প্রকাশিত সংবাদের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদেই সুষ্পষ্ট বলা ছিল, এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল-সিআইসির অনুসন্ধানে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি, বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারের তথ্য উঠে এসেছে।
Published : 28 Sep 2024, 11:33 PM
'জনশক্তি রপ্তানির আড়ালে কর ফাঁকি, অর্থপাচার সবই করেছেন বায়রার স্বপন' শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করেছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা এর সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের মালিকানাধীন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল।
কোম্পানিটির স্বত্বাধিকারী স্বপনের পক্ষে শনিবার ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক শাহ আজম এর পাঠানো প্রতিবাদে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স এনে দেশে বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, যা সত্য নয়’।
নিজেদের ব্যাখ্যায় কোম্পানিটি আটটি বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরে ওই খবরের প্রতিবাদ করেছে।
প্রতিবাদলিপির ভাষ্য অনুযায়ী, রুহুল আমিন জনশক্তি রপ্তানি খাতে একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। এ খাতে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা এবং
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস-বায়ার এর মহাসচিব ও নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে সংগঠনেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তিনি এদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে অবদান রেখেছেন।
এছাড়া কোম্পানিটি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের নিয়ম-কানুন প্রতিপালন করে অন্যান্য এজেন্সির মত মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে এবং সরকার নির্ধারিত ফি গ্রহণ করেছে। ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল এর মাধ্যমে প্রেরিত কর্মীদের সবাই নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন এবং কর্মীদের কারও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের দাবি, স্বপন কখনও কর ফাঁকি দেননি বরং আয়কর বিভাগের আইন-কানুন বিধি-বিধান এবং নির্দেশনা মোতাবেক সরকারকে যথাযথভাবে 'নির্ধারিত আয়কর পরিশোধ করেছেন এবং সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে বৈধ ইনকামের ওপর ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন এবং বৈধ আয়ের অর্থের কর পরিশোধ করে বিনিয়োগ করেছেন।
বিদেশ থেকে আয় রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে এনে সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে দেশে বিনিয়োগ করেছেন বলে তুলে ধরে বলেন, “ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পরই তাকে এসকল বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে।”
প্রতিবেদকের বক্তব্য
প্রকাশিত সংবাদের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদেই সুষ্পষ্ট বলা ছিল, এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল-সিআইসির অনুসন্ধানে তার অনিয়ম-দুর্নীতি, বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারের তথ্য উঠে এসেছে। সুতরাং এখানে ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ প্রতিবেদকের তরফে আনার সুযোগ নেই।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই রুহুল আমিন স্বপন দেশে না থাকায় এবং তাকে মোবাইলে না পেয়ে সিআইসির অনুসন্ধানের পাওয়া অভিযোগগুলোর বিষয়ে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক শাহ আজমের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ হয়ে তার দেওয়া বক্তব্য হুবহু প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।
সিআইসির প্রতিবেদনে উঠে আসা রুহুল আমিন স্বপনের বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম যেমন বিপুল পরিমাণ এফডিআর স্থিতি, ব্যাংক স্থিতি, গৃহ সম্পত্তিতে বিনিয়োগ, ব্যাংক সুদের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দিয়েছেন, তেমনি ভুয়া ব্যাংক বিবরণী ও বাড়ি কেনার তথ্য দিয়ে আয়ও গোপন করেছেন বলে যে ‘অভিযোগ’ এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তেমন উত্তর তখনও পাওয়া যায়নি।
এমনকি তাদের পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তা পরিষ্কার করে তুলে ধরা হয়নি।
এনবিআরের প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট ছিল, জনশক্তি রপ্তানির টাকা দুবাইয়ে পাচার করে সেই অর্থ রেমিটেন্স হিসেবে দেশে এনে বিপুল অঙ্কের কর ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি রেমিটেন্সের বিপরীতে বাড়তি প্রণোদনাও নিয়েছেন তিনি।
কিন্তু প্রতিবাদপত্রে দুবাইয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বিদেশ থেকে আয়ের উপায় ও মাধ্যম তুলে ধরা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “সিআইসি কর্তৃক সংগৃহীত করদাতার নামে জনতা ব্যাংক লিমিটেড, দুবাই শাখায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাব নম্বর সিডি/০১/০০০০৯৩১২ এর ব্যাংক বিবরণী পরীক্ষা করে দেখা যায়, করদাতা (স্বপন) মালয়শিয়া থেকে ওই ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করেছেন।
“এর বিপরীতে স্বপন বিদেশে কর্মরত থাকার প্রমাণ, কাজের নিয়োগপএ, কার্যাদেশ বা ওয়ার্কওর্ডার দাখিল করেননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।”
এ কারণে প্রকাশিত সংবাদে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, যা সত্য নয়’ বলে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল যে দাবি করেছে, সেটি বলার সুযোগ নেই।