বাজেটের ১৭ শতাংশই সামাজিক নিরাপত্তায়

কোভিড-১৯ সঙ্কটের এই কালে নতুন অর্থবছরের বাজেটে খরচের যে পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাজিয়েছেন, তার ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশই তিনি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 12:20 PM
Updated : 11 June 2020, 09:40 PM

আগামী ২০২০–২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী।

তাতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ০১ শতাংশ।

বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে ৭৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা করা হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীতে দুই মাসের লকডাউনে সবেচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রায় তিন কোটি মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত হেনেছে এই মহামারী।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণ, লকডাউন, শিল্প কারখানা ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ মানুষর আয় কমে দারিদ্র নিরাপত্তায় আমাদের অর্জন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

“এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সরকার চলতি অর্থবছরে দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে ৫০ লাখ জনগণকে নগদ অর্থ সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা বাড়াতে কিছু প্রস্তাব আর উদ্যোগের কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন তার বাজেট প্রস্তাবে।

>> করোনা মহামারীর কারণে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সকল দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে করে ৫ লাখ জন উপকারভোগী যোগ হবে এবং এ খাতে ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে।

>> মহামারীর কারণে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সকল বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে করে সাড়ে ৩ লাখ উপকারভোগী যোগ হবে এবং এ খাতে ২১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে।

>> নতুন করে দুই লাখ ৫৫ হাজার জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হবে। এর ফলে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ লাখে। ফলে এই খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হবে ২২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

>> দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী মায়েদের ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, ভিজিডি কার্যক্রম, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

>> মহামারীর আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে।

>> জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র ২০১৫ এর আলোকে করোনাভাইরাস সঙ্কট থেকে দরিদ্র, অসহায় মানুষের অবস্থা উত্তোরণের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।