বিমান ভাড়া কমিয়েছে, কিন্তু টিকেটই মিলছে না

মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটি রুটে ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে বিমানের বিক্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে জানানো হচ্ছে, মার্চ মাস পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের এসব রুটের টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

গোলাম মর্তুজা অন্তু জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2022, 07:00 PM
Updated : 5 Jan 2022, 07:00 PM

মহামারীর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটের উড়োজাহাজের ভাড়া বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণও ছাড়িয়েছিল। তা দেশে ফেরা মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী শ্রমিকদের উপর বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে মঙ্গলবার নিজেদের সুবর্ণ জয়ন্তীতে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের জন্য ভাড়া কমানোর ঘোষণা দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম, দুবাই ও আবুধাবি রুটে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে নতুন টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত সর্বোচ্চ ভাড়ার স্তর কার্যকর হবে।”

একদিন পর বুধবার বিমানের বলাকা ভবন, মতিঝিল ও ফার্মগেইটের তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে ফেব্রুয়ারি মাসেরও কোনো টিকেট পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের সংগঠন আটাব’র সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তো সব ফ্লাইট ক্লোজড, টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা তো বিমানের টিকেট বিক্রির জন্য জিডিএসে (গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) ঢুকতেই পারছি না।

“বিমানের ভাড়া কমানোর এই ঘোষণা মিডিয়ায় দেখেছি শুধু। কিন্তু জিডিএস-এও বিমানের ভাড়া কমানোর বিষয়ে কোনো ঘোষণা নেই। এটা মনে হচ্ছে, মুখে মুখে ঘোষণা।”

এনিয়ে প্রশ্ন করলে বিমানের মুখপাত্র উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানের ভাড়া কমানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, ১৬ জানুয়ারি থেকে এবং আসন খালি থাকা সাপেক্ষে নতুন কমানো ভাড়ায় টিকিট পাওয়া যাবে। এ বিষয়টি ঠিক হতে আরও কিছুদিন সময় লেগে যাবে। পরবর্তীতে যারা টিকিট কিনবে তারা কমানো ভাড়াতেই কিনতে পারবেন।”

তবে বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশিরভাগ টিকেট আগে বিক্রি হয়েছে, এটা সত্য। তবে কেউ যদি বুকিং বাতিল করেন বা টিকিট ক্যানসেল করে, সেক্ষেত্রে প্রবাসী ভাইয়েরা হ্রাসকৃত মূল্যে টিকেট কিনতে পারবেন।”

তাছাড়া এই ঘোষণা অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর টিকেটের দাম কমানোর ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে আশা ছিল বিমান কর্মকর্তাদের, তবে তেমন কোনো নজির দেখা যায়নি এখনও।

বিমানের প্রতি সপ্তাহে আবুধাবীতে চারটি ফ্লাইট, দুবাইতে সাতটি, দাম্মামে পাঁচটি, জেদ্দায় সাতটি ও রিয়াদের ছয়টি ফ্লাইট রয়েছে। 

এর মধ্যে ঢাকা-জেদ্দা রুটে ইকোনমি ক্লাসের প্রতিটি টিকেটের একমুখী সর্বোচ্চ ভাড়া ৭২ হাজার ৪৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৪ হাজার ৮২০ টাকা (ট্যাক্সসহ) নির্ধারণ করেছে বিমান। ঢাকা-রিয়াদ/দাম্মাম রুটে ৭০ হাজার ৭৫৮ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬৩ হাজার ১২৩ টাকা।

ঢাকা-দুবাই রুটের বর্তমান ভাড়া ৭৫ হাজার ৫০৮ টাকা। তা কমিয়ে ট্যাক্সসহ ৬২ হাজার ৭৮৪ টাকা করা হয়েছে। আর ঢাকা-আবুধাবী রুটের ভাড়া ৬৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ট্যাক্সসহ ৫৮ হাজার ৫৪২ টাকা করা হয়েছে।      

যে ‘রেমিটেন্স যোদ্ধাদের’ জন্য ভাড়া কমানোর ঘোষণা বিমান দিয়েছে, তা্ ‘যথোপযুক্ত’ নয় বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের কর্মকর্তা শরিফুল হাসান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমান আমাদের এই শ্রমিকদের জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে পারেনি। ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, সেটিও যথাসময়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত হল না। সব টিকিট তো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

“প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উপলক্ষে বিমানের উচিৎ ছিল ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়ে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা। সিভিল এভিয়েশনও অন্য ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারে।”

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গত ডিসেম্বর মাসে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মী বিদেশে গেছে। এ সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার। নভেম্বর মাসে বিদেশে গেছে ১ লাখ ২ হাজার প্রবাসী শ্রমিক। এর ৭৪ শতাংশ গিয়েছেন সৌদি আরবে।

“এই শ্রমিকদের বাড়তি ভাড়ায় টিকিট কাটতে হয়েছে,” বলেন তিনি।