“দেশি ও বিদেশি ভাষাবিদদের যুক্ত করতে না পারলে কেবল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এটি কেবল নামেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থাকবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।”
Published : 21 Feb 2023, 12:35 AM
শুধুমাত্র বাংলা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মাতৃভাষা সংরক্ষণ, গবেষণা ও বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নিজেই চলছে ধুঁকে ধুঁকে। অন্য দেশের ভাষা তো দূরের কথা, বাংলাদেশেই বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার সংরক্ষণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
১৩ বছর হয়ে গেল, এখনও অনুমোদিত পদই পূরণ করতে পারেনি এ ইনস্টিটিউট। সেখানে কাজ করার কথা ৯৮ জনের। আছেন ৩৮ জন। কবে লোক নিয়োগ হবে? এ প্রশ্নে জবাব মিলল ‘প্রক্রিয়াধীন’।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতার বিষয়টিও উঠে আসছে কর্মীদের ভাষ্যে।
এই কর্মীদের বেশিরভাগই প্রশাসনিক, যারা এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে বদলি হন কদিন পরপর। ফলে আগের কর্মকর্তার কাজের ধারাবাহিকতা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে নতুন কর্মকর্তারা এসে আগের সিদ্ধান্ত জানা বোঝার আগেই আবার বদলির আদেশ পেয়ে যান।
আগের নেয়া একটি ‘বড় সিদ্ধান্ত’ ১০ বছর ধরে ঝুলে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে একজন পরিচালকের জবাব মিলেছে, তিনি নতুন এসেছেন, এসবের কিছু জানেন না।
‘মাতৃভাষা’ পত্রিকাসহ বেশ কিছু প্রকাশনা নিয়মিত প্রকাশের কথা থাকলেও সেগুলো নিয়মিত প্রকাশ হয় না। ভাষা নিয়ে নিয়মিত গবেষণাধর্মী লেখা না পাওয়ার জন্যই এমনটি হচ্ছে বলে কর্মীদের ভাষ্য।
২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন, সেমিনার, নিউজ লেটার ও স্মরণিকা প্রকাশ এবং পদক প্রবর্তন ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কার্যত উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ নেই।
জনবল সংকট, যারা আছেন তারাও ‘কার্যকর নন’
যখন কোনো একটি ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হয়, তখন সেটি বিপন্ন ভাষা বলে বিবেচিত হয় ভাষাবিদদের কাছে। এই বিপন্ন ভাষার সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য যে জনবল দরকার, তা নেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের।
ইনস্টিটিউটে ১৭টি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদসহ মোট ৯৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন মহাপরিচালক, দুইজন পরিচালক, চারজন উপপরিচালক, আটজন সহকারী পরিচালক ও একজন অনুবাদকের পদ রয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে কাজ করছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে কর্মকর্তার পদগুলো তুলনামূলক বেশি পূরণ হয়েছে। ১৭ জনের জায়গায় ১১টি পদই পূরণ হয়ে গেছে। কর্মচারীর ৮১টি পদের মধ্যে পূরণ হয়েছে কেবল ২৭টি।
ইনস্টিটিউটের একাধিক কর্মী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানান, এখানে যারা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগই মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হয়ে আসেন। আবার অল্প সময়েই তারা ফিরে যান। ফলে এখানে স্থায়ীভাবে পরিকল্পিত অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করার মত লোকবলও এখানে নেই।
এত কম কর্মী দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য পূরণ কঠিন বলে মনে করেন সাংস্কৃতিক সংগঠক রামেন্দু মজুমদার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজের যে ব্যাপ্তি, সে অনুযায়ী জনবল পর্যাপ্ত নয়। দেশি ও বিদেশি ভাষাবিদদের যুক্ত করতে না পারলে কেবল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এটি কেবল নামেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থাকবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।”
প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত এবং আরো দক্ষ লোকবল নিয়োগ করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির কর্মব্যপ্তি অনেক বড়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্বপ্ন এবং লক্ষ্য নিয়ে পুরো পৃথিবীর মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি করেছেন, সেখানে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান ভাষাবিদদের যুক্ত করা না গেলে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন হয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি তার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
“আমি মনে করি, এখানে দক্ষ লোকের সমন্বয়ে অনুবাদ অ্যাকাডেমি থাকা উচিত। সেখান থেকে বিভিন্ন ভাষার অনুবাদ নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ হবে। সেই সাথে মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য পৃথিবীর খ্যাতনামা ভাষাবিদদের এখানে যুক্ত করতে হবে।”
