদা তারা পূরণ করে।
“অথচ দেখা যাচ্ছে, সেখানে হয়ত সেভাবে উৎপাদন হচ্ছে না বা পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, খাদ্যের দাম বেড়েছে… আমরা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যখন কিনতে পারি নাই, স্যাংশনের কারণে আমরা বিল পেমেন্ট দিতে পারছি না। আমরা কিন্তু কানাডা থেকে ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার দিয়ে কিনেছি, ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া প্রায় চার হাজার ডলার দিয়ে আমাদেরকে আনতে হয়েছে… এসব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “এটা ঠিক আমাদের যারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক যখনই জিনিসের দাম বাড়ে তাদের ওপর চাপ পড়ে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ তাদের ইনফ্লেশন কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে… আমরা যদি সেরকম অনুসরণ করি। আমরা ধীরে ধীরে কিন্তু একটা একটা করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া শুরু করেছি।
“পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট যাতে না হয়, ইতোমধ্যে আমি বললাম, আপনাদেরকে আগেই… এক কোটি মানুষকে খাবার সাহায্য দেব। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যাতে স্বল্প মূল্যে কিনতে পারে টিসিবির মাধ্যমে, কার্ডের মাধ্যমে আমরা সেগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো… আমরা বেশি দামে কিনছি, ভর্তুকি দিচ্ছি কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে বাজারের ওপরে চাপ না পড়ে।
“এবারে যেমন ইফতার পার্টি করিনি, বলেছি সবাই মানুষকে খাবার সাহায্য দাও। যার ফলে রোজার সময়ে কিন্তু সেভাবে জিনিসের দাম বাড়তে পারেনি। প্রত্যেকটা মানুষ কিছু কিছু মানুষকে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে আমি আমার দলকে তো ধন্যবাদ জানাব, প্রতিটি সহযোগী সংগঠন যেমন করেছে, আবার বিত্তশালীরাও করেছে।”
উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের উৎপাদনটা বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়লে নির্ভরশীলতা কমে যায়।
“এবারে আমাদের প্রচুর ধান উৎপাদন হয়েছে, ভালো ফসল হয়েছে। আগামীতেও হবে। আমাদের আহ্বানের পরে কোথাও কিন্তু এতটুকু জমি অনাবাদী নেই, সবাই চাষ করছে, সবাই নিজে কিছু কিছু উৎপাদন করে যাচ্ছে।”
বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সবাই চিৎকার করে। আমি সবাইকে বলি এখন থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন… বর্ষাকালে দাম বাড়বে।
“ওইটা রেখে দিনে ওটা কিছু পানি দিলে ওটা তাজা হয়ে যায়... আবার রান্না করে খাওয়া যায়… সহজ বুদ্ধি। টমেটো অতিরিক্ত হয়েছে কী করব? আমি বলি শুকিয়ে রেখে দেন… এটা তো বিদেশে ভীষণভাবে চলে, পেঁয়াজও তাই।”
সব বিভাগীয় শহরে ‘ফ্রিজার সিস্টেম’ করে অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে আমি বলতে চাই- আমি আরেকটা উদ্যোগ নিচ্ছি যে, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে উৎপাদন হবে যেগুলোকে দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণের একটা বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছি। সেটা আমরা চিলিং সিস্টেম, ফ্রিজার সিস্টেম করব প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে, যাতে আমাদের অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারি আপৎকালীন সময়ের জন্য,” বলেন তিনি।