সিম পুনঃনিবন্ধন: প্রথম পর্যায়ে ৬ মাস সময় পাচ্ছে গ্রাহক

মোবাইল সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথম পর্যায়ে গ্রাহকরা ৬ মাস সময় পাচ্ছেন জানিয়ে মোবাইলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) বলেছে, অনিবন্ধিত সিম সহসাই বন্ধ হওয়ার ‘সম্ভাবনা নেই’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2015, 08:58 AM
Updated : 30 Sept 2015, 02:05 PM

বুধবার গুলশানের অ্যামটব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল সিম পুনঃনিবন্ধনের প্রক্রিয়াগুলো ‍তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির।

ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন না করে সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের এই নির্দেশনা জারি করে সরকার।

টি আই এম নুরুল কবির বলেন, “আগামী এক নভেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সব অপারেটরদের পরীক্ষামূলকভাবে সিম পুনঃনিবন্ধন শুরু হবে। এ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর; প্রাথমিকভাবে ৬ মাস এ কার্যক্রম চলবে ।”

এরপর কী হবে- ছয় মাস পর তা ঠিক করা হবে বলে অ্যামটব মহাসচিব জানান।

দেশের প্রায় ১৩ কোটি সিমের সবই এ প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যতদিন পর্যন্ত সব সিম পুনঃনিবন্ধন না হয়, ততদিন এ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।”

অনিবন্ধিত সিম যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নুরুল কবির বলেন, “অনিবন্ধিত সিম অবশ্যই এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে কবে নাগাদ তা করা হবে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগ এবং অপারেটররা বসে ঠিক করবে।”

নির্দিষ্ট সময় পর অনিবন্ধিত সিম বন্ধ হয়ে গেলেও সেই গ্রাহক তার সঠিক তথ্য দিয়ে আবার সিম চালু করার সুযোগ পাবেন বলে জানান তিনি।

আগামী সপ্তাহ থেকে সব অপারেটরের ওয়েবসাইটে সিম পুন:নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে জানিয়ে নুরুল কবির বলেন, “সিম পুনঃনিবন্ধন নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে সহযোগিতা করার জন্যই এসব উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হবে।”

নুরুল কবির জানান, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের এসএমএস পাঠিয়ে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চাইবে অপারেটরগুলো। 

এই এসএমএসে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর, নাম ও জন্মতারিখ জানতে চাওয়া হবে। গ্রাহক সেই তথ্য মোবাইল অপারেটরদের দিলে তার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডারের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে।

এ প্রক্রিয়ায় অপারেটরদের সাথে এসএমএস আদান-প্রদানে গ্রাহকদের কোনো চার্জ দিতে হবে না।

যেসব গ্রাহক এসএমএস পড়তে পারবে না তাদের জন্য আইভিআর বা ভয়েস কলের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে গ্রাহক তথ্য যাচাই করতে ইতিমধ্যে ৬টি অপারেটর চুক্তি করেছে জানিয়ে নুরুল কবির বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহক প্রতি তথ্য যাচাইয়ে অপারেটরদের ২ টাকা করে দিতে হবে। তবে এ খরচ কমানো যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে।”

অপারেটরদের সিম নিবন্ধন তথ্যের সঙ্গে এনআইডি ডাটাবেইজের তথ্য মিলিয়ে দেখে বৈধভাবে নিবন্ধিত সিম যাচাইয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অপারেটর ও সরকার সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা ২০১২ সালের আগে সিম নিবন্ধন করেছেন, এসএমএস পাঠিয়ে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চাইবে অপারেটরগুলো।

প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি গ্রাহকদের শেষ পর্যন্ত সময় দিতে চাই। অবৈধ বা অনিবন্ধিত সিম বন্ধের কোনো সময়সীমা জানাচ্ছি না, তবে এ প্রক্রিয়া শেষে অবশ্যই এ ধরনের সিম বন্ধ হয়ে যাবে এবং বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

অবশ্য এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে শেষ করার ইচ্ছার কথা এর আগে জানিয়েছিলেন তারানা হালিম।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, সিটিসেল, এয়ারটেল এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অপারেটর টেলিটকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮৭ লাখ।