“পরিচিত একজন বলল, কর বাড়তে পারে, তাই দাম বাড়বে। তাই আগে আগেই কেনার চেষ্টা করছি। যদি বাজেটের পরের তুলনায় কিছু কমে পাই আরকি।”
Published : 04 Jun 2024, 08:10 AM
বাজেটে ইলেক্ট্রনিকস ও প্রযুক্তিপণ্যের ওপর কর বাড়তে পারে, এমন ধারণা থেকে আগেভাগেই কেনাকাটা করছেন অনেক ক্রেতা।
কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে এরই মধ্যে, বিক্রেতারাও দাম বাড়ার ‘বার্তাও’ দিচ্ছেন ক্রেতাদেরকে। এই ‘বার্তা’ ক্রেতাদেরকে কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে কি না, সে নিয়ে অবশ্য আছে প্রশ্ন।
আগামী ৬ জুন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে রাজধানীর গুলিস্তান, স্টেডিয়াম মার্কেট, বিজয় সরণিতে ঘুরে বাজারের এমন একটি চিত্র পাওয়া গেছে।
এবারের বাজেটে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের মতো বাড়িয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা করার কথা শোনা যাচ্ছে।
সম্প্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বেশ কিছু শিল্পর ‘কর ছাড়’ সুবিধা কমিয়ে আনা হবে। দেশীয় শিল্প সুরক্ষার নামে যেসব খাত এতদিন কর ছাড় পেয়ে আসছিল, এর কিছু কিছু প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে।
প্রযুক্তিখাতে খরচ বাড়ছে বলে কানাঘুষা চলছে। সিসি ক্যামেরা, ক্যাবল, স্মার্ট ফোন, এসি ও ফ্রিজের মতো ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীতে দাম বাড়ার প্রস্তুতি চলছে শো রুমগুলোতে।
বাজেটে এসব পণ্যের ওপর কর বাড়ছে বলে অনুমান করছে বিক্রেতাদের পাশাপাশি কিছু ক্রেতারাও। তাই ইলেকট্রনিকসের দোকানগুলোতে আনাগোনাও কিছুটা বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেটে সিসি ক্যামেরার দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আগের চেয়ে দাম বেড়েছে।
ক্রেতাদের এক দোকান থেকে আরেক দোকানে গিয়ে পণ্যের দাম যাচাই করতে দেখা যায়।
দাম বাড়তে পারে, এমন ধারণা থেকে রেজাউল মোস্তফা বাজেট ঘোষণার আগেই চলে এসেছেন বাজারে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যাত্রাবাড়ীতে আমার ভবনের সামনে, নিচতলায় ও সিঁড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো প্রয়োজন। কিনব কিনব করে কেনা হচ্ছিল না। পরে পরিচিত একজন বলল, বাজেটে কর বাড়তে পারে, তাই দাম বাড়বে। তাই আগে আগেই কেনার চেষ্টা করছি। যদি বাজেটের পরের তুলনায় কিছু কমে পাই আরকি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের কাউসার স্টোরের বিক্রেতা মো. আবু কাওসার বলেন, “দোকানের জন্য একটা ফ্রিজ কিনতে চাই। যদি দেখি দাম বেশি, এইটা তো মানতে কষ্ট হবে। ব্যবসা করতে বা বাসা-বাড়িতে ফ্রিজ অতি প্রয়োজনীয় একটা জিনিস এখন।”
হাতের মোবাইলটা পুরনো হয়ে গেছে। বাজেটে কর বাড়বে গুঞ্জন শুনে এখনই নতুন একটা কিনতে চান আরোবী ঐশী। কিন্তু তিনি টাকা জোগাড় করতে পারেননি।
মোবাইলে নতুন করে কর না বসানোর দাবি জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঐশী বলেন, “এখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মোবাইল অতি জরুরি হয়ে পড়েছে, তাই সবকিছু বিবেচনায় মোবাইলে অন্তত কর বাড়ানো কোনোভাবেই উচিত না।”
কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। বইয়ের বাহিরের তথ্য জানতে ইন্টারনেট ব্রাউজিং তিনি মোবাইল দিয়েই করেন। কোচিংয়ের ক্লাসও মাঝেমধ্যে অনলাইনে নেয়। তাই কেবল কথা বলা না, মোবাইল ফোন এখন পড়াশোনার অংশ হয়ে উঠেছে তার কাছে।
তিনি বলেন, “মোবাইল আর বিলাসী পণ্য না, প্রয়োজনীয় পণ্যে রূপ নিয়েছে। একটা প্রয়োজনীয় পণ্য সুলভ মূল্যেই থাকা দরকার।”
তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, “ইলেকট্রনিক পণ্যে দাম বাড়লে, নতুন করে আর কিছুই কিনব না। প্রয়োজনে লাইফস্টাইলেই পরিবর্তন আনব।
‘মানুষের আয় বাড়ে না, জীবন চালানো যেখানে দায়, সেখানে দাম বাড়লে আর কিছু বলার নেই।”
গাবতলী থেকে সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে এসে খাদেম হোসেন কিনেছেন ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি। তিনি বলেন, “বাজেট তো সামনেই। নতুন করে দাম বাড়ে কি না। টিভি কেনার ছিল, আগেই কিনে নিলাম।”
সাভার আসা আল আমিন বলেন, “আমি আমার দোকানে বিক্রি করতে ক্যাবল, লাইট, ফ্যানসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনেছি। বাজেটের পর দাম বাড়ে কিনা সেই ভয়ও আছে। তাই জিনিসপত্র একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে কিনলাম। তবে ১৫ দিন আগে এসেছিলাম, তখনের চেয়ে এখন হালকা দাম বেশি।”
বাজেট নিয়ে ধারণা নেই তাদের
তবে ক্রেতাদের একটি বড় অংশেরই বাজেট নিয়ে ভাবনা দেখা গেল না।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে আসা মো. শরিফ বলেন, “বাজেটের বিষয়ে জানি না। আমার দোকানের জন্য কিছু মাল কেনা দরকার তাই এগুলো নিলাম।”
আরেকজন ক্রেতা মো. সোহেল পুরান ঢাকার কলতাবাজারে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানের জন্য দুই ব্যাগ ভর্তি করে পণ্য কিনেছেন।
বাজেট নিয়ে তারও ভাবনা নেই। কারণ, দাম বাড়লে তিনিও বাড়তি রাখবেন। কমলে কিছুটা কম রাখবেন।
নিজের জন্য হেডফোন কিনতে আসা হেলাল উদ্দিন বলেন, “কর বাড়বে কি কমবে, সেই চিন্তা থেকে হেডফোন কিনছি না। প্রয়োজনের তাগিদেই কেনা।”
বিক্রেতারা যা বলছেন
এরই মধ্যে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বলে জানালেন বিজয় সরণিতে এশিয়া ইলেকট্রনিকসের বিক্রেতা মোক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, “একটা ফ্রিজের দাম আগে ছিল ৩০ হাজার, সেটার দাম প্রথমে ৪০০ টাকা, পরে ৬০০ টাকা এভাবে দাম বেড়েছে। প্রায় সব পণ্যেই দাম বেড়েছে।”
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেটে সিসি ক্যামেরার দোকান মিউজিক কর্নারের বিক্রেতা সোহেল মিয়া বলেন, “৫ শতাংশের মত দাম বাড়তেছে বলে কোম্পানির লোকদের কাছে জেনেছি। তবে এখন অতি অল্প কিছু দাম বেড়েছে।”
একই মার্কেটে রেক্সকন ইলেকট্রনিক্সের বিক্রেতা প্রীতম চৌধুরী বলেন, “আমাদের দোকান এসির। এই দোকানের ক্রেতারা বাজেটের উপর নির্ভর করে না। যেদিন গরম বেশি, সেদিন ক্রেতা বেশি। এখন ঘুর্ণিঝড়ের একটা প্রবণতা চলছে তাই ক্রেতা কম। আর এমনিতে কোম্পানির কাছে শুনেছি ৬ তারিখের পরে কিছুটা দাম বাড়বে।”
এলইডি টিভির শোরুম হাবিব ইলেকট্রনিকসের বিক্রেতা ফরিদ আহমেদ বলেন, “ডলার ক্রাইসিসের কারণে গত দুই বছর ধরে একটু একটু করে বেড়েছে দাম। এখন নতুন করে আর বাড়েনি। সরকার কর যখন বাড়াবে তখন আমাদের বাড়তি দাম পুরোপুরি কার্যকর হবে।”