“সব মিলিয়ে প্রায় ৪৬টি কূপ এই দুই বছরের মধ্যে খনন করতে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।
Published : 26 Nov 2023, 07:38 PM
দেশের বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রের পুরোনো কূপগুলো সংস্কার করে আগামী দুই বছরের মধ্যে দৈনিক অন্তত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রোববার সচিবালয়ে সিলেট ১০ নম্বর পুরোনো কূপে ওয়ার্কওভার কাজ শেষে দৈনিক ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার খবর দিতে গিয়ে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে এ কূপের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করেন তিনি। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে কৈলাশটিলা-২ নম্বর কূপ থেকে নতুন করে দৈনিক ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার কথা জানায় সিলেট গ্যাসফিল্ড।
রোববার সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের আওতাধীন হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রের এ কূপে ড্রিলিং স্টিম টেস্ট প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। এ কূপে সর্বনিম্ন ৪৪ বিলিয়ন ও সর্বোচ্চ ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান তিনি।
তিনি বলেন, “গত ২৪ জুন থেকে টানা ৫ মাসে ২৬ মিটার গভীর পর্যন্ত খননের পর সিলেট-১০ নম্বর কূপ থেকে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। সকল প্রক্রিয়া শেষে দিনে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে।
“পাইপ লাইন তৈরি করে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে সময় লাগবে ছয় মাস। সঙ্গে পাওয়া যাবে ব্যারেল কনডেনসেটও। গ্যাসের যে চাপ আছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪৪ বা সর্বোচ্চ ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা রয়েছে।”
প্রথম চেষ্টাতেই অনেকটা সফল হওয়ায় এসজিএফএলের কর্মকর্তারা খুশি জানিয়ে তিনি বলেন, “হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৮ কিলোমিটর দূরে গোয়াইনঘাটের এই খাগড়ার হাওরে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গ্যাস অনুসন্ধানে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ চালায় এসজিএফএল।”
এসজিএফএল জানায়, মজুদ গ্যাসের সর্বনিম্ন মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এলএনজির আমদানি মূল্যের সঙ্গে তুলনা করলে মজুদ গ্যাসের মূল্য দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে এসজিএফএলের দৈনিক উৎপাদন দাঁড়াবে ১১৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।”
১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রটির সন্ধান পাওয়া যায়।
সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গত ৭ থেকে ৮ মাসে আমাদের গ্রিডে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস যুক্ত হয়েছে। বেশ কিছু কূপে নতুন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো প্রসেস প্ল্যান্ট এবং সঞ্চালন লাইন রেডি না হওয়ায় গ্রিডে আসতে পারছে না।
“আমরা আশাবাদী যে আগামী ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সিস্টেমে নিতে পারবো। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৬টি কূপ এই দুই বছরের মধ্যে খনন করতে যাচ্ছি। খনন শেষ হলে প্রায় ৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সিস্টেমে যোগ হবে।”
দেশে বর্তমানে দৈনিক ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। এরমধ্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আকারে আমদানি করা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করার সক্ষমতা থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
নতুন গ্যাসপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে কিছু গ্যাস আমাদের বর্তমান সিস্টেম থেকে কমবে। এর সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস সংযোগ হবে। গত ৫/৬ মাসের মধ্যে আমরা যে কাজ করেছি, সেখানে কৈলাশটিলা-২ নম্বর কূপ থেকে এখন দৈনিক ৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস পাচ্ছি। সেটা বর্তমান গ্যাসের মূল্য অনুযায়ী দাম তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যদি এলএনজির দামের সঙ্গে তুলনা করলে ১০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ভোলা দ্বীপের কূপগুলোতে পাওয়া গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে খুলনার শিল্প অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, “ভোলা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে। বছরের শেষ নাগাদ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। সেটা হতে পেলে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস নেওয়ার প্রকল্প শুরু হবে। সেটা শেষ হতে অন্তত দুই বছর লাগবে।”