পেঁয়াজের দামে ‘কারসাজি’ নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতির ক্ষোভ

শুল্ক কমানোর একদিন পরই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা কীভাবে কমে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2021, 12:01 PM
Updated : 17 Oct 2021, 12:26 PM

রোববার রাজধানী ঢাকার পাইকারি ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতা।

তার মতে গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ছিল ‘সিন্ডিকেট’। তা না হলে সরকার শুল্ক তুলে নেওয়ার এক দিন পরেই এত দাম কমতে পারে না। মতবিনিময়কালে তার এমন প্রশ্নের সুদত্তর দিতে পারেননি আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে এফবিসিআই।

রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকন টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় শ্যামবাজার, নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার ও মহাখালীসহ রাজধানীর পাইকারি ও আড়তদার ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়ে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন।

সভায় জসিম উদ্দিন বলেন, “পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করেছে। না হলে, সরকার শুল্ক মওকুফ করে পরিপত্র জারির একদিন পরই দাম ১৫ টাকা কমে যাবে কেন?

“মাত্র একদিনে কোনো পণ্যের দাম কেজিতে ১৫ টাকা কমে কি? কমে না। এর মানে দাঁড়ায়, দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি ছিল, সিন্ডিকেট ছিল।“

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন

তিনি বলেন, “গত প্রায় ২০ দিন আগে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম  বাড়া শুরু হয়। ৫০ টাকার পেঁয়াজ ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু দুই দিন আগে যখন সরকার আমদানি শুল্ক ছাড় দিয়ে পরিপত্র জারি করল তার একদিন পরেই পেঁয়াজের দাম ১৫ টাকা কমে গেল।”

ব্যবসায়ীরা সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা করবেন, লাভ করবেন উল্লেখ করে তিনি অনুযোগের সুরে বলেন, “কিন্তু সুযোগ পাইলেই জনগণের সঙ্গে মুনাফেকি করবেন না।“

কোনও কারসাজিকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেন তিনি।

এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি নিত্যপণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবছর পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩৩ লাখ টন। আর দেশের মোট চাহিদা ২৫ লাখ টন।

“তাহলে বাকি পেঁয়াজ গেল কোথায়?”

সঠিক পরিসংখ্যানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সভায় শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. শামসুল আলম বলেন, “আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ উৎপাদন হলেও ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সেটার প্রায় শতভাগই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু গত এক মাস ধরে ভারতে অতিবৃষ্টিতে বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরুতে পেঁয়াজের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।“

এমন দাবির প্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আমাদের স্টকে পেঁয়াজ ছিল। সেই স্টকের মালই আপনারা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেছেন।“ 

এসময় শুল্ক ছাড়ের ঘোষণার মাত্র এক দিনের মধ্যে দাম কমার বিষয়ে জানতে চাইলে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সদুত্তর দিতে পারেননি।

নিউমার্কেট কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ বলেন, “সরকার কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের জন্য বিদ্যুতের মিটার না দেওয়ায় ‘সাব ভাড়ায়’ তাদের প্রতি ইউনিটের বিল দিতে হয় ১৭ টাকা।

“এছাড়া ‘অনেক রকমের’ টাকা দিতে হয় তাদের। তাই ব্যবসায়ীরা বেশি খরচের কারণে বেশি লাভ করতে চায়।“

এসময় দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “রাজধানীর কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের ডেসকো, ডিপিডিসি কেউ মিটার দেয় না। তাই তারা বাধ্য হয়ে আরেকজনের মিটার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে বিদ্যুৎ নিতে হয়। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যায়।“

মহাখালী ব্যবসায়ী সমিতির এক প্রতিনিধি বৈঠকে বলেন, ৫০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্স এখন ৩ হাজার টাকা নিচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যুতসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা অতিরিক্ত দামে নিতে হয় বলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়েছে।

এমন দাবির জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “ব্যবসায়ীদের অনেক ধরনের সমস্যা আছে। সেগুলো আমাদের কাছে এসে বলুন। আমরা সরকারের সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করব।“

মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন ও এম এ মুমেনসহ আরও অনেকে অংশ নেন।