দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর পরবর্তী মুনাফা কমেছে রবির

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর রবি চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪৭ কোটি টাকা কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) করেছে, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2021, 12:01 PM
Updated : 28 July 2021, 12:01 PM

২০২০ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে রবির কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) ছিল ৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ বছর জানুয়ারি-মার্চ সময়ে তা কমে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা করপরবর্তী মুনাফা (পিএটি) হয়। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় কর পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে রবির।

ছয় মাসের হিসাবে, অর্থাৎ জানুয়ারি-জুন সময়ে রবি শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ১৫ পয়সা। আগের বছর এই সময় তাদের শেয়ার প্রতি মুনাফা ১৬ পয়সা ছিল।

বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রবির দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করে বলা হয়, স্থিতিশীল ঊর্ধ্বগামী রাজস্ব এবং দক্ষ ব্যয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের পিএটি পৌঁছেছে ৮১ কোটি টাকায়, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি।

এ বছর এপ্রিল-জুন সময়ে রবির ফোরজি গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি ডেটা সেবা থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডেটা সেবায় রাজস্ব আয় গত প্রান্তিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।  

এপ্রিল-জুন সময়ে রবির ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০২০ সালের একই প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।

রবির ৫ কোটি ১৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ২ কোটি গ্রাহক ফোরজি সেবার আওতায় এসেছেন। মোট গ্রাহকের মধ্যে ৭২ দশমিক ৪ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গ্রাহক প্রতি মাসিক ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯ গিগাবাইটে।

এক নজরে রবির দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন)

>> সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ১৮ লাখ, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ

>> ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৭৫ লাখ, যা মোট গ্রাহকের ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ

>> মোট রাজস্ব আয় ২ হাজার ৩১ কোটি টাকা

>> ৪২ দশমিক ১ শতাংশ মার্জিনসহ ইবিআইটিডিএ ৮৫৪ কোটি টাকা

>> মূলধনী বিনিয়োগ ৫৮৪ কোটি টাকা

>> কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) ৪৭ কোটি টাকা

>> রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা ১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা, যা চলতি প্রান্তিকে রবির অর্জিত রাজস্ব আয়ের ৫৬ শতাংশ

রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩ তে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা গর্বিত, যা কোভিড হেল্পলাইন হিসাবে নাগরিকদের সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

“এছাড়া ৩৩৩ এর মাধ্যমে নাগরিকদের দ্বারপ্রান্তে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। রবির টেন মিনিট স্কুলের মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন সকল বয়সের ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে মানসম্পন্ন শিক্ষা কন্টেন্ট সরবরাহ করছি।”

তবে এসএমপি (সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার) নিয়ন্ত্রণে ‘ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের অভাব’ রয়েছে মন্তব্য করে মাহতাব বলেন, “সামগ্রিক প্রতিযোগিতামূলক ত্রুটিগুলো বাজারকে ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিযোগিতার এমন ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট অপারেটরদের জন্য।

“ত্রুটিপূর্ণ মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবং বিতরণ ব্যবস্থা গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে এবং একইসাথে টেলিকম শিল্পকে দুর্বল করে ফেলছে যা ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

মাহতাব বলেন, “আমাদের বাজারে উল্লেখযোগ্য একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে, যার কারণে প্রতিযোগীরা উদ্ভাবনী ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অথচ দেশের ভবিষ্যতের জন্য এ খাতে বিনিয়োগ জরুরি। “

বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, “এ বিষয়গুলো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপ প্রকাশ করে, কোনো কোম্পানি তাদের সাথে নিবন্ধিত থাকলে তারা এগিয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বাংলাদেশে তরঙ্গ স্বল্পতা ও টাওয়ারগুলোতে সরাসরি ফাইবার অপটিক সংযোগের স্বল্পতা রয়েছে।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২০ সালের একই প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে রবির গ্রাহক সংখ্যা ৮ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রাহক সংখ্যা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে গেছে।

ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি ৫৮৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ প্রান্তিক শেষে রবির ফোরজি সাইট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৪৫টি।