চলাচলেও বিদেশিদের নিরাপত্তার আশ্বাস বাণিজ্যমন্ত্রীর

গুলশান হামলার প্রেক্ষাপটে বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেওয়াকে সরকার ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2016, 12:27 PM
Updated : 31 July 2016, 12:37 PM

গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ইতালীয় ক্রেতা এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের জাপানি পরামর্শকদের মৃত্যুর প্রভাব ব্যবসায় পড়েনি বলে দাবি করে আসছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তবে রোববার সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর তার কথায় উদ্বেগ ছিল স্পষ্ট। ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, “হলি আর্টিজানে এরা টার্গেট করেছে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের। ইতালিয়ান ক্রেতা আর জাপানে মেট্রোরেলের জন্য যারা এসেছে তাদের।

“বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের যাতে ক্ষতি হয়, চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত হয়, বিদেশিরা যাতে এই দেশে ব্যবসা না করে-এই উদ্দেশ্যে অনেক বিদেশি দেখে হলি আর্টিজানে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”

“হলি আর্টিজানের ঘটনা সতর্ক করেছে বেশি করে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে,” বলেন তিনি।

সরকারের পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে আর জঙ্গিবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না বলে আশা করছেন তোফায়েল।

বিদেশিদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে, আমাদের বিদেশি বন্ধুদের নিরাপত্তা দেওয়া, যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করে। অনেকে হয়ত সড়ক পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-খুলনা-বরিশালে যাবে, প্রয়োজন হলে আমরা তাদেরকে এসকর্ট দেব।”

আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

“বিদেশি ব্যবসায়িক কমিউনিটিকে নিরাপত্তা দেওয়া সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এখানে যে স্থাপনা রয়েছে, সেখানেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।”

তোফায়েল আহমেদ (ফাইল ছবি)

পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে স্বীকারোক্তি এলেও তোফায়েল এই সময়ে বিদেশি ব্যবসায়ী কম থাকার বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই দাবি করেন।

“জুলাই-অগাস্টে তারা অবকাশে যায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা সময় কাটায়। কালকেও মিটিং করেছি বিকেএমইএর সাথে। তারা বলেছে, অর্ডারের কোনো ক্ষতি হয় নাই।”

এদিকে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদন শুধু কূটনীতিকদের আবাসস্থল গুলশান নয়, সারা বাংলাদেশেই নিরাপত্তা জোরদারের জোরদারের উপর গুরুত্ব দেন। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা শুধু গুলশান, বনানী ও বারিধারার কথা বলছি না। সেখানে আমরা থাকি, তাই তা গুরুত্বের দাবিদার। কিন্তু আমাদের অনেক জায়গায় যেতে হয়, বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কারণে, উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে, ওইসব এলাকায় বাংলাদেশিরাও থাকে। সুতরাং সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দেশ নিরাপদ না।”

জঙ্গিদের লাশ নিতে পরিবারের অস্বীকার করাকে ‘আসল বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে মন্ত্রী তোফায়েল বলেন, “বাংলাদেশের এ ঘটনা বেশিদিন থাকবে না। অ্যাবসলিউটলি ইট উইল বি নরমাল কান্ট্রি, কোনো সন্দেহ নেই।”

ইইউ প্রতিনিধি দলে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল, স্পেনের রাষ্ট্রদূত এদুয়ার্দো দে লা ইগলেসিয়া ই দেল রোসাল ছিলেন।

‘ঐক্য হয়ে  গেছে’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল জঙ্গিবাদী তৎপরতার জন্য জামায়াতে ইসলামীকেই দায়ী করে তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির  ঐক্যের প্রস্তাবও নাকচ করেন।

তিনি বলেন, “এদের (নিহত সন্ত্রাসী) অনেকের অরিজিন হল জামায়াত। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য রেখে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে, এটা হতে পারে না।”

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ মন্তব্য করে তোফায়েল বলেন, “একাত্তরের মতো কেউ হয়ত আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে, কেউ করে না, তবে প্রত্যেকটা মানুষ এখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

“দলে দলে ঐক্য জাতীয় ঐক্য নয়। জাতীয় ঐক্য হচ্ছে মানুষে মানুষে ঐক্য, এটা হয়ে গেছে। কাজেই কারও সাথে ঐক্য করার কোনো প্রয়োজন নেই।”