ঈদে সতেজ সাজসজ্জায় হালকা রঙয়ের প্রসাধনীর খোঁজে

গরমে ভারী মেকআপ অস্বস্তির কারণ হতে পারে তাই হালকা ও সতেজ সাজসজ্জা বেছে নিতে চাইছেন তরুণীরা।

রিফাত পারভীনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2024, 09:37 AM
Updated : 29 March 2024, 09:37 AM

ঈদ উদযাপন কেবল নতুন পোশাকে নয়। দুই হাত মেহেদিতে রাঙিয়ে, পছন্দের প্রসাধনীর ব্যবহারে এবং রূপটানে নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়ে নিতে নারীদের জন্য ঈদ বিশেষ উৎসব হয়ে ধরা দেয়। আর সেই পরিকল্পনা-প্রস্তুতিও চলে আগে থেকে, যেন কোনো খামতি না থাকে।

এবার রোজার ঈদ এসেছে চৈত্রের শেষে। গরমে ভারী মেকআপ অস্বস্তির কারণ হতে পারে তাই হালকা ও সতেজ সাজসজ্জা বেছে নিতে চাইছেন তরুণীরা। কাজল, আইলাইনার আর গাঢ় রঙের বদলে পিচ, মভ, কোরাল, গোলাপির মত হালকা রঙের লিপস্টিক কিনছেন নারীরা। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চলছে আইশ্যাডো ও ব্লাশনের বিক্রিও। দেদার বিক্রি হচ্ছে কোরিয়ান ও জাপানি পণ্যের ট্রেন্ড স্কিন কেয়ার প্রসাধনী।

হাতে মেহেদির রঙও এবার খেলা করবে হালকা নকশায়। ঈদের প্রসাধনী বাজার ঘুরেও মিলেছে তেমনই আভাস।

ঈদে হাতে মেহেদি

ঈদের আনন্দের সঙ্গে মেহেদি রাঙা হাত নেই, সেটা ভাবতেই যেন অপূর্ণতায় ম্লান হয়ে আসে উৎসবের ছটা। বছরঘুরে মেহেদির নকশাতেও আসে পরিবর্তন।

অনেক আগে মেহেদি পাতাই ছিল ভরসা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন এসেছে মেহেদির নকশায়। সেই সঙ্গে মেহেদি পাওয়া যাচ্ছে টিউবে। রাঙানো যাচ্ছে হাত যেমন খুশি তেমনভাবে।

এই টিউব কিনে এসে কেউ নিজেই বাসায় বসে হাতে মেহেদি দেন, কেউবা পার্লারে যান। তবে ঢাকায় কয়েক বছর ধরে মেহেদি নকশাশিল্পীদের সংখ্যা বেড়েছে। এই শিল্পীদের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ আছে। সেই পেইজের মাধ্যমে শিল্পীদের সঙ্গে আগ্রহীরা যোগাযোগ করে সময় ঠিক করে নিচ্ছেন। এরপর মেহেদি নকশাশিল্পীরা সময়মত বাসায় গিয়ে নারীদের হাতে মেহেদি দিয়ে আসছেন।

তেমনই একজন মেহেদি নকশাশিল্পী আফসানা আফরোজ জানালেন, ঈদে নারীরা এখন আর  হাত ভরে মেহেদি দেওয়া পছন্দ করছেন না। গোল মান্ডালা, চেইন বা ঝুমকা স্টাইল তরুণীদের পছন্দে দেখা যাচ্ছে।

“আবার আঙুলের কিছুটা অংশ মেহেদিতে ঢেকে নেওয়াও এখনের ফ্যাশন। এতে হালকা নকশা করলেও হাত জুড়ে মেহেদির লাল রঙ পাওয়া যায়। এছাড়া পুরো হাতে না দিয়ে অর্ধেক হালকা আর অর্ধেক ভারী নকশাও চলছে ঈদ ট্রেন্ডে।"

বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষে হাতে মেহেদি পরলেও ঈদে মেহেদি রাঙানো হাত গৃহিনী ফারজানা আক্তারের অন্যরকম পছন্দের একটি ব্যাপার। তাই আগে থেকেই কিছু  নকশা বাছাই করে রেখেছেন তিনি।

ফারজানা বলেন, “রান্না, ঘর সাজানো ও ঈদের অন্যান্য প্রস্তুতি শেষে একটু রাতের দিকে মেহেদি পরব। একজন মেহেদি শিল্পীর থেকেও সময় নিয়ে রেখেছি।"

কিন্তু কলেজ পড়ুয়া মুনতাহা আহমেদ মেহেদি পরা শুরু করবেন চাঁদরাতের সন্ধ্যা থেকেই। তার মতে, আয়োজন করে বোন ও বান্ধবীদের নিয়ে মেহেদি পরার ব্যাপারটি ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ করে তোলে। 

ফারজানা আক্তারের মত এই তরুণীও পার্লারে গিয়ে নয়, মেহেদিশিল্পীর হাতে মেহেদি পরতে পছন্দ করেন।

মুনতাহা ঈদে কিনেছেন সালোয়ার কামিজ ও পাশ্চাত্য আউটফিট, তাই মেহেদির নকশাও হওয়া চাই পোশাকের সঙ্গে মানানসই।

“অনলাইন থেকে কিছু ডিজাইন বেছে রেখেছি। ঈদের দিনের জন্য আমার পছন্দ ফ্লোরাল, চেইন, মান্ডালা ও বক্স স্টাইলের নকশা।”

কেমন প্রসাধনী চলছে?

একসময় উৎসব আর সাধারণ সময়ের প্রসাধনীতে কোনো তফাৎ ছিল না। অর্থাৎ নারীরা লিপস্টিক, কাজল, মাসকারা, আইশ্যাডো, ফাউন্ডেশন সারা বছর যেমন কিনতেন, তেমনি ঈদেই এই প্রসাধনীগুলোই বেছে নিতে তারা।

কিন্তু সময়ের বদলে প্রসাধনীর তালিকায় এসেছে দারুণ পরিবর্তন। এখন স্কিন কেয়ার প্রসাধনীর ব্যবহার ও বিক্রি বেড়েছে। প্রসাধনীর বাজারও হয়েছে বিস্তৃত।

রাজধানীর প্রসাধনী বিক্রেতারা জানান, কয়েক বছরে এই বাজার কয়েকগুণ বড় হয়েছে। এক সময় রাজধানীর  চকবাজারকে প্রসাধনীর একমাত্র বাজার মনে করা হলেও, এখন বড় বড় শপিং মল, বিপণীবিতানেও দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর দোকান দেখা যায়। এসব দোকানে দেশি প্রসাধনীর পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্যের কোনো কমতি নেই।

টোকিও স্কয়ারের দোকানী আব্দুল মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ৫/৬ বছরে প্রসাধনীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে ও বাজার বড় হয়েছে। বেচাবিক্রিও চলে সারা বছর জুড়েই কিন্তু ঈদের সময় প্রসাধনী বিক্রি বাড়ে ৩০ শতাংশের মতো। আবার আসল মেকআপ আমদানি হওয়ায় ভুয়া ও নকল মেকআপ বিক্রি কমেছে। তাই ক্রেতারা ভরসার সঙ্গে প্রসাধনী কিনছেন।”

সীমান্ত স্কয়ারের নতুন ও পুরনো ভবনে পোশাকের দোকানের থাকে প্রসাধনীর দোকানই বেশি নজরে পড়বে। এই শপিং সেন্টারের একটি প্রসাধনী দোকানের বিক্রেতা তাহমিনা হক বললেন, ঈদে তরুণীদের প্রসাধনী কেনাকাটা শুধু কাজল, আইলাইনার আর লিপস্টিকে আটকে নেই।

