মহাস্থানগড়ে সঙ্গী হলাম একদল পর্যটকের

শীতের আমেজে একদল পর্যটককে বগুড়ায় স্বাগত জানিয়ে প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন মহাস্থানগড়ের পথে রওনা দিলাম।

মো. নাজমুল হোসেনমো. নাজমুল হোসেন
Published : 10 Jan 2023, 10:52 AM
Updated : 10 Jan 2023, 10:52 AM

এককালের রাজধানী আর ইতিহাসের স্বর্ণপুরী মহাস্থানগড়ে ধাপে ধাপে চাপা পড়েছিল আমাদের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। ধ্বংসাবশেষ খনন করে এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, তা নিয়ে গড়ে উঠেছে মহাস্থানগড় জাদুঘর। প্রতি বছর শত শত পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। আমিও অনেকবার এখানে ঘুরতে এসেছি; এবার ডিসেম্বরেও যেমন ঘুরতে গেলাম। তবে এই ডিসেম্বর আমার জন্য একটু বেশিই বিশেষ ছিল।

ফোন করেছিলেন প্রশিকার চেয়্যারম্যান কবি রোকেয়া ইসলাম। বগুড়ার সভ্যতা দেখতে আসবেন কয়েকজন, সঙ্গে থাকবেন ভারতীয় কবি রেখা রায়।  আমি বগুড়ার মানুষ হবার সুবাদে ঘুরে দেখানোর দায়িত্ব পেলাম। সম্মতিও জানালাম তাতে। 

ঢাকা থেকে এলেন সেই ভ্রমণপিপাসুরা। যাদের সঙ্গী হব তারা সবাই কবি। শীতের আমেজে তাদের বগুড়ায় স্বাগত জানিয়ে প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন মহাস্থানগড়ের পথে রওনা দিলাম।

মহাস্থানগড় ভ্রমণের সঙ্গী হলেন কবি রোকেয়া ইসলাম, কবি তাহমিনা কোরাইশী, কথা সাহিত্যিক নূর কামরুন্নাহার, কবি রেখা রায়,  সাংবাদিক মিলা মাহফুজ ও কবি নিলুফা ইয়াসমিন। 

শহর থেকে বারো কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মহাস্থানগড়ে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। মহাস্থানগড় জাদুঘরের পাশেই রয়েছে গোবিন্দভিটা। গোবিন্দভিটা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি টিলার মতো উঁচু জায়গা। মাটির ঢিবি খুঁড়ে বের করা হয়েছে প্রাচীন যুগের স্থাপত্য এই গোবিন্দভিটা।

জাদুঘরে গেলে একসাথে অনেককিছু দেখা যাবে। সুতরাং রওনা দিলাম সেখানে। পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার পরপরই যেন এক প্রশান্তির ছাপ সবার চোখে। চলতি পথেই দেখা যাচ্ছিল উঁচু উঁচু প্রাচীর। সবাই বলাবলি করছিলেন, এই সব প্রাচীর কত পুরনো।

আমরা টিকিট কেটে ঢুকলাম প্রাচীরের উপর দিয়ে হাঁটার জন্য। সবাই প্রাচীরের যত কাছে এগোচ্ছিলেন ততই চোখে-মুখে ছড়াচ্ছিল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা।

ঘোরার ফাঁকে ফাঁকে সবাই যে যার  ফোনে ছবি তুলে নিলেন। এত সুন্দর জায়গার স্মৃতি তো রাখতে হবেই, যেন পরে মনে করতে পারে। আমি মাঝে মাঝে বলে চলেছিলাম এখানকার ইতিহাস।

সবার আনন্দিত মনে চলছিল গান আর কবিতাও। আমরা সবাই রাজা গানটি গাইতে গাইতে হাঁটছিলেন ভারতীয় নাগরিক রেখা রায়। তাতে গলা মেলালেন সঙ্গে থাকা সবাই।

রেখা রায় মজা করে বললেন, একসময় এই নগরীতে রাজা ছিল, রানি ছিল, রাজকন্যা ছিল, মন্ত্রী, পাত্রমিত্র, অমাত্য, সেনাবাহিনী, প্রহরী ও দ্বাররক্ষক ছিল। হাতিশালে হাতি ছিল, ঘোড়াশালে ঘোড়া ছিল। সে নগরে এখন আমরা রানি হয়ে ঘুরছি। অট্টহাসির রোল পড়ে গেল। 

কথা সাহিত্যিক নূর কামরুন্নাহারও কল্পনায় পুরাতন নগরীকে দেখতে পেলেন যেন। তার বর্ণনাও করলেন, প্রাচীন নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর ঘাটে নৌকা ভিড়ত। দেশি-বিদেশি বণিকেরা এখানে আসত। ব্যবসা করতে। আসত তীর্থযাত্রীরা ও দেশ-বিদেশের পর্যটক। জনকোলাহলে মুখরিত ছিল এই নগর। প্রাচীনকালের সমৃদ্ধ এই নগরী এখন জনশূন্য বিরান ভূমি।

কোথায় জনশূন্য? এই তো রানিরা হাঁটছে। এবার বলে উঠলেন  কবি রোকেয়া ইসলাম। এর মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’আমি তোমাদেরই লোক’ আবৃত্তি  শুরু করলেন দুয়েকজন। গান ধরলেন  রেখা রায়। কবিতা পাঠ করলেন সবাই। 

সবাই এসেছিলেন বগুড়ার মহাস্থানগড় ভ্রমণে। আমার মনে হচ্ছিল, এই পথ সবার শত বছরের চেনা।