এ তালিকায় দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে।
Published : 24 Jan 2024, 02:25 AM
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)
নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ১০ ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা অমান্য করায় এখন এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে 'কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না' তা জানতে চেয়ে ব্যাংকগুলোকে মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তিনি বলেছেন, ‘‘তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’’ তবে তিনি ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করেননি।
এ তালিকায় দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে। এর আগে গত জুলাইতে ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার দর নিয়ে কারসাজির অভিযোগ পেয়ে অধিকতর তদন্তে নেমেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেগুলোর মধ্যে ১০টির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ওই সময় ডলারের দর বেশি রাখা হচ্ছে এমন অভিযোগের পর তা ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এরপর তদন্তে নামেন একাধিক কর্মকর্তা।
একই অভিযোগে ২০২২ সালের অগাস্টে অতিরিক্ত দরে ডলার কেনাবেচায় দেশি বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসরাণ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময়ে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের নাম এসেছিল সংবাদ মাধ্যমে।
সেসময় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কৈফিয়ত চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এক মাস পরে ট্রেজারি প্রধানদের পুনর্বহালের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত মুনাফার অর্ধেক সিএসআর তহবিলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কারণ ছাড়া ডলারের দর না বাড়াতে লিখিতও নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর পরামর্শে একাধিক দরের বদলে প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের বিনিময় হার একক দরে নামিয়ে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এজন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন (এবিবি) ডলারের দর নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিচ্ছে। সদস্য ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন সকালে এ দর জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ দরেই কেনাবেচার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমাও (এনওপি-নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। তবে তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা দেখেছেন, ডলারের সরবরাহ সংকট শুরু হলে অনেক ব্যাংক সীমার অতিরিক্ত মুদ্রা জমিয়ে তা বেশি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা শুরু করে। সুযোগ থাকলেও তা বাজারে না ছেড়ে কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানো হয়। আবার কয়েকটি ব্যাংক ডলার সংরক্ষণের তথ্যও গোপন করেছিল আগেরবার। আর এই ১০ ব্যাংক বাফেদা ও এবিবির র্নিধারণ করে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করেছে।