তিনি বলেন, “এ সময়ে মেকআপ প্রসাধনীর পাশাপাশি একটি বড় অংশ বিক্রি হয় স্কিন কেয়ার প্রসাধনী। দেশিয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড ছাড়াও মেকআপ ও স্কিন কেয়ার প্রসাধনীতে কোরিয়ান ও জাপানি পণ্যের ট্রেন্ড চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ঈদ উপলক্ষে আমদানি করা নতুন ও আসল পণ্য পাচ্ছেন বলে ক্রেতারাও কেনাকাটা করছেন বেশি।”

তাহমিনা হক বলেন, "ক্রেতারা হালকা শেডের মেকআপ বেশি কিনছেন। পিচ, মভ, কোরাল, গোলাপির মত হালকা রঙের লিপস্টিক, আইশ্যাডো ও ব্লাশনের বেশি চাহিদা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে লাইট ফিনিশিং ফাউন্ডেশন, কনসিলার, বিবি ক্রিম, প্রাইমারেরও বিক্রি বেড়েছে। ওয়াটার প্রুফ বা ম্যাট কাজল, মাসকারার ট্রেন্ড চলছে এখন।"

মেকআপ তোলার জন্য মেকআপ রিমুভার, ফেসিয়াল ওয়েলও দেদার বিক্রি হচ্ছে বলে তাহমিনা হক জানান।

তিনি বলেন, “কোরীয় ট্রেন্ড অনুসরণ করে গ্লোসি ত্বকের জন্য অনলাইনগুলোতে মাল্টি কোলাজেন স্টিক (ফেসিয়াল ভ্যাসলিন) অনেক বেশি ট্রেন্ডি।"

আর স্কিন কেয়ার প্রসাধনীর মধ্যে শিট মাস্ক, মিস্ট, ম্যাড মাস্ক, সুদিং জেল, সিরাম, ওয়াইটনিং ক্রিম, এন্টি রিংক্যাল ক্রিম, নাইট ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদির বিক্রি ঈদের আগে বেড়েছে। এছাড়া ফেস ওয়াশ, ফেস প্যাক, টোনার, সানস্ত্রিন বিক্রি হচ্ছে।

বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের একটি প্রসাধনীর দোকানে কেনাকাটা করতে আসা সুলতানা আহমেদ বললেন তিনি ঈদের সময়ে পোশাকের আগে প্রসাধনী কেনেন ।

এই তরুণী বলেন, “ঈদে মিনিমাল মেকআপ ট্রেন্ড চলছে। তাই ভারী মেকআপ ব্যবহার করব না। ম্যাট ফিনিশিং হালকা রঙের লিপস্টিক, ফাউন্ডেশন ও প্রাইমার কিনেছি ঈদের জন্য। এছাড়া ঈদের আগেই ত্বকের যত্নের জন্য সুদিং জেল, শিট মাস্ক ও নাইট ক্রিম কিনেছি।”

'নো মেকআপ-মেকআপ' লুক

শুরুতেই বলা হয়েছে, গরমের কারণে এবার ঈদে হালকা সাজের দিকে ঝুঁকছেন তরুণীরা। আর এমন সাজের একটি উপায় হতে পারে 'নো মেকআপ-মেকআপ' লুক।

রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচির ভলছেন, এটা এমন যে মেকআপ করার পরেও মনে হবে ত্বকে তেমন মেকআপ করা হয়নি। এই লুককেই বলে নো মেকআপ-মেকআপ লুক।

“কয়েক বছর ধরে ভারী মেকআপের বদলে ত্বকের রঙ ঠিক রেখে সাজগোজ করছেন নারীরা। তরুণীরা ছাড়াও চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া নারীরাও এখন 'নো মেকআপ-মেকআপ' লুকের একই ধারায় মজেছেন। এই মেকআপে ম্যাট ফিনিশিং, মিনিমাল মেকআপ ও হালকা শেডের প্রাধান্য থাকে।”