“জাপানের সাথে লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আমরা জয়েন্ট ভেঞ্চারের কথা বলেছি,” বলেন তিনি।
Published : 30 May 2024, 03:04 PM
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।
তবে কবে নাগাদ এ টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
ফারুক খান বলেছেন, “পৃথিবীতে কোথাও এরকম কাজের ক্ষেত্রে এভাবে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। কারণ এটা হাইলি টেকনিক্যাল একটা কাজ। দেখা গেল গুছিয়ে এনেছেন, তখন নতুন করে অন্য আরেকটা কাজের জন্য আবার সময় লাগছে। এটা কোনোভাবেই পরিকল্পনা করে একদম টাইমমত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে থার্ড টার্মিনালের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বিমান পরিবহন মন্ত্রী।
ফারুক খান বলেন, “আমাদের বিমানবন্দরের এই টার্মিনালটি অনেক সুন্দর, তবে সুন্দর হলেই হবে না। এটা মেনটেইন করতে হবে। আমি মনে করি, সিভিল এভিয়েশন এভাবেই তাদের ম্যানপাওয়ারকে তৈরি করবে।"
নতুন টার্মিনালের সুযোগ-সুবিধার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই টার্মিনালের ইমিগ্রেশন কাউন্টারটা অনেক বড় করা হয়েছে। কিছুদিন আগে আমি জার্মানি গিয়েছিলাম। সেখানে মাত্র ৬টা ইমিগ্রেশন কাউন্টার ছিল।
“আমি প্রায় ৩ ঘণ্টা সেখানে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের এখানে ৫৪টি কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে।”
শাহজালাল বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগের কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে সরকার।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, “আমাদের বর্তমান রানওয়েতে আইএলএস (ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম) সিস্টেম উন্নত করা হচ্ছে। রেডারগুলো উন্নত করা হচ্ছে।
“তবে দ্বিতীয় রানওয়ে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। যেহেতু আশপাশে অনেক বিল্ডিং হয়ে গেছে, আমরা দেখছি- কীভাবে দ্বিতীয় রানওয়ে চালু করা যায়।”
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, থার্ড টার্মিনালের যে ৩ শতাংশ কাজ বাকি আছে, তা টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিংয়ের। অক্টোবরের মধ্যেই পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।
লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে কে
থার্ড টার্মিনাল সম্পন্ন হলে লাগেজ হ্যান্ডলিং দ্রুত হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, “পৃথিবীর যেকোনো দেশে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যাত্রীরা মনে করে প্লেন থেকে নেমে যেতে যেতে লাগেজ আমার হাতে আসবে, এটা কখনো সম্ভব হয় না।
“আমরা উন্নতি করার চেষ্টা করছি। আমাদের এখানে বর্তমানে প্রথম লাগেজ পেতে এখন ১৫ মিনিট লাগে, পরেরটি পেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে। এর উন্নতির জন্য আমরা ইক্যুইপমেন্ট কিনেছি। চেষ্টা করছি আরও দ্রুত দেয়া যায় কি না।
লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব কারা পাচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “জাপানের সাথে লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আমরা জয়েন্ট ভেঞ্চারের কথা বলেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা জানায়নি কোন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে। আশা করছি তারা দ্রুতই এটি জানাবে।"
মালয়েশিয়ার ভাড়া প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী উড়োজাহাজের ২০-৩০ হাজার টাকার ভাড়া সম্প্রতি কয়েকগুণ বেড়ে লাখ টাকা হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, “বিমান ভাড়ার বিষয়টা সাপ্লায়ার এবং বিমানের ব্যাপার। যারা এটার সাথে জড়িত, তারা এক মাস আগে জানত। কিন্তু এটা নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি বা অন্য সাপ্লায়াররা ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বিমান প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় ৩ থেকে ৪টা করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
