আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবনযাপনের পরিবর্তনের সাথে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বহু কিছু। কোনো এক সময় গ্রামের প্রায় বাড়িতেই শোনা যেত ঢেঁকির মরা কাঠের চিৎকার; বাড়ির বউটির পায়ের তালে তালে আঘাতে ধান থেকে চাল আর গম থেকে আটা সবই হতো এই ঢেঁকির দ্বারা।
প্রতিদিনের খাদ্য প্রস্তুতের পাশাপশি বিভিন্ন সময়ে উৎসবে নবান্ন কিংবা শীতের পিঠা তৈরি জন্য ঢেঁকির ব্যবহার ছিল জনপ্রিয়। এসব ফেলে মানুষ আজ যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। তারপরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ মানুষগুলো এসবের ব্যবহার এখনও ধরে রেখেছেন অতি আদরে।
গ্রামের নাম শেখপাড়া। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের এই গ্রামের একটি বাড়িতে দেখা মিললো ঢেঁকির। বাড়ির পাশে টিনের চালের নিচে বসানো ঢেঁকিতে এখন মাঝে মাঝে ধান ভানা হয়।
বাড়ির ৬৬ বছর বয়সী সুরুতজান বিবি দেখালেন কীভাবে ঢেঁকি চালাতে হয়।
তিনি বললেন, আগে গ্রামের বাড়ি বাড়িতে ঢেঁকি থাকলেও এখন পুরো গ্রামে ঢেঁকির সংখ্যা মাত্র দুইটি।
সুরুতজান বিবির ধারণা এখনকার মানুষেরা একটু বেশি অলস প্রকৃতির। এ কাজ কেউ করতে ভালবাসেনা, করতেও চায় না।
তবে নিজে বিয়ের পর থেকে সংসার জীবনে ঢেঁকিতে তৈরি আটা-চাল ব্যবহার করতেন যাতে খাদ্যে মান ও স্বাদ ছিল পরিপূর্ণ। সেই স্বাদের যন্ত্র ধ্বংস হতে দেখে আফসোস করলেন সুরুতজান।
তবে আধুনিকতার বেড়াজালে একটু ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকলেই এই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে এখনও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব তারই প্রমাণ শেখপাড়া গ্রামে দেখা ঢেঁকিটি।