রোজার প্রথম শুক্রবার ঈদ কেনাকাটায় সরগরম বিপণিবিতান

পোশাকের দাম এবার বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারাও বলছেন, বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে তাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2024, 06:17 PM
Updated : 15 March 2024, 06:17 PM

রোজার প্রথম শুক্রবারই ঈদের কেনাকাটা করতে বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে।

ছোট-বড় দোকানগুলো বাড়তি ক্রেতা পেয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বোনাস হয়ে গেলে বেনাকেনা বাড়বে আরো। সেই হিসাবে আগামী সপ্তাহেই 'ঈদ বাজারের' আমেজ মিলবে বলে আশা তাদের।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং মল, বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নূর জাহান মার্কেট ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

কয়েকদিন পরে ভিড় বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় অনেকেই আগেভাগে কেনাকাটা সেরছেন। কারো কারো আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।

বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্কে দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতার ভিড়। এখানকার আড়ংয়ের আউটলেটে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন ব্যবসায়ী গোলাম মর্তুজা। আত্মীয়স্বজনদের জন্যও পোশাক কিনছিলেন তিনি।

মর্তুজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা বছর সেভাবে উপহার দেওয়া হয় না। ঈদের সময়েই আত্মীয় স্বজনদের কিছু উপহার দেই। আর এখন বাজারের যে পরিস্থিতি এত দরদাম করতে পারব না, তাই ফ্যাশন হাউজগুলো থেকেই কিনছি।”

পোশাকের ব্রান্ড রেড এর ব্যবস্থাপক বললেন, “অনেকে তো ঘুরতে আসেন, কিন্তু আজকে যারা আসছেন, তারা কিন্তু কিনছেন। আজতে ভালোই কাস্টমার পেয়েছি। এরে আগের তিনটা রোজায় একদমই কাস্টমার ছিল না।”

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। সন্ধ্যার পর তা বাড়ে আরও।

১০টি দেশীয় ফ্যাশন হাউজ নিয়ে গঠিত দেশী দশের শাখা ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার মধ্যে আজকেই একটু ভালো জমছে। এভারেজ সব প্রোডাক্টই ভালো যাচ্ছে। সামনের ছুটির দিনগুলোতে কেনা-কাটা আরো বাড়বে আশা করছি।”

পোশাক নির্বাচন করতে দেখা গেল আশরাফুজ্জামান আরিফকে। চাকরির জন্য সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সময় পান না। তাই বেছে নিয়েছেন শুক্রবারকে।

তিনি বলেন, “ভিড় হওয়ার আগে; আগেভাগেই কিনে ফেলা আরকি। পরিবার আর নিজের জন্য কিছু কাপড় কিনলাম। আরো কিছু খুঁজছি।”

এমব্রেলার ফ্লোর ইনচার্জ রাব্বি খন্দকার নাদিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য দিনের চেয়ে আজকে ডাবল লোক আসছে।”

তবে লুবনান এর সেলস এক্সিকিউটিভ রবিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার প্রথম শুক্রবার তো, তাই কাস্টমার বেশি আসছে। কাপড় দেখতেছে, যদিও কেনাকাটা তেমন শুরু হয়নি।”

‘দাম বেশি’

লুবনানে দোকানে কেনাকাটা করতে আসা নওরীন আহমেদের কাছে পোশাকের দাম বেশি মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, “গত বছর যেটা দাম ১০০০-১২০০ ছিল, এবার সেটা ১৮০০-২০০০ হয়ে গেছে। কিনতে তো হবে, কিছু করার নাই। দুইটার জায়গায় একটা কিনব।”

দেশীয় ফ্যাশন হাউজ রঙ বাংলাদেশে নারী-পুরুষ, শিশুদের জন্য নানা ডিজাইন ও রঙের পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। আবার পুরো পরিবারের জন্য ম্যাচিং ড্রেসের কালেকশনও রয়েছে।

এখানকার ব্যবস্থাপক কে এইচ মানিক বলেন, “আজকে মোটামুটি কাস্টমার আসছে। এই কয়েকদিন কম ছিল। আমরা মোটামুটি সাশ্রয়ী দামে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

তার দোকানে ৬৮০ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকার শাড়ি রয়েছে। এছাড়াও ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকার পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাক ৮০০ টাকা থেকে এবং নারীদের থ্রি-পিস ২৯০০ টাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

এই বিপণিবিতানে বন্ধুর সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম। কিনেছেন নিজের জন্যই।

বলেন, “ভিড় কম থাকবে, এজন্যই আসছি। দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেশি।”

