একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে তোলা হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার মোবাইল সিম। অনেক সিম নেওয়া হয়েছে ভুয়া পরিচয়পত্র দেখিয়ে। কোনো কোনো সিম কেনা হয়েছে পুরুষের নামে, অথচ পরিচয়পত্র নারীর।
Published : 22 Sep 2015, 10:34 AM
মোবাইল ফোন গ্রাহকদের জাতীয় পরিচিতির তথ্য যাচাইয়ে জালিয়াতির এরকম হাজারো নমুনা পেয়ে এজন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের দুষছে জাতীয় পরিচয় ও নিবন্ধন অনুবিভাগ।
নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের দেওয়া অধিকাংশ তথ্য সঠিক; বেশি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বড় অপারেটরদের গ্রাহক তথ্য নিয়ে।
“প্রিপেইড গ্রাহকদের অধিকাংশের তথ্য তাদের হাতে নেই। অথচ এ গ্রাহকরা ফোন ব্যবহারের আগেই সিমে টাকা ভরেন। অন্যদিকে পোস্টপেইড গ্রাহকদের ডেটা কোম্পানিটির হাতে রয়েছে। এ ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত কাজের সঠিক জবাবও তারা দিতে পারেনি।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮৭ লাখ।
ভুয়া পরিচয়ে সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সব অপারেটরের গ্রাহকদের তথ্য যাচাই করে সিম পুনঃনিবন্ধনের নির্দেশনা এসেছে।
তিন মাসে পুনঃনিবন্ধনের পর অনিবন্ধিত সব সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
সরকারের ওই সিদ্ধান্তের পর মোবাইল গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “মোবাইল কোম্পানিগুলো সিম নিয়ে যা করেছে, তা বলতে গেলে খুব ভয়ঙ্কর। ভুয়া নিবন্ধন পাওয়া যাচ্ছে, এটা উদ্বেগের। এতে তো ব্যক্তি নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। ভুয়া পরিচয়ে সিম নিয়ে একজন অপরাধ করলে অন্য কেউ ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।”
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বারও এই অনিয়মের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফেইসবুকে তিনি লেখেন, সিম নিবন্ধন বিষয়ক উপাত্তসমূহের মাঝে মাত্র কয়েক লাখ তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এরই মাঝে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে ৬৫০০ সিম নিবন্ধিত পাওয়া গেছে।
তবে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তথ্য যাচাইয়ের ফলাফল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি নন ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তথ্য যাচাইয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এরই মধ্যে আমরা অপারেটরদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখের মতো ডাটা পেয়েছি। চুক্তির জন্য সবার আবেদনও পেয়েছি। গ্রাহক ও নাগরিক তথ্য যাচাইও চলছে।”
সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার সঙ্গে বিষয়টি জড়িত থাকায় ‘খুব’ গুরুত্বসহকারে তথ্য যাচাই হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বরেরর মধ্যে সবগুলো অপারেটরের সব তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি যাচাইও শেষ হতে পারে।
“তখন ফলাফল সম্বন্ধে বলা যাবে।”
সব গ্রাহককে সঠিক সেবা এবং পুনঃনিবন্ধনের সুযোগ দিতে স্ব স্ব মোবাইল কোম্পানি থেকে গ্রাহককে এসএমএস দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এনআইডি ডিজি।
“যেভাবে সিম ছড়িয়েছে সবখানে, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহকের এনআইডি তথ্য না-ও মিলতে পারে। কিন্তু সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে গ্রাহকদের মোবাইলে তাদের এনআইডি নম্বর, নাম ও জন্ম তারিখের তথ্য ফিরতি বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার আহবান জানানো যেতে পারে।”
পরবর্তীতে ছবি সংগ্রহ, আঙ্গুলের ছাপ ও অন্যান্য কাজগুলো সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানি ধীরে ধীরে সম্পন্ন করতে পারবে বলেও মত দেন তিনি।