এক মাসের আয়ে রেকর্ডের পাশাপাশি ২০২১ খ্রিস্টীয় বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার (মোট ৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলার বা ৩৯ দশমিক ১৪ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছে বলে তথ্য দিচ্ছে রোববার প্রকাশিত ইপিবির সবশেষ পরিসংখ্যান।
অতীতে এক পঞ্জিকা বছরের হিসাবে এত পণ্য কখনও রপ্তানি হয়নি বলে জানাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যও বলছে তা।
কোভিড শুরুর বছরে ২০২০ সালে তিন হাজার ৩৬০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের (৩৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় এবার রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাকের ওপর ভর করেই ডিসেম্বরে একক মাসে রেকর্ড ৪৯০ কোটি ডলারের বেশি। শুধু পোশাক থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪০৪ কোটি ডলার।
এ দুই মাইলফলকের পাশাপাশি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসের সার্বিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে জানাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলছেন, গেল ডিসেম্বরে একক মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এত বেশি আয় আসেনি।
এসব রেকর্ডকে পোশাক শিল্পসহ সামগ্রিক রপ্তানির শক্তিশালী অবস্থানের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বরে অনেকগুলো রেকর্ডের দেখা পেয়েছে সার্বিক রপ্তানি খাত। সেই সমান্তরালে পোশাক খাতেও অনেকগুলো রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
“এটা আমাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির ফলে হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।“
কোভিড মহামারীর জড়তা কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে রপ্তানি খাতের নতুন এসব রেকর্ডের খবর আসছে মূলত ডিসেম্বরের ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে।
অপরদিকে ঠিক এক বছর আগের ডিসেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৩৩০ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পণ্য। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে সামগ্রিক রপ্তানিতে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
এ সময়ে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যা ছিল এক হাজার ৯২৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
অথচ চলতি অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল হতাশার মধ্য দিয়ে। প্রথম মাস জুলাই শেষে রপ্তানি ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ছিল। পরের মাসেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মেলে। অগাস্টে একক মাসে ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
এরপর থেকেই রপ্তানির পালে লাগে জোরালো হাওয়া। সেপ্টেম্বরে একক মাসে ৩৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ বাড়লে সার্বিক রপ্তানি ইতিবাচক হয়, প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেও এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
আর পরের মাস অক্টোবরে আগের রেকর্ড ভেঙ্গে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসে; মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলারের; প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছিল ৬০ শতাংশের বেশি।
এক মাসের রপ্তানি আয়ের হিসাবে রেকর্ড গড়া সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের পর নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয় ৪০৪ কোটি ডলারের।
পোশাক খাতেও রেকর্ড
বিভিন্ন পণ্যের খাতভিত্তিক আয়েরভিত্তিতেই সামগ্রিক রপ্তানিতে মাইলফলকের দেখা মিলেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানিতেও একক মাস হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতেও রেকর্ড হয়েছে। পোশাক রপ্তানির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতেও রয়েছে রেকর্ড। আসলে সামগ্রিক রপ্তানি আর পোশাক রপ্তানি একই সূত্রে গাঁথা।
ইপিবির হিসাবে ডিসেম্বরে নিট ও উভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪০৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার সমমূল্যে। এতে এই খাতে ছয় মাসের সার্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ। নিটে ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং উভেনে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রপ্তানিতে এসব সুখবরের পাশাপাশি পোশাকখাতের অংশীদারিত্বও কমার তথ্য মিলেছে। ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক রপ্তানিতে ৮০ শতাংশ অংশীদারিত্ব পেয়েছে পোশাক খাত। সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৮২ দশমিক ১৯ শতাংশ, অক্টোবরে ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং নভেম্বরে ৮০ শতাংশের কিছুটা বেশি।
দীর্ঘদিন থেকে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা রপ্তানিতে পোশাকের আধিপত্য কমানোর কথা বলছেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এটাও সামগ্রিক রপ্তানিখাতের জন্য একটি সুখবর। একদিকে পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে, অন্যদিকে সামগ্রিক রপ্তানিতে পোশাকের প্রভাব কমছে। এর অর্থ হচ্ছে রপ্তানির তালিকায় নতুন নতুন পণ্য শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা যে পণ্য বৈচিত্র্যের কথা বলছি এটাই হচ্ছে সেই বৈচিত্র্য।
এমন রেকর্ডময় রপ্তানিতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি দেখা গেছে পাট ও পাটজাতপণ্যে। এ খাতে ১১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ছয় মাসে ৫৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এছাড়া ছয় মাসের হিসাবে ৬৫ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য (প্রবৃদ্ধি ২৪ শতাংশ), ৫৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য (২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) রপ্তানি হয়েছে।