আজিমপুর থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নূর জাহান মার্কেটে আসা মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। স্ত্রী- সন্তান আগেই গ্রামের বাড়ি চলে যাবে। তাই আগে আগে কেনাকাটা করতে এসেছি। ভেবেছি, আগে কেনাকাটা করলে জিনিসপত্রের দাম কম পাওয়া যাবে। কিন্তু এবার জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি।”

নূর জাহান মার্কেটে থ্রি-পিস কিনেছেন সাদিয়া নূর। তিনি বললেন, “যে থ্রিপিস ১২শ টাকায় কেনা যেত, এখন তা ১৫শ টাকা।”

দাম বেশি নিয়ে নিজেদের অপারগতার কথা জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

আগে শিশুদের জন্য, পরে বড়দের

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটাই বেশি হচ্ছে।

যমুনা ফিউচার পার্কে নারী ও শিশুদের জন্য বাহারি ডিজাইনের সব পোশাকের পসরা সাজিয়েছে অর্ভিয়া টাচ নামের দোকান।

নায়রা কাট, আলিয়া কাট, পার্টি ফ্রক, গাউনসহ পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান থ্রি পিসের কালেকশন রয়েছে তাদের।

এই দোকানের ম্যানেজার বদিউজ্জামান বলেন, “আমাদের ইন্ডিয়া, চায়না, পাকিস্তানের প্রোডাক্ট বেশি। মোটামুটি কাস্টমার আসতেছে। আরও বাড়বে। বাচ্চাদের ড্রেসই বেশি সেল হচ্ছে।”

বসুন্ধরা শপিং মলে বাচ্চার পোশাক পছন্দ করতে দেখা গেল টাঙ্গাইলের বাসিন্দা লিপনকে। বোনের বাসার আতিথেয়তা শেষে বাড়ি ফেরার আগেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করতে পরিবারসহ সকাল সকালই বসুন্ধরায় চলে যান তিনি।

লিপন বলেন, “বাড়ি চলে যাব সামনের বুধবার; আজকে একটু জ্যামও কম। বাচ্চার কেনাকাটা শেষ হলে আমাদেরটা কিনব।”

কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফিরতে দেখা গেল আয়েশা বিথিকে।

তিনি বলেন, “বাচ্চাদের ঈদ আসলে নতুন কাপড় কেনার একটা আশা থাকে। তাই তাদের নিয়ে এলাম। আমাদেরটা পরে হলেও চলে। ওরা নতুন কাপড় পেয়ে খুশি হবে, ঈদটা তো আসলে ওদেরই।” 

জুতার দোকানে কী অবস্থা

সাধারণত মানুষ আগে জামা কেনে, পরে যায় জুতার দোকানে। কিন্তু এবার জুতার দোকানে আগেভাগেই ভিড় দেখা যাচ্ছে।

বসুন্ধরা সিটির বাটা শো রুমের বিক্রেতা আরিফ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে আমাদের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। মনে হচ্ছে ঈদ বাজার জমে উঠেছে।”

জুতা কিনতে আসা জাইমা জাহিদ বলেন, “দেরি হলে হয়ত নতুন আসা জিনিসগুলো পাব না। তাই ছুটি পেয়ে চলে আসলাম আজকে।”

নিউমার্কেট এলাকার কী চিত্র

ঈদ কেনাকাটায় রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট, গাউসিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নূর জাহান মার্কেটের দোকানগুলোতে ভিড় অন্য এলাকার চেয়ে বেশিই থাকে।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে প্যান্ট-শার্ট কিনেছেন সাইদুর রহমান অবশ্য বলছিলেন বলেন, “ঈদের পোশাক কেনার সময় এখনও হয়নি। এমনিতেই নিয়মিত পরার জন্য শার্ট-প্যান্ট কিনেছি।”

নিউ সুপার মার্কেটে পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনেছেন তাওহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ঈদের আগে অনেক ভিড় থাকে। তাই আগে আগে ঈদের কেনাকাটা করে ফেলছি।”

ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সামনে কেনাকাটা জমবে আরও।

নিউ মার্কেটের আজিজ বিতানের বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, “ঈদের বাজার এখনও জমে উঠেনি। আশা করছি, রোজার ১৫ টা গেলে বেচাকেনা বাড়বে।”

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের আলিফ ফ্যাশনের বিক্রেতা নাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা অনেক ডিজাইনের পোশাক এনেছি। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের মতই বেচাকেনা হচ্ছে।”

নূর জাহান মার্কেটের জনী প্রিন্টের বিক্রেতা আব্দুল আউয়ালও আশানুরূপ ক্রেতা পাননি। তিনি বলেন, “সামনের সপ্তাহে কেনাবেচা বাড়বে। এখনও লোকজন বোনাস পায় নাই। পাইলে মার্কেট জমবে।”