ভারত থেকে প্রথমবার ট্রেনে চাল আমদানি

দেশের চাহিদা পূরণ ও সরকারি মজুদ বাড়াতে ভারত থেকে প্রথমবারের মতো ট্রেনে করে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2021, 10:48 AM
Updated : 5 May 2021, 11:15 AM

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ৩২ টাকা ৭৩ পয়সা কেজি দরে ভারতের সৌভিক এক্সপোর্ট লিমিটেড থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার জানান, রেলপথে ভারতের কলকাতা ও ছত্তিশগড় থেকে ট্রেনে বোঝাই করে বেনাপোল ও দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে এই চাল প্রবেশ করবে। রেলপথে এটিই চালের প্রথম চালান হবে।

এর আগে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে কয়েক দফায় চাল আমদানির বিভিন্ন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

দেশে মজুদ কমে যাওয়ায় ভারতের পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকেও সরকারিভাবে এবং বেসরকারি আমদানিকারকদেরও চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চলমান বোরো মৌসুমে মিলারদের কাছ থেকে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তাদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা দরে চাল কেনা হবে। সেই হিসাবে বুধবার অনুমোদন দেওয়ার আমদানির এই চালানে কেজিতে দর কম পড়ছে ৭ টাকা ২৭ পয়সা।

করোনাভাইরাস মহামারীতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিতরণ বাড়লেও সেই অনুযায়ী সরকার চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। গত আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগও পূরণ হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন পর মজুদ বাড়াতে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বৈদেশিক সংগ্রহ) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিদেশ থেকে প্রায় ১৩ লাখ টন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া সাড়ে ১০ লাখ টনে মধ্যে প্রায় চার লাখ টন চাল দেশে এসেছে।

রাজনৈতিক সঙ্কটে থাকা মিয়ানমার থেকেও একলাখ টন চাল আমদানির এলসি খুলেছিল সরকার। দেশটিতে সেনা শাসন ফিরে আসায় সেই কার্যাদেশ নিয়ে দেখা দিয়েছিল শঙ্কা।

মাহবুবুর রহমান জানান, মিয়ানমার থেকে চাল কেনার আদেশ সক্রিয় আছে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে কিছু চাল দেশে এসেছে।

বুধবার চালসহ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মোট ১৪টি প্রস্তাব উপস্থাপনা হলেও অনুমোদন পেয়েছে আটটি।

এর মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির কাছ থেকে উন্মুক্ত দরে এলএনজির ১৩তম ও ১৪তম চালান কেনার দরপ্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

১৩তম চালানে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা হচ্ছে ৩১৮ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪৩ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়ছে ৯ দশমিক ৫৩ ডলার।

১৪তম চালানে একই পরিমাণ এলএনজির ইউনিট মূল্য পড়ছে ৮ দশমিক ৯৩ ডলার।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএডিসির প্রস্তাবে বেলারুশের বেলারুশিয়ান পটাশ কোম্পানির কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টন এমওপি সার কেনার অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

প্রতি টন ২৯২ দশমিক ৮৭ ডলার হিসাবে এতে মোট খরচ হবে ৪৪৭ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭০ টাকা।

বিএডিসির আরেক প্রস্তাবে তিউনিশিয়া থেকে ৭২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায় দেড় লাখ টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড বা কাফকোর কাছ থেকে ১৪তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৯২ কোটি ৩৮ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পের আওতায় ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল শিক্ষা সরঞ্জাম বিতরণের জন্য তিন লটে ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ টাকায় কেনার দেওয়া হয়েছে।

৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল শিক্ষা সরঞ্জাম বিতরণের জন্য তিন লটে ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ টাকায় বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কারা সরবরাহ করবে তা জানানো হয়নি। ২ ও ৪ নম্বর লটের অনুমোদন দেওয়া হলেও ৩ নম্বর লট নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান শাহিদা আক্তার।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ১৬০টি উপজেলায় আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করছে। এসব সেন্টারে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার তাইহান কনসোরটিয়ামকে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৫ হাজার ৭৬৬ টাকা।