প্রাথমিকের বই ছাপবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা, বলেন সচিব।
Published : 21 Mar 2024, 07:07 PM
চলতি বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করবে সরকার।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে প্রাথমিকে ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছর নিয়োগ দেওয়া হবে ১৩ হাজার ৭৮১ জন।
সংবাদ সম্মেলনে সচিব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বই ছাপানো, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অনিয়ম ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে নকল ঠেকাতে বুয়েটের তৈরি ‘সুরক্ষা’ নামে একটি যন্ত্র ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন।
তিনি রাজধানী ঢাকায় নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ এবং বিদ্যমান সব স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন।
স্বাধীনতার পর এক সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, নিয়োগের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩০ করতে এসডিজির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা নির্ধারিত সময়ের আগেই পূরণ করা সম্ভব হবে।
ঢাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর বিদ্যমান সকল ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো পরিবর্তন বা উন্নয়ন করে দৃষ্টিনন্দন করা হবে। এছাড়া উত্তরাতে তিনটি ও পূর্বাচলে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন করা হবে। এগুলোর মধ্যে ১৫৬টি বিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করা হয়েছে, ৪৩টি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
বই ছাপাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বই ছাপালে বহু টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতি বছর প্রাথমিক স্তরে ১০ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়। সেসব বই এতদিন জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) করে আসছে। কিন্তু সেই বই ছাপানোর কাজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ছাপাতে চায় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতি মিলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
সচিব বলেন, “এনসিটিবির কাজ কারিকুলাম তৈরি, পর্যালোচনা করা। বই ছাপানোর কাজটি প্রশাসনিক। অন্যদিকে এনসিটিবির মাধ্যমে প্রাথমিকের বই ছাপাতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ, সময় ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। প্রাথমিকের বই ছাপানোর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তদরের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সেই অর্থে এসসিটিবি বই ছাপায়।
“প্রাথমিক প্রতিটি বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবিকে ২ টাকা ৬০ পয়সা করে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। সে হিসেবে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ কোটি সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বই ছাপালে এই টাকাটা সরকারের সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বইয়ের মান খারাপ হলে কখনও প্রাথমিক অধিদপ্তর, এনসিটিবি একে অন্যকে দোষারোপ করে। যেহেতু এনসিটিবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। তাই গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কোনো তদারকি ও খবরদারি করতে পারে না। প্রাথমিক অধিদপ্তর বই ছাপার কাজটি করলে তদারকি ও মান রক্ষা করতে সহজ হবে।”
দেশে প্রাথমিক স্তরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী আছে। তাদের জন্য প্রতিবছর ১০ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়ে থাকে। ১৩ বছর ধরে ৯৮ লটে ৩০-৩২টি কোম্পানির মাধ্যমে এসব বই ছাপানো হচ্ছে।
সচিব বলেন, ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে বই ছাপানোর দায়িত্ব বদলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী কিছু সংশোধনী পাঠান। সেগুলোর সংশোধন করে ফের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় দফার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সায় মিলেছে।
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় ২০২৫ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) পাঠ্যবই মুদ্রণের দায়িত্ব নিতে চায়। কিন্তু এটি করতে হলে এনসিটিবির আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। তার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”
নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের জালিয়াতি ঠেকাবে ‘সুরক্ষা’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের জালিয়াতির পরিমাণ বাড়ায় এবার তা ঠেকাতে অভিনব এক যন্ত্র বানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সুরক্ষা নামে যন্ত্রটি পরীক্ষায় জালিয়াতির ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করবে। পরীক্ষার হলে কোনো পরীক্ষার্থীর কানে বা অন্য কোন অঙ্গে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ঢুকানো থাকলে এ যন্ত্র সংকেত দেবে। যন্ত্রের একটি লাইট জ্বলে উঠবে এবং শব্দ সংকেত বেজে উঠবে।
আগামী ২০ মার্চ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এ ডিভাইস প্রতিরোধ যন্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে জানান সচিব।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিনিকেশন টেকনোলজি (আইআইটি) এ যন্ত্র তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, এ যন্ত্রে ৫০ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে। সেজন্য আগামী ২৯ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু হবে। খুব শিগগির এর শতভাগ ব্যবহার শুরু হবে। সফল হলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর ডিজিটাল জালিয়াতির রোধে এ যন্ত্র ব্যবহার করবে।
তিনি জানান, এ যন্ত্র তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। পরে বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা হলে দাম পড়বে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ৬ হাজার ২০১টি পদের বিপরীতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন। মৌখিক পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ৫ থেকে ২০ মে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্যান্য বিভাগের চেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় সাময়িকের মতো পরীক্ষা নয়: সচিব