“গতকাল মালয়েশিয়ার কিছু লোক ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় এয়ার কম্বোডিয়ার একটা এয়ারক্রাফট দিয়ে একটি চার্টাড ফ্লাইট পরিচালনার পারমিশন চেয়েছে, গতকালকেই আমরা তাদের পারমিশন দিয়ে দিয়েছি। এটা এফিশিয়েন্ট আমরা মনে করি। বিমান যদি আরও আগে জানত, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারত। বর্তমানে বিমানের হজ ফ্লাইট চলছে, তবুও আমরা চেষ্টা করেছি সুযোগ দিতে।"
ঢাক-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট নিয়ে হতাশা
কবে চালু হতে পারে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট- এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী ফারুক খান।
তিনি বলেন, “ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটের ব্যাপারে তারা আমাদের কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। যখনই তারা এসেছে, আমাদের তিনটা-চারটা অবজারভেশন দিয়েছে, আমরা একটা একটা করে পূরণ করেছি। কখনো সিকিউরিটি নিয়ে, কখনো অন্য ব্যাপারে।
“কিন্তু, এফএএ (ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কী চায়, সেটি এখনো আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এটা দুঃখজনক যে তারা একটা করে অবজারভেশন দেয়, পরে আর কিছুই হয় না।”
মন্ত্রী বলেন, “এটা আজকের কথা না, আমি আগেও মন্ত্রী থাকাকালীন যখন বোয়িংয়ের বিমান কিনেছি, তখনও আমরা বলেছিলাম নিউ ইয়র্কে আমাদের স্লট দিতে হবে। কিন্তু এটি বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, “বাংলাদেশে বিমানবন্দরে গাড়ি পার্কিং চার্জ বেশি, এটা কারেক্ট। সব জায়গায় সরকার টাকা দিতে পারে না।
“বাংলাদেশের মত দেশে সাতটি বিমানবন্দর চালু আছে, এর মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক; এটা মনে রাখতে হবে। এমন না যে অন্যান্য দেশের তুলনায় পার্কিং চার্জ অনেক বেশি। তবুও আমরা চেষ্টা করব যদি এটি কমানো যায়।"
>> বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের ১ ও ২ নম্বর টার্মিনাল মিলে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ সম্পন্ন হলে আরও ১কোটি ৬০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া যাবে। সেই হিসাবে বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী সেবা নিতে পারবেন।
>> বর্তমানের দুই টার্মিনাল মিলে ইমিগ্রেশন কাউন্টার আছে ১০৭টি, নতুন টার্মিনালে ইমিগ্রেশনের কাউন্টার থাকছে ১২৮টি, এর মধ্যে অটোমেটেড ১৫টি।
>> চেক ইন কাউন্টার বর্তমানে দুই টার্মিনাল মিলে ৬২টি, থার্ড টার্মিনালে রয়েছে ১১৭টি।
>> কার পার্কিং লট বর্তমানে ৮০০টি, থার্ড টার্মিনালে রয়েছে ১২০৩টি।
>> বর্তমানে দুই টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ আছে ৮টি, থার্ড টার্মিনালে আছে ২৬টি।
>> বর্তমানে দুই টার্মিনালে এয়ারক্রাফট পার্কিং বে'তে ২১টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যায়। থার্ড টার্মিনালে আরও ২৩টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে।
>> বর্তমানে দুই টার্মিনাল এলাকার আমদানি কার্গো এলাকা আছে ১৩ হাজার ৭০০ বর্গমিটার, যেখানে বছরে ৮৪ হাজার ৩৭৯ মিটার মালামাল আমদানি করা যায়, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ হলে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ টন মালামাল আমদানি করা যাবে।
>> অন্যদিকে দুই টার্মিনালে বর্তমানে রপ্তানি কার্গো এলাকা ১৯ হাজার ৬০০ বর্গমিটার, যেখানে বছরে ২ লাখ ৫৬০ টন মালামাল রপ্তানি করা যায়। থার্ড টার্মিনালে ৩৬ হাজার বর্গমিটারের রপ্তানি কার্গো এলাকায় আরও ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪১ টন মালামাল রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন।