কোভিড মহামারীর জড়তা কাটিয়ে একক মাসে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয় দেশে এসেছে; এতে ক্রমে অর্থবছরের শুরুর দিকের খারাপ অবস্থা কাটিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠছে রপ্তানি খাত।
Published : 02 Nov 2021, 05:17 PM
সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এক মাসে এত বেশি রপ্তানি আয় আর কখনও দেশে আসেনি, যাকে একক মাসে রেকর্ড আয় বলছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানির এই খবর শুনে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড। পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে সার্বিক রপ্তানির চিত্রটি দাঁড়িয়েছে।
“পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজার চাঙ্গা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশে পোশাকের অর্ডারও অনেক বেড়েছে। আগামী কয়েক মাস পোশাকের রপ্তানি চিত্র ভালো থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।“
ইপিবির তথ্য বলছে, সবশেষ মাস অক্টোবরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে অনেক বেশি, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।
এর আগের মাস সেপ্টেম্বরেও একক মাসে রেকর্ড পরিমাণ ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৮ শতাংশ।
মঙ্গলবার ইপিবি থেকে প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে আয় এসেছিল ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে রপ্তানি আয়ে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই চার মাসে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ পিছিয়ে ছিল। অগাস্টে একক মাস হিসেবে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হলেও সার্বিক রপ্তানি নেতিবাচক ধারা থেকে বের হতে পারেনি।
এরপর সেপ্টেম্বরের প্রবৃদ্ধিতে ভর করে তিন মাসের সার্বিক রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বাড়ে। আর অক্টোবরে সার্বিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে সম্প্রতি সুতার মূল্য বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইয়ার্নের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এর সঙ্গে সমন্বয় করতে হলে পোশাকের মূল্যও অন্তত ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কথা। সেই পরিমাণ না বাড়লেও কিছুটা বেড়েছে।
চীন ও ভিয়েতনাম ‘কিছু বিপদের’ মধ্যে আছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সেখান থেকে কিছু অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হতে শুরু করেছে। সরকার চাইলে যথাযথ নীতি সহায়তা দিয়ে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি পরিস্থিতির স্থানীয় উন্নতি ঘটতে পারে।
একক খাত হিসেবে এই চার মাসে পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ২৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার; এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। এর মধ্যে নিট খাতে রপ্তানি হয়েছে ৭২১ কোটি ডলার যাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
একক মাস হিসেবে অক্টোবরে নিট খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ২০৪ কোটি ডলার, আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ শতাংশ।
অর্থবছরের চার মাসে ওভেন খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৫৪১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশ। একক মাস হিসেবে অক্টোবরে ওভেন খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ১৫১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জানান, পোশাক খাতের এমন প্রবৃদ্ধি আগে থেকেই অনুমেয় ছিল। তবে ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানি বাড়লেও তা খুব ভালো ফল দেবে না।
গত কয়েক বছরে ধরে নিট পোশাকে কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও ওভেন খাতে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি কমে যাচ্ছিল। বিশ্বব্যাপী মানুষের পোশাক পরিধানের রুচিতে পরিবর্তন এবং নিট পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং মহামারীর কারণে হোম অফিস চালুর বিষয়টি এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে রপ্তানিকারকরা তখন জানিয়েছিলেন।
তবে শহিদুল্লাহ আজিম মনে করেন, ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে লকডাউনের কারণে এসব দেশের কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ায় দেশে ওভেন পণ্য রপ্তানির আয় বেড়েছে।
তবে এই ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পেছনেও নানা রকম চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন বিজিএমইএর এই নেতা।
“ওভেন পণ্যের ৬০ শতাংশ কাপড় আসছে চীন থেকে। সেই দেশে এখন ওভেন ফেব্রিক্স উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিলে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা মুশকিল হবে। তাই দেশেই ওভেন ফেব্রিক্স তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে,” বলেন তিনি।
খাতভিত্তিক রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ দেখা যায়, শক্ত অবস্থানসহ ঘুরে দাঁড়ানো তৈরি পোশাক খাত, হোম টেক্সটাইল এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৬ কোটি ডলারের, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ শতাংশ। একক মাস হিসেবে অক্টোবরে এ খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ডলার।
অক্টোবরে ১২ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হলেও এ খাতের সার্বিক রপ্তানি ২৪ শতাংশ পিছিয়ে আছে। আগের মাসে পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সেই পিছিয়ে পড়ার হার কিছুটা ঘুচিয়েছে এ খাত। গত চার মাসে সর্বমোট ৩৩ কোটি ডলার সমমূল্যের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
আরও পড়ুন: