চলে গেলেন শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া এ লেখক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এক বছর ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 12:53 PM
Updated : 21 Nov 2022, 12:53 PM

শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম আর নেই।

সোমবার সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

বর্ষীয়ান এ সাহিত্যিকের ছেলে ডা. অন্তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার বাবা স্ট্রোকসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ‍ভুগছিলেন। ১০ দিন আগে তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

ধানমণ্ডি ৭ নম্বর সড়কের বায়তুল আমান মসজিদে মঙ্গলবার ফজর নামাজের পর আলী ইমামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় মরদেহ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে বাদ জোহর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হবে দ্বিতীয় জানাজা। এরপর বাদ আছর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে। 

বেশ কিছু দিন ধরে আলী ইমাম অসুস্থ ছিলেন। ২০২১ সালের মে মাসে মৃদু স্ট্রোকসহ শরীরের নানা জটিলতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, নেওয়া হয়েছিল আইসিইউতে।

শিশু সাহিত্যিক আমিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় এক বছর ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন আলী ইমাম। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য চর্চার একটি গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।”

ছয় শতাধিক বইয়ের লেখক শিশু সাহিত্যিক, শিশু সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আলী ইমাম ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের আগে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন (২০০৪-২০০৬) ও অধুনালুপ্ত চ্যানেল ওয়ান (২০০৭-২০০৮) এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন।

১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ বছর তিনি ইউনিসেফের ‘মা ও শিশুর উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্প’ পরিচালক ছিলেন। ওই দায়িত্ব পালনকালে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘প্রি জুঁনেসি চিলড্রেনস টিভি প্রোডাকশন প্রতিযোগিতা’র (২০০০) জুরির দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া তিনি ছিলেন ‘সার্ক অডিও ভিজুয়াল বিনিময় অনুষ্ঠানে’র প্রধান সমন্বয়কারী (২০০০-২০০১)। টেলিভিশন ও বেতারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের নির্মাতা ও উপস্থাপক হিসেবে তার বিশিষ্টতা বিশেষ প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘হ্যালো, আপনাকে বলছি’ (১৯৯৯-২০০৪) নামে তার উপস্থাপিত সরাসরি অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়েছিল।

এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওই সময়ের আলোচিত প্রামাণ্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’ (১৯৮০-১৯৮৭) এর আলোচিত প্রযোজক ছিলেন আলী ইমাম।

বাংলাদেশের শিশু সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য আলী ইমাম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০১) এবং শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১২) ছাড়াও অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন।

শিশুসাহিত্যিক হিসেবে জাপান ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ২০০৪ সালে তিনি সমগ্র জাপান পরিভ্রমণ করেন ।

কিশোর বয়স থেকেই তার শিশুসাহিত্য চর্চার শুরু। ১৯৬৮ সালেই তিনি পূর্ব-পাকিস্তান শিক্ষা সপ্তাহে বিতর্ক এবং উপস্থিত বক্তৃতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো আয়োজিত শিশুসাহিত্য বিষয়ক প্রকাশনা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রকাশনা বিভাগের ন্যাশনাল কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন।