‘বাসাইল দেখে’ সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন কাদের সিদ্দিকী

সিইসি বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন তার কর্তৃত্ব কাজে লাগাবে। তবে সেজন্য সব দলের সহযোগিতা ইসির দরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2023, 02:49 PM
Updated : 16 May 2023, 02:49 PM

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার ভোট সুষ্ঠু হলে তবেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে তার দল।

মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন তিনি।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল তাকে আশ্বস্ত করেছেন, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বোত প্রচেষ্টা চালাবে নির্বাচন কমিশন। 

তিনি বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন তার কর্তৃত্ব কাজে লাগাবে। তবে সেজন্য সব দলের সহযোগিতাও ইসির দরকার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২৫ মে, ১২ জুন ও ২১ জুন পাঁচ সিটির ভোট রয়েছে। এর মধ্যে ২১ জুন, টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা, বগুড়ার তালোড়া পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের গোলাপদী পৌরসভাতেও ভোট হবে।

বাসাইল ভোট নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি।

বর্তমান ইসিতে এ নিয়ে দু’বার এসেছেন জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “আগের বারের চেয়ে এবার অনেক ভালো লেগেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা পুরো নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে আমি আশ্বস্ত হয়েছি।

“তারা বলেছেন, তাদের সাধ্যমত সুষ্ঠু, নিরেপেক্ষে, উৎসবমুখ পরিবেশে বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন উপহার দেবেন। এ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর হলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।”

ইসির উন্নতি হয়েছে?

কাদের সিদ্দিকী বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন ‘প্রথম প্রথম অনেক এলোমেলো কথাবার্তা’ বললেও এখন শুধরে নিচ্ছে।

“এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, বেশ কিছুদিন যাবৎ তারা বুঝতে পেরেছেন নির্বাচন কমিশন কী, এবং তাদের অনেক এলোমেলো কথা অনেক দিন থেকেই কমে গেছে। এখন তো বলা যায় যে সে রকম কিছু নাই।”

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সেজন্যই ‘উৎসাহী’ হয়ে ইসিতে এসেছে জানিয়ে দলের সভাপতি বলেন, “আমাদের বাসাইল নির্বাচনে যদি দেখা যায় তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, কিছু ভুলত্রুটি তো থাকতেই পারে, ১০০টা ভুল হত আগে, যেখানে এখন যদি ৮০টাকে অতিক্রম করতে পারে, তাহলে বলব যে উন্নতি হয়েছে।”

কাদের সিদ্দিকী বলেন, “নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। কোন দল অংশগ্রহণ করল, কয়টি দল অংশগ্রহণ করল– তার চেয়ে কতজন ভোটার তাদের ইচ্ছামত ভোট দিতে পারল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাতে ইসি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই কথার মাধ্যমে ক্ষয়িষ্ণু নির্বাচনী পদ্ধতি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।”

‘ইসি নেতৃত্ব দেখাতে পারবে’

 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এক প্রশ্নের কবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার বলে কিছু থাকবে না। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন হলো সরকার, সরকার কিছু নয়।

“সরকার হল তখন আজ্ঞাবহ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা অতটা দেখা যায় না। আমরা প্রত্যাশা করব ধীরে ধীরে পূব দিক থেকে সূর্য উদীত হবে, পশ্চিমে অস্ত যাবার আগেই আমরা এই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারব।”

বর্তমান কমিশন আগামী নির্বাচনে তাদের ‘নেতৃত্ব দেখাতে পারবে’ বলেও আশা প্রকাশ করেন কাদের সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “অসম্ভব বলে কিছু নেই। নির্বাচন কমিশনেরও এগিয়ে আসতে হবে এবং মানুষকেও একটু এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে আগ্রহ সৃষ্টি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে।

“বিএনপি এখানে বড় কথা নয়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল, কোনোটাই বড় কথা নয়। যদি মানুষের মধ্যে নির্বাচনী মনোভাব সৃষ্টি করা যায়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দল বড় কথা নয়।”

সরকারকে নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের চেষ্টা করবো: সিইসি

পরে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কোনো দলের দিকে তাকানো ইসির দায়িত্ব নয়। নির্বাচনে ‘সরকারকে নিয়ন্ত্রণের জন্য’ যে আইন রয়েছে, তা কমিশন প্রয়োগ করবে।

“আপনারা (দল) নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর করে তুলুন। আমাদের যে দায়িত্ব থাকবে, আমাদের দায়িত্ব কোনো দলের দিকে তাকানো নয়, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন কিনা, সেই চেষ্টাটাই আমরা মূলত করব।”

নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচনকালীন যে রাজনৈতক সরকার এবং যে আমলাতান্ত্রিক সরকার থাকবে, আমলাতান্ত্রিক সরকার বলতে মিন করছি মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সরকার বলতে উপ-মন্ত্রী থেকে উপর পর্যন্ত, দুটো মিলেই কিন্তু পরিপূর্ণ সরকার।

“আমরা রাজনৈতিক সরকার ও আমলাতিন্ত্রক সরকারে উপর আমাদের যে নিয়ন্ত্রণ আইনে আমাদের ওপর প্রদত্ত হয়েছ, সেটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।”

কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠকে সহায়তা ও আশ্বাসের বিষয়টি তুলে ধরে সিইসি বলেন, “আমরা আশ্বাস দিয়েছি, আমাদের দায়িত্ব সাধ্য অনুযায়ী যতকুটু সম্ভব পালন করার চেষ্টা করব। আবার এটাও বলেছি, হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আয়োজনের একটা বড় দায়িত্ব আছে, একই সঙ্গে আপনারাও যারা দল আছেন, নেতৃবৃন্দ আছেন, কর্মীরা আছেন; তাদেরও দায়িত্ব আছে সার্বিকভাবে নির্বাচনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া।”

‘খুব প্রতিকূল’ পরিবেশ যদি বিরাজ করে, তাহলে ইসির জন্য দায়িত্ব পালন ‘অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে’ বলে মন্তব্য করেন সিইসি। 

কাদের সিদ্দিকীকে উদ্ধৃত করে সিইসি বলেন, “তিনি বলেছেন, যদি আসন্ন বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনটা সুষ্ঠু হয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমরা বারবার বলেছি যে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। উনি বলেছেন যে অংশগ্রহণমূলক যদি না হয়, উনাদের করার কিছু থাকবে না।”

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে সবার সহায়তা লাগবে। সরকারে সদিচ্ছাও ‘অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ’।

“দীর্ঘদিনের যে আমলাতান্ত্রিক সরকার, অর্থাৎ ডিসি, এসপি...। আমরা বারবার একটা অভিযোগ শুনেছি যে পুলিশের একটা ভূমিকা থাকে নেতিবাচক। এটা পুলিশের জন্য নয়, স্থানীয়ভাবেই হয়ত পুলিশকে পক্ষাশ্রিত করার চেষ্টা হয়ে থাকে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে।

“পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকে, শক্তি থাকে, ইউনিফরম থাকে, সেই দিকটাও আমরা দেখব। আমি পুলিশকে দোষারোপ করছি না। আমিই পুলিশের কাছে যাচ্ছি কনভিন্স করার জন্য, পুলিশ আমার কাছে আসছে- এই বিষয়টাই। কিন্তু সকলকে নিউট্রালাইজ করতে হবে আমাদের।”

এ পর্যন্ত প্রশাসন ও পুলিশের ‘ইতিবাচক সহায়তা’ পাওয়ার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “আমরা যে নির্বাচনগুলো করেছি, এতে মোটামুটি তুলনামূলকভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। আমি বলব না যে অ্যাবসলিউটলি হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিন্ত আমরা সরকার, পুলিশ এবং প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি।

“আমাদের এটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং, কখনো অসহযোগিতা পাইনি। আশা করি, জাতীয় নির্বাচনেও তারা এই ভূমিকার পালন করে যাবেন, যাতে জনগণের আস্থা, আপনাদের ওপর সম্মানবোধ, আপনাদের ওপর, আমাদের ওপর, সরকারের ওপরও প্রতিষ্ঠা পায়।”

আর যদি সরকারের সদিচ্ছা, সহযোগিতা না থাকে এবং তার অঙ্গগুলো, যেমন পুলিশ বা প্রশাসন যদি সহায়তা না করে, তাহলে ইসির সক্ষমতা ‘সীমিত হয়ে পড়বে’ বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল। 

Also Read: সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন: সিইসি

Also Read: ‘মেরুদণ্ড’ সোজাই থাকবে: সিইসি

তিনি বলেন, “বিশেষ করে পুলিশ, আর্মি, বিডিআর, ওরা যদি আমাদের নিরপক্ষেভাবে সহায়তা করে, অন্য কোনো পক্ষ থেকে যদি প্রভাবিত না হয়, তাহলে আমার শক্তিটা অনেক বেড়ে যাবে, সেখানে আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।”

এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ভোট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।