‘অর্থাভাব’: উড়বে না ইউনাইটেডের বিমান

চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগের এক দিনের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা এল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2014, 02:07 PM
Updated : 24 Sept 2014, 06:05 PM

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে অর্থের অভাবকে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের বেসরকারি এই বিমান সংস্থাটির কর্মীরা।

অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চালিয়ে আসছিল সাত বছর আগে যাত্রা শুরু করা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, যাদের যাত্রীসেবার মান নিয়ে বরাবরই অভিযোগ ছিল।    

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী মঙ্গলবার পদত্যাগ করলে নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ মাহাতাবুর রহমানকে।

এর একদিনের মধ্যে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে ফ্লাইট বন্ধ করার ঘোষণা দিল বিমান সংস্থাটির কর্মীরা।

কর্মচারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন এম ইলিয়াস বলেন, “ফ্লাইট পরিচালনা করতে যে খরচ হয় এই মুহূর্তে সেই খরচ নির্বাহের অর্থ ইউনাইটেডের নেই। এই অবস্থায় ফ্লাইট পরিচালনা করা  সম্ভব নয়।”

সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক (ডিরেক্টর কাস্টমার)ফরহাদ হোসেন, ক্যাপ্টেন ওয়াহিদ, পরিচালক (প্রশাসন)  ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার তিনটি আন্তর্জাতিক রুট দোহা, মাস্কাট এবং কুয়ালালামপুরে ইউনাইটেডের নির্ধারিত ফ্লাইটও ঢাকা থেকে ওড়েনি।

ইলিয়াসের বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ‘কর্তৃপক্ষহীন’ অবস্থায় রয়েছে।

“প্রতিষ্ঠানের নতুন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে এখনো আমাদের কারো যোগাযোগ হয়নি। আমরা জানি, এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্তৃপক্ষই নেই।”

“ফ্লাইট চালাতে প্রতিদিন ফুয়েল খরচ লাগে, কেটারিং খরচ লাগে। আমরা জানি না, এই টাকা আগামীকাল কোথা থেকে আসবে। টাকার সংস্থান না হলে আগামীকাল থেকে কোনো ফ্ল্যাইট চলবে না। ম্যানেজমেন্ট সাহায্য না করলে সম্ভব না।”

যারা অগ্রিম টিকেট কিনেছেন, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে ইলিয়াস বলেন, “নিয়মমাফিক টাকা ফেরত দেওয়ার কথা, সেটা ম্যানেজমেন্ট করবে। কিন্তু তাদের তো দেখছি না।“

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় এক হাজার কর্মচারীর ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তায় রয়েছে বলে পরিচালক ইলিয়াস জানান।

এই বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সমস্যাটি মূলত ইউনাইটেডের কর্মী ও ম্যানেজমেন্টের সমস্যা। আমরা তাদের বলেছি, তারা চাইলে ফ্লাইট চালাতে পারে।”

তাসবিরুল আহমেদের পদত্যাগের পর ইউনাইটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান শাহিনুর আলম।

অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ফেরদৌস ইমামকে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনিও পদত্যাগ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০০৫ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে বিমান পরিচালনা করার লাইসেন্স দেয়। তার দুই বছর পর যাত্রী পরিবহন শুরু করে তারা।

বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কয়েক দফা সময় বেঁধে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে। তারপরও তা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলেরও হুমকি দেয়া হয়।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেডের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মোট পাওনার পরিমাণ ৮৪ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার ডিএসইর ওয়েবসাইটে এক নোটিসে জানানো হয়, গত অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদ।

ইলিয়াস বলেন, “কোম্পানি আইন অনুযায়ী আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জানাচ্ছি। তাছাড়া পাবলিক লিমিটেড এই প্রতিষ্ঠানটিতে কী হচ্ছে, সেটা শেয়ারহোল্ডারদেরও জানা উচিত।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোম্পানি আইনে এর সমাধান রয়েছে। কোম্পানি আইন অনুযায়ী দক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পাওয়ার আশা করছি। এমনকি পদত্যাগী চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন তাসবিরকে ফিরিয়ে এনেও পরিস্থিতি সামলানো যেতে পারে।”

সরকারের হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন কি না- জানতে চাইালে ইলিয়াস সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, কোম্পানি আইনেই এ ব্যাপারে বলা আছে।

টাকার সংস্থান হলে ফ্লাইট চালানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা চাই দক্ষ, শক্ত ম্যানেজমেন্ট।”

ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুট জেদ্দা, দুবাই, মাস্কাট, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, কলকাতা এবং চট্টগ্রাম থেকে মাস্কাট ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল ইউনাইটেড এয়ার।

অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী ও বরিশালে চলছিল ইউনাইটেডের ফ্লাইট।

ইউনাইটেডের বহরে রয়েছে একটি ড্যাশ-৮, তিনটি এটিআর-৭২, পাঁচটি এমডি-৮৩ এবং দুটি এয়ারবাস-৩১০সহ মোট ১১টি উড়োজাহাজ।