আগামী অর্থবছরেও প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় মানুষের সহায়তায় বাড়তি নজর দেওয়ার অংশ হিসেবে এই খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে তিনি করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রস্তাবিত বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের বরাদ্দের তুলনায় ১১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বেশি।
সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মূল বাজেটেও ছিল তাই।
এই বরাদ্দ দেশের বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ দিকে শুরু হওয়া মহামারীর কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরেও এই খাতে আগের তুলনায় বেশি অগ্রাধিকার দেয় সরকার।
আগামী অর্থবছরেও দারিদ্র্য বিমোচনে ও প্রান্তিক মানুষের সহায়তায় কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “নিম্নআয়ের মানুষের জন্য নগদ সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ৮৮০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। লকডাউনের সময় ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।“
প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া কারও ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা নেই। তবে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত প্রতিবছর বিভিন্ন খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়।
আগামী অর্থবছরে দারিদ্রপ্রবণ আরও ৩৮টিসহ ১৫০ উপজেলার বয়স্কদের ভাতার আওতায় আনা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় মোট ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে আগামী অর্থবছরে ভাতার আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাজেট প্রস্তাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে এটিকে অর্ন্তভূক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত এক হাজার ৯২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণেও বাজেটে বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন তিনি।
বর্তমানে সারাদেশে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী ভাতা পাচ্ছেন। তাদের মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আরো ৪৮১ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে মোট ৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। চলতি বছর এই খাতে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
একইভাবে সোয়া লাখ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী নতুন করে ভাতার আওতাভুক্ত হবেন। বর্তমানে সারাদেশে সাড়ে ২০ লাখ নারী ৫০০ টাকা করে ভাতা পান।
এজন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ আছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে আরো ২ লাখ ৮ হাজার জন প্রতিবন্ধীকে। এতে মোট ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন।
প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবার্সন কেন্দ্রের জন্য ৯২ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাতৃত্বকালীন ভাতা, নিম্নআয়ের কর্মজীবি ‘ল্যাকটেটিং’ মা ভাতা পাবেন।
আগামী অর্থবছরেও তৃতীয় লিঙ্গ, বেদে ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তা পাবেন।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকে শিক্ষাবৃত্তির জন্য ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছরে আরো এক হাজার ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে পুর্নবাসনে সরকারের লক্ষ্যের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, পেনশন, সঞ্চয়কারীদের সুদ ভুর্তকি, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক-বাজেট বৈঠকে করোনাভাইরাস মহামারীতে নতুন করে যারা দরিদ্র হয়েছেন, কাজ বা চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছেন তাদের বাজেটে বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।
কয়েকটি বৈঠকে অংশীজনরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতাসহ আরও সুবিধাভোগীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রস্তাবও দেন।