কোরবানি: চামড়ায় লবণ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেওয়ার পরামর্শ

কোরবানির ঈদের সময় পশুর চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঝামেলা কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে প্রত্যেকের বাড়িতেই কিছুটা লবণ ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2021, 02:16 PM
Updated : 19 July 2021, 07:44 PM

এতে চামড়া নষ্ট হওয়ার হাত থেকে যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কম দামে চামড়া বিক্রির সমস্যাও কমে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

বুধবার বাংলাদেশে পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পরের দুদিনও কিছু কিছু পশু কোরবানি হবে।

বাংলাদেশে চামড়ার বার্ষিক চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটে কোরবানির পশু থেকে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবারই কিছু চামড়া নষ্ট হয়।

সম্প্রতি কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন ব্যক্তি উদ্যোগে চামড়ায় লবণ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোরবানির প্রকৃত অর্থের সঙ্গে গরিবের হক চামড়াটির সঠিক সংরক্ষণের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। এটা একদিকে যেমন গরিব মানুষ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অধিকার, অন্যদিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, অন্যতম রপ্তনি পণ্য। তাই চামড়া সংরক্ষণের দায়িত্বটি কেবল আড়ৎদার, ফড়িয়াদের উপর না চাপিয়ে সবাই তা পালন করতে হবে।

“কোরবানির আগে যেভাবে হোগলা কেনা হয়, কসাই ভাড়া করা হয়, একইভাবে কোরবানিদাতারা চামড়াটি সংরক্ষণের জন্য ৫/৭ কেজি মোটা লবণ কিনে নেবেন। মসজিদ-মাদ্রাসায় কিংবা অন্য কোনোখানে চামড়া দান করার আগে লবণ দিয়ে রাখলে তাতে ৬০/৭০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে না। কিন্তু এই ছোট্ট কাজটির ফলাফল অনেক ব্যাপক।”

দেশের চামড়ার চাহিদা প্রায় পুরোটাই পূরণ হয় কোরবানির পশু থেকে। ফাইল ছবি

কোরবানির দিন বিকাল থেকে চামড়ার মান খারাপ হতে থাকে। ফলে রাত যত গভীর হয়, চামড়ার দাম ও মান ততই কমতে থাকে। গত বছর চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে কয়েক ট্রাক চামড়া বিক্রি না হওয়ার কারণে রাস্তায় ফেলে দিতে হয়েছিল।

গরমের মওসুমে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বিবেচনায় চামড়ার সঠিক মান ধরে রাখতে কোরবানির চার ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোরবানির দিন চামড়া সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস মতে কোরবানির আগে পরে তিন-চার দিন আর্দ্রতা থাকবে ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ। তাপমাত্রা থাকবে ৩২ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় চামড়া সংরক্ষণ করা চ্যালেঞ্জিং হবে।

“যেহেতু মাত্র ৮২ হাজার টন লবণ লাগবে। এই লবণগুলো মসজিদগুলোতে বণ্টন করতে সরকারের মাত্র ৯ কোটি টাকা লাগবে। এটা করা গেলে চামড়া সংরক্ষণটা খুব কার্যকর হবে।”

কোরবানির পশুর চামড়া সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিতে থাকেন। তার সেটা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা আড়তে সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করে ট্যানারিতে।

চামড়া বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৬০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫/৬ কেজি লবণই যথেষ্ট। পরের দিন আরও ২/১ কেজি লবণ দেওয়া যেতে পারে। এতে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু চামড়ার মান অক্ষুণ্ন থাকবে, ভালো দাম পাওয়া যাবে।

ভালো দাম পাওয়ার জন্য কোরবানির পর পশুর চামড়া আলাদা করার সময় সতর্কতা অবলম্বনের উপরও জোর দেন তিনি।

আফতাব বলেন, চামড়ার ভেতরে কাটাছেঁড়া হয়ে গেলে সেই চামড়া কাজে আসে না এবং দাম কমে যায়।

সে কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও মওসুমি ফড়িয়াদের চামড়ার গুণাগুণ দেখে কেনার পরামর্শ দেন তিনি।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানিতে এক কোটি ১৮ লাখ পশু কোরবানির যোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ এবং ছাগল ভেড়া ৭২ লাখ।

এই সংক্রান্ত খবর