“এইভাবে ক্ষমতা, মানে জাদু পেয়ে নিজেরাই সম্পদের মালিক হয়েছে। দেশের মানুষকে দেয়নি। দেবে না তারা। আসে লুটপাট করে খেতে।”
Published : 01 Jan 2024, 05:51 PM
বিএনপিই ভোট চুরি করে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানুষের মন জয় করেই ভোট পায়।
সোমবার কলাবাগান মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় তিনি বলেন, “আমরা মানুষের শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সবকিছুর জন্য কাজ করে মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই। আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না।”
ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় আছি।
“যেহেতু ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে, যেহেতু মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, ওই অগ্নি সন্ত্রাসের সময় ছাড়া, বাকি সময়- মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে; মাথাপিছু আয় বেড়েছে মানুষের, চিকিৎসা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এবং এটা আমার কথা না, হাই কোর্টের আদেশ আছে, হাই কোর্টের রায় আছে যে, ওই বিএনপি, অবৈধ জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ।
“তাই তারাই ভোট চুরি করে। তারা ভোট জিততে পারে না। ২০০৮ এর নির্বাচনই সেটা প্রমাণিত সত্য। কাজেই এখনো আবার তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। কেন নির্বাচন বানচাল করবে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে উন্নয়ন হয়েছে।”
সিলেট, রংপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জের পর এটি ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনি জনসভা।
ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নৌকার জনসভায় যোগ দেন মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঢাকার বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা ঢাক ঢোল বাজিয়ে, নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে জনসভায় আসেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজিত এ নির্বাচনি জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুপুর ২টায়।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালু এবং পানি, বিদ্যুৎ ও আবাসনসহ নানা খাতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “একটা দেশের মানুষের সব ধরনের কল্যাণ করার জন্য যা যা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা হয়। আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।
“কারণ এর আগে তো জিয়াউর রহমান ছিল, এরশাদ ছিল, খালেদা ছিল। খালেদা জিয়া তো নাকি তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণকে কিছু দেয়নি। নিজেরা নিয়েছে, নিজেরা অর্থশালী হয়েছে, সম্পদশালী হয়েছে।”
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রতিদিন দেখাত যে, কিছু নাই ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া। পরবর্তীতে আমরা কি দেখলাম? হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে তারা। তাহলে প্রশ্ন হল- এখন ভাঙা স্যুটকেসটা কি জাদুর বাক্স হয়ে গেল যে, সেখান থেকে টাকা বের হয়?
“এইভাবে ক্ষমতা, মানে জাদু পেয়ে নিজেরাই সম্পদের মালিক হয়েছে। দেশের মানুষকে দেয়নি। দেবে না তারা। আসে লুটপাট করে খেতে। আর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী তাদের তো সেটাই চরিত্র। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের, মাটি মানুষের সংগঠন, জনগণের অধিকারের কথা বলেই এই সংগঠন তৈরি হয়েছে।”
মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এই নৌকা মহাপ্লাবনে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকাই মানুষের উন্নতি দেয়, এই নৌকাই মানুষকে নিশ্চিত জীবন দেয়, শান্তি দেয় সমৃদ্ধি দেয়। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা পেয়েছে।
“এই নৌকায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীতে নৌকায় ভোট দেবেন, ১৯৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই আজকে নির্বাচন।”
ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা ভোট শুধু দেবেন না। আপনার ভোট আপনি রক্ষা করবেন। আর ওই অগ্নি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী, বিএনপি-জামায়াত, তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দেবেন।”
তরুণদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের তরুণরা, এই তারুণ্যই হচ্ছে আমাদের অগ্রদূত। কাজেই তাদেরকেও আমি আহ্বান করব, প্রথম যারা ভোটার তাদেরকে আহ্বান করব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরীর ১৫টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোটারদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরপর তাদেরকে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, “১৫টা রত্ন আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তারা আপনাদের সেবা করবেন, তাদেরকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।”
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।