শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শিক্ষা গ্রহণ করলে সেটা চোরেও নিতে পারবেনা, ডাকাতেও নিতে পারবেনা। সেই শিক্ষাটা থাকলে পরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।”
Published : 10 Nov 2023, 12:16 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শৈশবের কথা মনে করে বলেছেন, বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। বরং মাসে দুইবার জেলগেটে দেখা হত বাবার সঙ্গে।
রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ছোটবেলায় তোমাদের অনেকেই এখন বাবা-মার হাত ধরে স্কুলে যাও। আমাদের কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি। আমাদের বাবার সঙ্গে দেখা হতো কারাগারে। জেলগেটে মাসে দুইবার দেখা করতে পারতাম।
“স্কুল থেকে জেলগেটে গিয়েছি, কলেজ থেকে গিয়েছি, ইউনিভার্সিটি থেকেও- এই ছিল আমাদের জীবন। কিন্তু আমাদের কোনো ক্ষোভ ছিল না। কারণ আমরা জানতাম, আমাদের বাবা সংগ্রাম করছেন দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।”
শুক্রবার সকাল ১০টায় একদল স্কুল পড়ুয়া শিশুকিশোর, তিন বাহিনীর প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে নতুন এই ম্যুরাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ম্যুরালটি ২০২১ ও ২০২২ সালে বিজয় দিবসের প্যারেডে প্রদর্শিত হওয়ার পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তাই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিজয় সরণি মোড়ের সড়ক দ্বীপে এটি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসেবে নির্বাচন করেন। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে ম্যুরালটি সেখানে স্থাপন করা হয়।
সকাল ১০টার কিছু সময় আগে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। এই সময় দর্শক সারিতে থাকা একদল শিশুকে ঢেকে মঞ্চের দুই পাশে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সবাই মিলে বেলুন উড়িয়ে করতালির মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় ম্যুরালটির।
‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধনের পর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৪৮ সালে আমাদের মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার যখন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তখন তিনি এর প্রতিবাদ করেন এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেখানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার সংগ্রাম শুরু হয়। সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি।”
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ গত ৫২ বছরে অনেকদূর এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজ থেকে ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ এখনকার বাংলাদেশের মত ছিলনা। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, চিকিৎসাহীনতা, গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষের ক্রন্দনে বাংলার আকাশ বাতাস ভারী ছিল। এই বাঙালি জাতিকে আর্থসামাজিক মুক্তি দেওয়ার জন্যই কিন্তু জাতির পিতার সংগ্রাম।
“তার স্বপ্ন ছিল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘর হবে, গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষের আশ্রয় হবে। সব মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, কাপড় পাবে, চিকিৎসা পাবে। কিন্তু তিনি সেই কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। আজকে অন্তত এইটুকু বলতে পারি, তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে প্রায় ১৫ বছর হয়ে এলো, এর মধ্যে একটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আমরা রূপন্তর করতে পেরেছি।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন আছে আমাদের। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষা দিচ্ছি। এভাবে দেশের মানুষকে একটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে পেরেছি।
“আজকের ছোট্ট শিশুরা হবে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক। সেজন্য তোমাদেরকে নিয়ে এলাম। স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকনোমি, স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলব।”
তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশ যতদূর এগিয়ে এসেছে এটা ধরে রেখেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের ছোট্ট শিশুরা আগামী দিনের সৈনিক, যারা স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।”
শিশুদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে, শিক্ষাই জীবনের সব থেকে বড় সম্পদ। টাকাপয়সা, ধনদৌলত সম্পদ নয়। সম্পদ হচ্ছে একমাত্র শিক্ষা। শিক্ষা গ্রহণ করলে সেটা চোরেও নিতে পারবেনা, ডাকাতেও নিতে পারবেনা। সেই শিক্ষাটা থাকলে পরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।”
ম্যুরালটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন আমি এটা প্রথমে দেখলাম, আমার ছোটবোন রেহানা তখন বলল- এটা খুব সুন্দর হয়েছে, এটা ভালো একটা জায়গায় স্থাপন করা যায় কিনা? তখন আমি সেনাপ্রধানকে বললাম এটাকে কোথায় সুন্দরভাবে স্থাপন করা যায়। আরও কয়েকটা জায়গার মধ্যে এই জায়গাটা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করলাম। এই জায়গা দিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক, জাতীয় পর্যায়ের অনেক ব্যক্তিরা যাতায়াত করে।
“শুধু তাই নয়, পাশাপাশি আরও অনেকগুলো স্থাপনা এখানে আছে, পাশেই আছে জাতীয় সংসদ। এটা আসলে আমাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সূতিকাগার। সেই কারণে এই জায়গাটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, তারপর ছয় দফা থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিস এখানে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সমন্বয়ে নির্মিত এই ভাস্কর্যটি সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে এবং নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতির সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবে।
জাতীয় পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের মতো সম্মানজনক কাজে অন্তর্ভুক্ত করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
উদ্বোধনের পর অতিথিদের নিয়ে প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় স্কুল শিক্ষার্থী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, তিন বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে ছবি তোলেন তিনি।