এক দশকেও প্রকাশ হল না ‘নৃ-ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’
ইনস্টিটিউটের একমাত্র বড় কাজ ‘নৃ-ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ ১০ বছরেও প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এই কাজটি মূলত বাংলাদেশে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা পরিস্থিতি ও ভাষিক সম্প্রদায়ের বাস্তব অবস্থা ও অবস্থান নির্দেশ করবে।
২০১৩ সালে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। তিন বছরের মধ্যে শেষ হয় মাঠপর্যায়ের কাজ। পরিকল্পনা ছিল, এ সমীক্ষার ১০ খণ্ড বাংলা এবং ১০ খণ্ড ইংরেজিতে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সাত বছরেও প্রকাশনার কাজটি শেষ করা যায়নি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটিমাত্র খণ্ড বাংলায় ছাপানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেটি বাজারে আসেনি।
‘নৃ-ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ কাজের গবেষণা সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কাজটির মূলত দুটি পর্ব ছিল, এর মধ্যে একটি ছিল ভাষা, অন্যটি নৃ গোষ্ঠী। আমি যুক্ত ছিলাম ভাষা পর্বের অংশে। আমাদের তিনটি খণ্ড করার কথা। আমরা তিনটি খণ্ডই সম্পন্ন করে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাছে জমা দিয়েছি। তারা প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেছে।
“আমি ছিলাম গবেষণা সম্পাদক, কামাল চৌধুরী ছিলেন প্রধান সম্পাদক। গবেষণা সম্পাদক হিসেবে তারা আমাকে একটি কপিও দিয়েছেন। সেটি আমার কাছে আছে। কিন্তু সেটি তারা জনসম্মুখে আনেনি। কেন আনেনি, সেটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বলতে পারবে।”
ইনস্টিটিউটের ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মো. আলমগীরের কাছে কাজটির বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো এখানে নতুন আসছি। ‘নৃ ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র বিষয়টা আমার সামনে এখনও আসে নাই। আমি মূলত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। সেখান থেকে এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি এক মাস হল।”
গত মার্চে মহাপরিচালকের দায়িত্বে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ। এর আগে মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেন তালুকদার।
‘নৃ ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র প্রথম খণ্ড কেন প্রকাশ করা হয়নি- জানতে চাইলে হাকিম আরিফ বলেন, “আমরা চেয়েছি ১০ খণ্ড একত্রে প্রকাশ করতে, যার জন্য দেরি হচ্ছে। কাজটি চলমান রয়েছে। আমরা শিগগিরই কাজটি সম্পন্ন করে প্রকাশ করব।”
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং বলেন, “নৃ ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার কাজটি এক ধরণের আশার সঞ্চার করেছে। আশা করি এই কাজটির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষার মানুষের মান্তৃভাষা সুরক্ষিত থাকার পথ বের হবে।”
হারিয়ে যাচ্ছে লিপি
কড়া জনগোষ্ঠীর ভাষার নাম ‘কড়া’। তবে তারা যেহেতু সার্বক্ষণিকভাবে বাংলা ভাষার সংস্পর্শে থাকে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়, তাই তাদের ভাষায় বাংলা ভাষার অনেক শব্দের ব্যবহার বাড়ছে। তাদের নিজস্ব কোনো লিপি না থাকায় অন্য অনেক নৃগোষ্ঠীর মত তারাও তাদের ভাষা সংরক্ষণের জন্য বাংলা লিপি ব্যবহার করে।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠী তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করলেও তারা বাংলায় শিক্ষা গ্রহণ করে এবং লেখার ক্ষেত্রে তারা বাংলা লিপি ব্যবহার করে। তবে মণিপুরিদের মধ্যে মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজন এখনও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের লিপি ব্যবহার করেন এবং বাংলাও ব্যবহার করেন।
মণিপুরি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা কবি, নাট্যকার ও সংগঠক শুভাশিস সিনহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষ্ণুপ্রিয়াদের নিজস্ব লিপি ছিল, সেটি নানা কারণে হারিয়ে গেছে। এখন নতুন করে নিজস্ব লিপি উদ্ধারের গবেষণা চলছে। তবে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এখনও বাংলার ব্যবহারই হচ্ছে।”
২০১৯ সালে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ এর গেজেটে সরকার ৫০টি নৃ-গোষ্ঠীকে তালিকাভুক্ত করে। তাদের মধ্যে ৪১টি ভাষার ব্যবহার রয়েছে এবং ১৪টি ভাষাকে বিপন্ন বলেও চিহ্নিত করে ইনস্টিটিউট।
প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালে শেষ হওয়া এক ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিপন্ন ঘোষিত ভাষার মধ্যে আছে— কন্দ, খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মুণ্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিত্চা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও লালেং (পাত্র)।
এই ভাষাগুলোর কোনো লিখিত রূপ বা বর্ণমালা না থাকায় এগুলো সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে এই ভাষাভাষী লোকের সংখ্যাও কমেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের পরবর্তী প্রজন্ম এ ভাষা আর শিখছে না, বা ব্যবহার করছে না।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “মুক্তিযদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম, তার পেছনে তো বড় ভূমিকা রেখেছে ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়ে যে দেশের জন্ম, সেই দেশেই যদি বিভিন্ন নৃ গোষ্ঠীর মাতৃভাষা হারিয়ে যায়- সেটা হবে দুঃখজনক। বিপন্ন ভাষার সংরক্ষণে যদি এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না যায়, তবে আরও অনেক ভাষা হারিয়ে যাবে।
“পৃথিবীর সব ভাষা সংরক্ষণে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ এমন ভাবনা থেকেই তো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বড় পরিসরে না নিতে পারলে, নামেই থেকে যাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। কাজের কাজ কিছুই হবে না।”
ইতোমধ্যে দেশে অন্তত ১৪টি ভাষা সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তি হয়ে গেছে বলে জানান আদিবাসী ফোরামের এই নেতা। তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিকাংশ নৃভাষার কোনো লিখিত রূপ নেই এবং কোনো নৃভাষারই কোনো ধরনের অভিধান কোষ নেই। ফলে সংরক্ষণের অভাবে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।”
যেভাবে গড়ে ওঠে ইনস্টিটিউট
‘পৃথিবীর সব মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে’ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এই অনন্য স্বীকৃতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন।
২০০১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের উপস্থিতিতে ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১০ সালের ২১ এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ওই বছরের ১২ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন ২০১০’ পাস হয় এবং আইনটি বাংলাদেশ গেজেট (অতিরিক্ত সংখ্যা)-এ ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকাশ হয়।
আইন অনুযায়ী, এ ইনস্টিটিউটের ২৩টি দায়িত্ব পালন করার কথা।
ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণসহ প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা আন্দোলনের তথ্যসংগ্রহ ও গবেষণা এবং ইউনেস্কোর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত তথ্যাবলি পৌঁছে দেওয়া।”
ইনস্টিটিউটে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থাকলেও সে বিষয়ে তেমন প্রচার নেই। ভবনের পঞ্চম তলায় গ্রন্থাগারটি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভাষা গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা ভবনটিতে ১২ হাজার ৮৬৬টি পাঠসামগ্রী রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক বইপত্র ছাড়াও অভিধান, বিশ্বকোষ, বাংলা সাহিত্য, নৃবিজ্ঞানসহ নানা রকম বই রয়েছে। এতে রয়েছে ভাষা জাদুঘর, বিশ্বের লিখন-বিধি আর্কাইভ, ভাষা-ল্যাব।
ইনস্টিটিউটের প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণিকা, ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ত্রৈমাসিক বার্তা ‘আইএমএলআই নিউজলেটার’, মাতৃভাষা-বার্তা (ত্রৈমাসিক), মাতৃভাষা পত্রিকা (শাণ্মাসিক গবেষণা পত্রিকা), মাদার ল্যাংগুয়েজ (ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ষাণ্মাসিক পত্রিকা) এবং ভাষা বিষয়ক অন্যান্য প্রকাশনা।
নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ইনস্টিটিউট থেকে ‘মাতৃভাষা পিডিয়া’ রচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি রচিত হলে নৃভাষার শব্দকোষ বা অভিধান নির্মাণের কাজও এগিয়ে যাবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ইনস্টিটিউট থেকে মাঠ পর্যায়ের নৃভাষা তথ্য সংগ্রহের কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রবর্তন করেছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’। দুই বছর পর পর জাতীয় ক্ষেত্রে দুটি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি করে মোট চারটি পদক দেওয়া হয়। পদকের মূল্যমান জাতীয় ক্ষেত্রে চার লাখ টাকা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার ডলার।
২০২১ সালে প্রথমবার এই পদক অর্জন করেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং বলিভিয়ার অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ ‘অ্যাকটিভিজমো লেংকুয়াস’ এই পদক অর্জন করেন।
এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই পদক দেওয়া হবে। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।